শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন
মোঃ নাসির উদ্দিন, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মাঠ। হলুদের সমারোহে শীতকালীন শস্য সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে এসব জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌ-চাষি। ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে। এই অপরূপ দৃশ্যে মুগ্ধ স্থানীয় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রকৃতি প্রেমী মানুষ। এদিকে, মধু সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছেন মৌ-চাষিরা। সচেতনতা বৃদ্ধি, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং ঋণের সুবিধা দিলে আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে মধু সংগ্রহ ও উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব বলে মনে করেন এ পেশায় জড়িত সংশ্লিষ্টরা।
সাধারণত মধু সংগ্রহের জন্য স্টীল ও কাঠ বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বাক্স। যার ওপরের অংশটা মোড়ানো কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে। বাক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি আটটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো এক ধরনের সিট বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে। পরে বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। পাশাপাশি বাক্সগুলোর ভেতরে দেওয়া হয় রাণি মৌমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ মৌমাছি। রাণীর আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌ-মাছিরা। একটি রাণী মৌমাছির বিপরীতে প্রায় তিন হাজারের মতো পুরুষ মৌমাছি থাকে একেকটি বাক্সে।
মৌমাছিতে টুইটম্বর বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের লাগোয়া স্থানে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেওয়া হয়। এরপর সেই সব বাক্স থেকে সরিষা ক্ষেতের ফুলে ফুলে ভ-ভ-ভ-ভ শব্দ তুলে ঢু মারতে থাকে প্রশিক্ষিত মৌমাছিরা। এভাবে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে চলে আসে বাক্সে। মধু সংগ্রহের এমনি চিত্র দেখা গেছে, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের পাঁছতেরিল্যা গ্রামে। আলাপচারিতায় সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রতিনিধি’র কাছে তুলে ধরেন এসব তথ্য।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সম্ভগঞ্জ মৌচাষি হাফেজ আলমগীর হোসেন সকালের সময় কে বলেন, এ উপজেলার পাছতেরিল্যা গ্রামের বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতে ২’শ ৫০ টি বাক্স বসিয়েছেন। এসব বাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ২০০ কেজির মতো মধু পাওয়া যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পাছতেরিল্যা এলাকার চাষকৃত সরিষা ক্ষেতে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মধু সংগ্রহকারী। সরিষা ক্ষেত লাগায়া খালি জমিতে সারিসারি বাক্স বসানো হয়েছে। দলে দলে উড়ছে মৌমাছি। দল বেঁধে বা দলছুট হয়ে মৌমাছিগুলো সরিষা ক্ষেতে ভ-ভ-ভ-ভ শব্দে উড়ে বেড়াচ্ছে। ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে ফিরে যাচ্ছে সেই বাক্সে।
মৌচাষি জানান, সরিষা ফুলের মধু টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় ও বিভিন্ন এলাকার পাইকাররাও ক্রয় করেন। চাহিদা অনুযায়ী মধু বিক্রি করেন। চাহিদা বেশি হলে দাম কিছুটা বেশি পান। আবার তুলনামূলক চাহিদা কম হলে দামও কিছুটা কম পান। তবে প্রতি কেজি সরিষা ফুলের মধু পাইকারি ২৫০-৩০০ টাকা দরে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান মৌচাষি আলমগীর হোসেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এস. এম রাশেদুল হাসান জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। তিনি জানান, সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে মানে অত্যন্ত ভালো। সরিষা ফুলের মধুতে কোনো প্রকার ভেজাল থাকে না। একেবারে খাঁটি। আর এভাবে অনেকটা সহজ প্রক্রিয়ায় মধু আহরণের মাধ্যমে বাড়তি আয় করতে পারেন।
মোঃ নাসির উদ্দিন,
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: