চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের সাড়ে তিন বছর পর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দিলেও কমিশন না থাকায় এখনই গেজেটে প্রকাশ করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এক্ষেত্রে আদালতের বেঁধে দেওয়ার ১০ দিন সময় তো দূরের কথা অন্তত এক মাসের মধ্যেও গেজেট প্রকাশ নিয়ে রয়েছে আইনি জটিলতা।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাইব্যুনাল ইসি গঠন করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ইসি তো আর আপিল করতে পারেন না। এখন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য ৩০ দিন সময় রয়েছে। আপিলের সময় পর্যন্ত ইসি গেজেট প্রকাশ করতে পারেন না। কেননা, আপিলের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে বিবাদী পক্ষ বা সংক্ষুব্ধ কোনো পক্ষ যদি আপিল করে তাহলে আপিল নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। অন্যদিকে কোনো ভোটের গেজেট প্রকাশ করতে হলে ফুল কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। বিগত কমিশন পদত্যাগ করায় সে অনুমোদন নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই নতুন কমিশন নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত কেউ আপিল না করলেও গেজেট প্রকাশ করা যাবে না।
ইসির আইন শাখার যুগ্ম সচিব ফারুক আহমেদ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এখন তো কমিশন নেই। কাজেই এখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে পর্যালোচনা করে নিতে হবে। আবার কমিশন না থাকলেও যে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, তা নয়। আদালত যদি আমাদের কাছে মতামত চায়, সেক্ষেত্রে আমরা বলবো যে গেজেট প্রকাশ করতে হলে কমিশনের অনুমোদন লাগে। এছাড়া যেহেতু রায় হয়েছে আমরা মতামত না চাইলেও মতামত দিতে পারি। উপদেষ্টা পরিষদের কাছেও করণীয় জানতে চাইতে পারি।
তিনি বলেন, আদালতের আদেশ যতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য ততটুকু বাস্তবায়ন করব। যেটা বাস্তবায়নযোগ্য না সেটা বাস্তবায়ন হবে না। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের কাছে রায়ের কপি এলে আমরা দেখবো। এমন না যে আদালতের আদেশে, যেভাবে আদেশ দিয়েছে সম্ভব না হলে সেভাবেই করতে হবে বিষয়টি এমন না। কমিশন নেই। এখন কমিশনের অনুমোদন আগ পর্যন্ত হয়তো আমরা উপদেষ্টা পরিষদ পর্যন্ত যেতে পারি। আর তারা তো আইন পরিবর্তন করতে পারবে না। সংসদে যে পাস করা আইনে যে বিধান আছে, সেটা তারা পরিবর্তন করতে পারবে না। তবে যেহেতু স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার ভেঙে দিয়েছে এবং সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে, এতে মনে হচ্ছে বিষয়টি বেশি একটা কাজে আসবে না। কারণ কমিশন থাকা অবস্থায়ও যদি এই আদেশ হতো, তাহলে কি হতো, ওই বাতিলের খাতায় তো পড়ে যেতো। এখন ওই পরিষদগুলোই তো বাতিল। সরকারের আদেশে যেহেতু বাতিল হয়েছে এই বিষয়টা অনেকটা ইনফ্রাকচুয়াস (অকেজো)। বড় কথা হলো গেজেট করতে হলে কমিশন লাগে। এখন কমিশন নেই। কমিশনের অনুমোদনের পরিবর্তে বিকল্প কি আছে সেটা আমাদের পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।
উল্লেখ্য, চসিক নির্বাচনের ফলাফল বাতিল চেয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের দায়ের করা মামলায় তাকে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) মেয়র ঘোষণা করেন আদালত। একইসঙ্গে আগামী ১০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবকে গেজেট প্রকাশ করার জন্য নির্দেশ দেন। দুপুর ১২টায় নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল হিসেবে চট্টগ্রামের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমীনের আদালত এই রায় দেন।