মেঘনার দূর্গম চরের ফসল লুটে নিচ্ছে দস্যুরা
মোঃ কামাল উদ্দিন লক্ষ্মীপুর ঃ
লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় মেঘনার দুর্গম চর মেঘা ও চর কানিবগায় নিজেদের ফসল তুলতে পারছেন না চাষিরা। তাদের ফসল তুলতে বাধা দিয়ে চাঁদা দাবি করছেন ভোলার একদল সন্ত্রাসী। চাঁদা না দিলে চাষিদের হত্যার ভয় ও মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে ফসল লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। জেলার কিছু প্রভাবশালীর সহযোগিতায় পার্শ্ববর্তী জেলা ভোলার শতাধিক সন্ত্রাসী এই দুটি চরে অবস্থান করে চাষিদের ফসল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
কৃষকরা জানান, লক্ষ্মীপুরের চাষিরা প্রতিবারের মতো এবারও এই দুটি চরের কয়েক শ হেক্টর সরকারি খাস জমিতে সয়াবিন, ডাল, বাদামসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেছেন। কয়েক দিন থেকে ভোলার দস্যু সর্দার হালিম খাঁ, রাসেল খাঁ, মিন্টু খাঁর নেতৃত্বে শতাধিক সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চরে অবস্থান করছেন। তারা ফসল তুলতে চরে যাওয়া চাষিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করছেন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে চাষিদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে উৎপাদিত ফসল লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন। গত বছরও তারা একই কায়দায় হামলা, লুটের ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। এমনকি দুই চাষিকে হত্যাও করেছিলেন তারা।
কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ভোলার রাসেল খাঁ, হালিম খাঁ, মিন্টু খাঁসহ শতাধিক লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চরে অবস্থান করছেন। এতে আমরা চরে যেতে পারছি না। তারা আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এর আগেও বিভিন্ন সময় তারা আমাদের ওপর হামলা করেছেন। এতে দুজন নিহতসহ অসংখ্য চাষি আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় মামলা চলমান রয়েছে। এখনো তারা আমাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছেন।
ভুক্তভোগী সেরাজুল হক মাতাব্বর বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে তারা আমাদের চাষ করা ফসল উঠাতে দেয় না। ভোলার রাসেল খাঁ ও হালিম খাঁর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা চার-পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। না দিলে চাষিদের সব ফসল লুট করে নিয়ে যায়। লক্ষ্মীপুরের চরবংশীর রশিদ মোল্লা, শাহজালাল, রাহুল, করাতির হাটের কামরুল সরকারসহ কয়েকজন ভোলার সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মদদে ভোলার সন্ত্রাসীরা আমাদের সব ফসল লুট করে আসছেন। বাধা দিলে মারধর ও কুপিয়ে আহত করেন। তাদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। সর্বশেষ গত তিন দিন আগেও ফসল তুলতে গিয়ে গুলির মুখে পড়েছি। তারা গুলি ও ধাওয়া করে আমাদের নদীতে ফেলে দিয়েছেন। আমরা এসব বিষয় পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি।’
অভিযুক্ত কামরুল সরকার তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’ তবে অভিযুক্ত অন্যদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সদর উপজেলার চর রমণীমোহন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ছৈয়াল বলেন, ‘২০২০ সালে চর মেঘায় সন্ত্রাসীরা রাকিব এবং শেখ ফরিদ নামের দুই কৃষককে হত্যা করেছিলেন। অনেকের হাত-পা কেটে দিয়েছেন। এখন সয়াবিন তোলার সময়। চাষিরা সয়াবিন তুলতে গেলে রাসেল খাঁ, হালিম খাঁ, মিন্টু খাঁর নেতৃত্বে ৭০ থেকে ৮০ জনের বাহিনী চাষিদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে তারা ফসল লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি প্রশাসনের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি, এ বিষয়ে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বর্তমানে কৃষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’
লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে একটা অভিযোগ এসেছে। শিগগিরই আমরা চরে একটা অভিযান চালাব। যারা অভিযুক্ত এবং এমন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোঃ কামাল উদ্দিন লক্ষ্মীপুর জেলা সংবাদাতা