এই নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে বেশ কিছু আলোচনা হয়েছে। মোটামুটি সংক্ষিপ্তসার হলো এই:
- এমবিবিএস-এ ঢোকার আগের প্রেম সাধারণতঃ ডাক্তারি পড়ার চাপে টেকেনা (ব্যতিক্রম আছে আমার ২-৩জন বন্ধু যারা স্কুলের প্রেমিক/প্রেমিকাকেই বিয়ে করেছে-তবে সেক্ষেত্রে তারা বাড়ির কাছে থাকে তাই নিয়মিত দেখা হওয়ার সুযোগ বেশি)।
- এমবিবিএস-এ ঢোকার পর বাইরের লোকজনের সাথে মেলামেশার সময় কমে যায়, পড়ার আর কাজের চাপ থাকে, আর হাসপাতাল একটি নিজস্ব স্বয়ংসম্পূর্ণ ইকোসিস্টেমের মতো-ঢুকে গেলে চট করে বেরোনো যায়না।
- ডাক্তারি পড়লে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। যে সময় অন্য বন্ধুরা সিনেমা, খেলাধুলা, বিনোদন নিয়ে মাথা ঘামায়, ওই সময় আমরা রোগ, সামাজিকতা, আর্থিক অবস্থা নিয়ে অনেক বেশি ভাবি। অনেকসময় বাইরের আড্ডায় নিজেকে “আউট অফ প্লেস” মনে হয়।
- ৫.৫ বছরের দীর্ঘ কোর্সে অনেকটা সময় একসাথে কাটানোর সুবাদে, নিজেদের সুখ দুঃখ ভাগ করে নিয়ে, একই থালা থেকে রাত ২টোর সময়ে বিরিয়ানি খেয়ে-অনেকের মধ্যেই প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। সবসময় সব সম্পর্ক পরিণতি পায়না, কিন্তু পার্টনারের থেকে এক্সপেক্টেশন যেগুলো তৈরি হয়, সেগুলো পরবর্তীকালে অন্য প্রফেশনের কেউ অনেকসময় মেটাতে পারেনা।
- মেয়েদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে এই ব্যাপারটি বেশি দেখা যায়। নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমাদের কাজ আমাদের কাছে কতটা জরুরী এটা বাইরের অনেকেই ভালো বুঝতে পারেনা। তার জন্য যদি সকালে রান্না না করতে পারি, কিটি পার্টিতে না যেতে পারি, তাহলে অনেকেই মুখ ভার করেন। যে মহিলা ডাক্তাররা সার্জিক্যাল লাইনে আছেন, সার্জারি, গাইনি-তাঁদের সব সময়ই অসময়ে দরকার হতে পারে-অনেককেই দেখেছি সন্তান ফেলে রোগীর জন্য ছুটে আসতে, পেরেন্ট টিচার মিটিং মিস করে ওটি করতে-পার্টনার আরেকজন ডাক্তার না হলে কিছুতেই এ ব্যাপারে আন্ডারস্ট্যান্ডিং হতে পারেনা।
- ডাক্তারি শুধু একটি পেশা নয়, এটি একটি লাইফস্টাইল/জীবনশৈলী। তাই পার্টনারও সেটি ফলো করলে দাম্পত্য সফল হয়। ডাক্তার দম্পতিদের মধ্যে হীনমন্যতা কম আসে, পেশাগত ডিপ্রেশন (যেটা কম বেশি সবার মধ্যেই আসে) কম আসে, তুচ্ছাতিতুচ্ছ ব্যাপারে বিরক্তি হলে পার্টনারকে সমব্যথী পাওয়া যায়, বোঝাতে সুবিধা হয়।
- পেশাগত দিক দিয়ে দুজনে ডাক্তার হলে একে অপরের প্রফেশনাল বৃদ্ধিতে সাহায্য হয়। আমার চেনা এক স্যার, উনি পেশেন্ট দেখেন এবং ওনার স্ত্রী ফার্মাকোলজিতে আছেন-নতুন ওষুধ ডেভেলপমেন্টে অংশগ্রহণ করেন। দুজনে খুব ভালো ভালো রিসার্চ করেন।
এসব বলছি বলে ভাববেন না, ডাক্তাররা নিজের পেশার বাইরে বিয়ে করেন না। আমার বাবা ডাক্তার ছিলেন, আমার মা নন-উনি শিক্ষিকা। তবুও আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে সফল দাম্পত্য আমার মা-বাবার। তবে ডাক্তার দম্পতিদের এডজাস্ট করার সুবিধা বেশি, এটুকুই মোদ্দা কথা।