শুরু হতে যাচ্ছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ২০২২। এসময় ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিরা তাদের সঠিক তথ্য দিয়ে খুব সহজে নতুন ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে পারবেন। অফিসিয়ালী নতুন ভোটার নিবন্ধন করার থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় খুব সহজে নতুন ভোটার হওয়া যায়। কারণ এ সময় নতুন ভোটার হতে খুব বেশি কাগজপত্রের দরকার হয় না। সামান্য কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়েই নতুন ভোটার হওয়া যায়। তাই যারা এখনো ভোটার হননি তারা ভোটার তালিকা হালনাগাদ ২০২২ এ নতুন ভোটার হয়ে যাবেন।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ 2022 এর কার্যক্রম কবে থেকে শুরু হবে? নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ ২০২২ এ কারা কারা ভোটার হতে পারবে? ভোটার তথ্য হালনাগাদ ২০২২ এ ভোটার হতে কি কি কাগজপত্র লাগতে পারে? এ সকল প্রশ্ন সম্পর্কিত সঠিক তথ্য দেয়ার চেষ্টা করবো।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ ২০২২ এ কারা নতুন ভোটার হতে পারবে?
পূর্বের হালনাগাদে যাদের জন্ম তারিখ ০১/০১/২০০৪ সাল বা তার পূর্বে ছিলো তাদেরকে নতুন ভোটার করা হয়েছিলো। Voter Halnagad 2022 এ যাদের জন্ম তারিখ ০১/০১/২০০৭ সাল বা তার পূর্বে তারা সবাই নতুন ভোটার হতে পারবেন।
তবে যারা ১৮ বছরের কম বয়স্ক তাদের নাম ভোটার তালিকায় আসবে না। তাদেরকে শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে। পরবর্তীতে যখন তাদের বয়স ১৮ বছর হয়ে যাবে তখন আপনা-আপনিই ভোটার তালিকায় নাম চলে যাবে এবং নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে।
ইতোপূর্বে যারা একবার ভোটার হয়েছেন তারা দ্বিতীয়বার ভোটার হতে কখনোই যাবেন না। অনেকেরই ভোটার নিবন্ধন স্লিপ হারিয়ে গেলে তারা দ্বিতীয়বার ভোটার হয়ে থাকেন। কেউ কেউ তথ্য গোপন করে দ্বিতীয়বার ভোটায় হয়ে থাকেন। আপনারা এমন কাজ কখনোই করবে না। সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করবেন তারা আপনাকে সঠিক পরামর্শ দেবে। একাধিকবার ভোটার নিবন্ধনের ফলাফল খুব ভয়াবহ হতে পারে। একাধিকবার ভোটার হলে জেল-জরিমানা হতে পারে, তাছাড়া আপনি আপনার নাগরিকত্বও হারাতে পারেন।
কি কি কাগজপত্র লাগতে পারে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ২০২২ এ নতুন ভোটার হতে
ভোটার তালিকা হালনাগাদ ২০২২ এ নতুন ভোটার হতে হলে যে সকল কাগজপত্র লাগতে পারে সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:-
❖ অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ: নতুন ভোটার হতে হলে অবশ্যই ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন সনদ ভোটার নিবন্ধন ফরমের সাথে জমা দিতে হবে।
❖ সার্টিফিকেটের কপি: ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তির যদি সার্টিফিকেট থাকে যেমন- জেডিসি/জেএসসি/এসএসসি ইত্যাদি। তাহলে তার সার্টিফিকেটের কপি নিবন্ধন ফরমের সাথে জমা দিতে হবে।
❖ পিতা-মাতার এনআইডি কার্ডের কপি: নতুন ভোটার হতে হলে অবশ্যই আবেদনের সাথে পিতা ও মাতার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিতে হবে।
❖ নাগরিক সনদ: ভোটার নিবন্ধন ফরমের সাথে অবশ্যই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌর মেয়র কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিক সনদের কপি জমা দিতে পারেন।
❖ অঙ্গীকারনামা: নতুন ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারনামা প্রয়োজন হতে পারে। তাই অবশ্যই পূর্বে কখনো ভোটার হইনি মর্মে অঙ্গীকারনামা প্রস্তুত করে আবেদনের সাথে দিয়ে দিতে পারেন।
❖ স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কার্ডের কপি: নতুন ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি যদি বিবাহিত হয় তাহলে তাদের ক্ষেত্রে স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কার্ডের কপি আবেদনের সাথে জমা দেয়া লাগতে পারে।
উপরোক্ত কাগজপত্রগুলো হলে ভোটার তালিকা হালনাগাদে নতুন ভোটার হওয়া যেতে পারে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে প্রদত্ত পরামর্শ অনুযায়ী কাগজপত্র জমা দিতে পারেন।
ভোটার হালনাগাদ কবে হবে ২০২২?
একটা ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ করতে কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়। ভোটার তালিকা হালনাগাদের প্রথম ধাপ হচ্ছে বাড়ী বাড়ী গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা। তারপর নতুন ভোটারদের ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তারপর নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ ২০২২ এর সকল ভোটারের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। ভোটার তথ্য হালনাগাদ ২০২২ এর খসড়া তালিকায় যদি কারো তথ্য ভুল থাকে তাহলে তা সম্পূর্ণ ফ্রিতে সংশোধনের কাজ করা হয় এবং সর্বশেষ চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়।
নতুন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ শুরু (নতুন ভোটার হালনাগাদ কবে হবে ২০২২):-
আগামী ২০ মে ২০২২ ইং তারিখ থেকে সারা দেশে তথ্যসংগ্রহকারীগণ বাড়ী বাড়ী গিয়ে নতুন ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করে ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ পূরণ করবেন। নতুন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলবে পরবর্তী তিন সপ্তাহ ধরে। তাই যারা নতুন ভোটার হবেন তারা তথ্যসংগ্রহকারীকে আপনার তথ্য প্রদান করে নতুন ভোটার নিবন্ধনে অংশগ্রহন করতে পারবেন।
সতর্কতা:– তথ্যসংগ্রহকারী যখন আপনার তথ্য নিয়ে ভোটার নিবন্ধন ফরম ২ পূরণ করবেন তখন আপনি নিজ দায়িত্বে ফরমটি পড়ে দেখবেন। কোথায়ও কোন ভুল তথ্য লেখা হয়ে থাকলে তা সংশোধন করে নিতে হবে। তা না হলে ভোটার তথ্য ভুল চলে আসবে এবং পরবর্তীতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
ভোটার তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তিদের নাম কর্তনের জন্য তথ্য সংগ্রহ:-
ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় যোগ্য ব্যক্তিদের নতুন ভোটার করার পাশাপাশি ভোটার তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তিদের নাম কর্তন করা হয়ে থাকে। তথ্যসংগ্রহকারীগণ বাড়ী বাড়ী গিয়ে নতুন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি মৃত ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করে কর্তন ফরম- ১২ পূরণ করে থাকেন।
এখানে লক্ষ্যণীয় যে, কর্তন ফরম-১২ পূরণ করার সময় ভূলবসত কর্তন যোগ্য ব্যক্তির ভোটার নম্বর/এনআইডি নম্বরের স্থানে তথ্য সরবরাহকারীর ভোটার নম্বর/এনআইডি নম্বর লেখা হয়ে যায়। ফলে যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন তার নাম কর্তন না হয়ে যিনি তথ্য সরবরাহ করেছেন তার নাম কর্তন হয়ে যায় এবং সেই সাথে তার এনআইডি কার্ড অকেজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণ ভোগান্তিতে পড়েন। কারণ ভুলবসত ভোটার তালিকা থেকে জীবিত ব্যক্তির নাম কর্তন হয়ে গেলে তা পুনরায় ঠিক করা অত্যন্ত ঝামেলার বিষয়।
সুতরাং, আপনার বাড়ীর কোন সদস্য যদি মৃত্যুবরণ করে থাকেন তাহলে তার তথ্য সরবরাহ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং নিজ দায়িত্বে পূরণকৃত কর্তন ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করা হয়েছে কি না তা যাচাই করে নিতে হবে।
নতুন ভোটারদের ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ শুরু:-
যারা নতুন ভোটার হওয়ার যোগ্য এবং ভোটার নিবন্ধন ফরম ২ পূরণ করবেন তাদের ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হবে ১০ জুন ২০২২ ইং তারিখ থেকে এবং ছবি তোলার কাজ চলামান থাকবে ২০ নভেম্বর ২০২২ ইং তারিখ পর্যন্ত।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে ছবি তোলার কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয় এবং পূর্ণাঙ্গ সিডিউল তৈরী করা হয়। উক্ত সিডিউল অনুযায়ী প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করাসহ বিভিন্নভাবে প্রচার প্রচারণা করা হয়।
খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ:-
নতুন ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের ছবি ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের পর ডাটাগুলো প্রুফ করার পর তা মেইন সার্ভারে আপলোড করা হয় এবং খসড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে প্রেরণ করা হয়।
নতুন ভোটার তালিকা ২০২২ এর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে ০২ জানুয়ারী ২০২৩ ইং তারিখে। যারা নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ ২০২২ এ নতুন ভোটার হবেন তারা প্রত্যেকে অবশ্যই খসড়া ভোটার তালিকা চেক করে আসবেন। যদি আপনাদের ভোটার তথ্যে কোন ভুল থাকে তাহলে সম্পূর্ণ ফ্রিতে এবং ভোগান্তি ছাড়া সেগুলো সংশোধন করিয়ে নিতে পারবেন।
ভোটার তথ্যে ভুল থাকলে দাবি, আপত্তি ও সংশোধনের জন্য আবেদনের শেষ তারিখ:-
আপনার ভোটার তথ্যে যদি ভুল থাকে তাহলে সেগুলো সংশোধনের জন্য আবেদনের শেষ তারিখ ১৭ জানুয়ারী ২০২৩। অবশ্যই উক্ত তারিখের পূর্বে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করবেন।
এ সময় রিভাইজিং অথোরিটির কার্যক্রম চলমান থাকে। রিভাইজিং অথোরিটির মাধ্যমে ভোটার তথ্যের ভুল বিনা ফি তে সংশোধন করাতে পারবেন। তাছাড়া হালনাগাদের সময় ভোটার হতে না পারলে এ সময় বাদ পড়া ভোটারদের নতুন করে ভোটার করে নেয়া হয়।
চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ:-
রিভাইজিং অথোরিটির কার্যক্রম শেষে চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। ০২ মার্চ ২০২৩ ইং তারিখে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ২০২২ এ হওয়া নতুন ভোটারদের চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এই ছিলো ভোটার তালিকা হালনাগাদ ২০২২ এ নতুন ভোটার হওয়া সংক্রান্ত তথ্যাদি। আশা করি আপনারা উল্লেখিত তথ্য থেকে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। ভোটার হালনাগাদ ২০২২ এ নতুন ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টস করবেন। আমি আপনাদের প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই দিতে চেষ্টা করবো। লেখাটি যদি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ…!