রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: রংপুর অঞ্চলের কৃষক ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছে। দিন দিন ফল চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রংপুর অঞ্চলের মাটি ফুল চাষের জন্য উপযোগী ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বছর রংপুরে ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। চলতি বছরে বিশেষ দিবসগুলো কেন্দ্র জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছে। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নজীরেরহাট, কাউনিয়া,তারাগঞ্জ,মিঠাপুকুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় গোলাপ, জারবেরা, রজনীগন্ধা,মামফুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হয়েছে। রংপুর নগরীর বুড়িরহাট এলাকার আব্দুর রশিদ নামে এক ফুল চাষি বলেন, চাকুরি না পেয়ে অনেক কষ্টের পর নার্সারির প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে তার। ৪০ হাজার টাকার পুঁজি দিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে তিনি লাখপতি। বাহারি ফুলের চাষ বদলে দিয়েছে তার জীবন। বিদেশি ফুল লিলিয়াম চাষে রংপুরে প্রথম সফল হন আব্দুর রশিদ। চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৭০০ লিলিয়াম ফুল বিক্রয় করেছেন। তার ফুল বাগানে নানা জাতের প্রায় তিনশতাধিক ফুল রয়েছে। বাহারি গোলাপ, গ্লাডিওয়ালাস, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল চাষ করে সফল এ উদ্যোক্তা। মাসে আয় হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। নার্সারিতে শ্রমিক রয়েছে ৮ জন। আব্দুর রশিদের প্রতিবেশী চাচা বলেন, সবাইতো শুধু চাকরির পেছনে ছুটে, মোর ভাতিজা ওইলা আশা বাদ দিয়া ভাল কাম করছে ফুলের গাছ নাগেয়া। আইসি ফুল দেখতে ভাল নাগে, ঘ্রাণে চারোপাকে ভরা মেলা মানুষ আইসে। হামরা খুব খুশি ফুল দিয়া করি মিলে খাউক। নার্সারিতে শোভা পাচ্ছে বাহারি রংয়ের নজরকাড়া গোলাপ, সুগন্ধে চারিদিকে ছুটছে মৌমাছি। এছাড়াও শোভা পাচ্ছে নেদারল্যান্ডসের আকর্ষণীয় ফুল লিলিয়াম। গ্লাডিওলাস দেখেই মুগ্ধ হচ্ছেন যে কেউ। দূর থেকে শুভ্রতা ছড়াচ্ছে পামফুল ও জিপসি। এই ফুল বাজারজাত করতে পারলে অধিক লাভজনক। যার প্রতিটি স্টিক পাইকারি বিক্রয় হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা আর খুচরা বিক্রয় করা হয় দেড়শ-দুইশ টাকার বেশি। ৫শতক জমিতে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে লিলিয়াম চাষ করে তিন মাসে ৩ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব জানান আব্দুর রশিদ। উদ্যোক্তা আব্দুল রশিদ বলেন, লেখাপড়া শেষ করে চাকরির জন্য অনেক ঘুরেছি। পরে বাধ্য হয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু ফুল চাষ। বর্তমানে অনেক ভালো আছি। আমার এখানে ৮-১০ জন মানুষ কাজ করে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে হাজার হাজার চারা নিয়ে ফুল চাষের পরিকল্পনা রযেছে। তবে বর্তমানে অনুষ্ঠান কম থাকায় ফুলের চাহিদা কিছুটা কম। এই প্রথম রংপুরে আমার হাতে লিলিয়াম সফল। বিনামূল্যে চারা পেয়ে সফল ও বেশ লাভবান হয়েছি। গবেষকরা বলেন, রংপুর অঞ্চলেরমাটি ফুল চাষের জন্য উপযোগী। দুর্লভ লিলিয়াম হতে পারে ভাগ্যবদলের হাতছানি। লিলিয়াম চাষে উদ্বুদ্ধ করে ফুল চাষির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। রংপুর সদর,কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, তারাগঞ্জ,পীরগাছা,পীরগঞ্জ ও রংপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকার ফুল চাষিগণ বলেন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফুল বিক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার মতো ফুলের উৎপাদন হয়েছে চলতি বছর। গত বছর ফুলের উৎপাদন ভালো না হলেও দাম ভালো ছিল। চলতি বছরে ফুলের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক কম। নগরীর সাতমাথা এলাকার গোলাপ চাষি মন্টু মিয়া বলেন, দোআঁশ মাটিতে মেরেন্ডা জাতের গোলাপের চাষ করা হয়। উর্বর ও নিষ্কাশিত জমিতে গোলাপ চারা রোপণ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছর ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। রংপুরে গোলাপ গ্রাম খ্যাত নজীরেরহাট জনতা নার্সারির বাগানে প্রতিদিনই ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। মনোমুগ্ধকর পরিবেশে ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে প্রিয়জনদের হাতে তুলে দেন বাগানের তরতাজা গোলাপ। রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, জেলায় প্রায় ২৯৫ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২১০ হেক্টর জমিতে গোলাপ ফুল চাষ হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরের গোলাপের ফলন ভালো হয়েছে। তিন দিবস কেন্দ্র করে এ বছর গোলাপ চাষিদের লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।