কখনো কাউকে বই ধার দিয়েছেন? পোশাক? যা কিছু আপনার তা নিজের কাছে যেমন
যত্নে থাকে অন্যকেউ সেভাবে যত্ন করতে পারে না! হয়তো করেও না। স্বার্থ ফুরিয়ে
গেলে যাচ্ছেতাই আচরণ করে! আচ্ছা, যে মানুষ আপনার নিজের মানুষ, মনের মানুষ সে
মানুষকে যখন অন্যকেউ ভিন্নচোখে খাতির করে, যত্ন করতে আসে তখন সে স্বার্থ
ছাড়া আসে? এই-যে আপনার থেকে অবহেলা পেয়ে, আঘাত খেয়ে দূরে সরে যায়, ব্যথা
পায় তখন আপনার খারাপ লাগে না? যে তরী আপনার সে তরী অন্যঘাটে ভীড়লে,
অন্যযাত্রী পারাপার করলে-নিশ্চয়ই আপনার সংক্ষুব্ধ হওয়ার কথা!
রাগে-অভিমান মানুষকে দায়িত্ববোধ ভুলিয়ে দেয়। লোভ-ক্ষোভ তাকে বিপথে পরিচালিত
করে। কিন্তু যে যার পোশাক নয় সে সেটা পরিধান করতে পারে কিন্তু ময়লাযুক্ত হলে
আর পরিষ্কার করবে না বরং নতুনভাবে নতুন পোশাক খুঁজবে। কিন্তু যা নিজস্ব তা
ক্ষয়ে যাওয়া পর্যন্ত আপনার কাছে অনন্য মূল্য থাকবে। ক্ষয়ে গেলে, হারিয়ে গেলেও
আপনি দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন। দু'ফোঁটা চোখের জল দাবি করবে! মান-অভিমানের ভাষা
বুঝে, আবদার-অনুযোগের সামলে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে যারা আপনা মানুষদের সামলে নিতে
পারে তাদের বুক কখনো শূন্য হয় না।
আপনি যার সেখানে অপূর্ণতাতেও মানিয়ে নিলে, দুঃখের স্রোত সামলে নিলে সুখের দেখা
মিলবে। যারা বসন্তের কোকিল হয়ে আসে তাদের স্বভাব ক্ষণিকের হসন্তের মত!
স্বার্থে মিলে আবার পরার্থে উড়ে যায়! জীবনে প্রলোভন থাকবে, শূন্যতায় সংক্রমণ
করতে চাইবে, লোভের ছড়ি ঝুলবে-তবুও যাতে মূল ছাড়া না হন। যেনো পারিপার্শ্বিক
অসুস্থতা জাপটে ধরতে না পারে! বিশ্বাসের ঘরে ডাকাতি করলে পারস্পরিক সান্নিধ্য-
সম্পর্ক ক্ষত-বিক্ষত হবে। শরীরের ঘ্রাণের মূল্য আছে, গোপনীয়তার সৌন্দর্য আছে।
যারা জোয়ারে জোয়ারে আসে তারা ভাটায় থাকে না। কিন্তু যে আপন, যে ভালোবাসে
বিশ্বাস থেকে সে থেকে যায়। বিপদে সামলায়। সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করেই তবে সে
প্রতিশ্রুতি রাখে। বিশ্বাসঘাতকতা তার অভিধানে অনুপস্থিত।
ছেড়ে যাওয়া, বিচ্ছেদের চেয়ে সহজ কাজ একটাও নাই। কিন্তু এসবে কল্যাণ নাই বরং
গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। জেদ করে প্রতিশোধ নিলে তাতে ভুল হয়। ধৈর্য ধরলেই
কেবল সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়। কঠোতার চূড়া থেকে কোমলতার সমভূমিতে ধাবিত
করে। ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ আসে! কত ভুল নিঃশর্ত ক্ষমা হতে হতে তবেই
সম্পর্ক স্থির হয়। হুটহাট কাজ করলে, সিদ্ধান্ত নিলে সেখানে ক্ষতিপূরণ দিতে
হয়েছে বেশি। মন্দ কথা একবার বেড়িয়ে গেলে সেটা আর মুখের ভেতরে ফেরত আসে না।
কাজেই বলার আগে ভাবতে হবে। একটু-আধটু অনিচ্ছাতেও পাশাপাশি হাঁটতে হবে।
বোঝাপড়া জোড়ালে না হলে মানুষকে একা হতে হয়! বড্ড একা!
ভুল পথে পা বাড়ানোর আগে সঠিক পথের দোষগুলো নিয়ে আরেকবার বিবেচনা করতে
হবে। জীবনটা যতোখানি ভোগের তার অধিক ত্যাগের। সীমাবদ্ধতাতেও সুখী হওয়া যায়,
অপ্রাপ্তিতে মুখে হাসি ধরে রাখা যায় যদি ভেতরের সুবোধ ক্রিয়াশীল থাকে! যুগের
হুজুগে গা ভাসিয়ে দিলো সমাজের দুর্গন্ধের সাথে একাকার হতে হবে অথচ স্রষ্টা তো
সুগন্ধি দিয়েছিলেন! বিশ্বাস-ভরসা এবং আমানতের মাধ্যমে প্রত্যেকটি পদক্ষেপ
হিসেবের হোক! আত্ম-কৈফিয়ত একলা থাকার কালেই জাগে! তখন যাতে কথা ও কর্মের
জন্য, সুখ ও ভোগের জন্য,, সম্পদ ও লোভের জন্য লজ্জিত হতে না হয়! অবৈধ পথে,
অন্যায়ভাবে অর্জিত সুখ কখনোই মানসিক পরিতৃপ্তি দেয় না! নৈতিক পরাজয় বলে
একটা বিচার প্রকৃতি মাঝে সবসময় থাকে!
যা কিছু পাপ-অন্যায় তাকে আপনি সেভাবে মনে না করলেও সেটা পাপ-অন্যায়। আমার
চলায়, বলায় আচরণে যদি কারো অধিকার খর্বিত হয়, বিশ্বাস লঙ্ঘিত হয়, গোপনীয়তা
বর্জিত হয় তবে সেখান থেকে ফিরে থাকাকেই ন্যায় বলে। মানুষ বানর নয়! ইচ্ছা
করলেই সে যা ইচ্ছা করতে পারে না! বিবেকের তাড়না থাকতে হয়, বোধ-বিবেচনাকে
উপস্থিত রাখতে হয়। অসম্মান করা খুব সহজ কিন্তু কাউকে সম্মান করার শিক্ষা
ভেতরে থাকতে হয়। ঠকিয়ে জেতা যায় না! ভোগের জন্য উম্মাদ হলেও সবকিছুাকে ভোগ
করা যায় না। তবে চেষ্টা করলে মানুষ হওয়া যায়। মনের মানুষ, দশ ও দেশের মানুষ।
সর্বোপরি ভালো মানুষ।
রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com