রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১, ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন
তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
রাজশাহীর তানোরে ব্যানার-পোস্টার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে বগি (আক্যামা) নেতাদের তোষামোদির রাজনীতি শুরু হয়েছে বলে সাধারণের অভিমত। জানা গেছে, জাতীয় ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রয়াত এবং বর্তমান নেতানেত্রীর ছবি যুক্ত করে একশ্রেণীর নেতা আকর্ষণীয় পোস্টার-ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরা করছে। আর তা শোভা পাচ্ছে জনবহুল স্থানগুলোতে। নিজের বা সমর্থকদের টাকায় বানানো এসব পোস্টারে ছেয়ে গেছে তানোর পৌর সদর এমনকি প্রত্যন্ত পল্লী এলাকা। কেউ আবার প্রচার পেতে নিজেই অর্থ খরচ করে তার অনুগতদের দিয়ে পোস্টার-ব্যানার ফেস্টুন দিচ্ছেন বলেও প্রচার রয়েছে। রাজনৈতিক সচেতন মহল বিষয়টিকে মেধাহীন রাজনীতিতে নেতাদের তোষামোদি হিসেবে দেখছে। স্থানীয়রা জানান, এক একটি পোষ্টার, ফেস্টুন বা প্যানায় কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন নেতাকর্মীর ছবি দেয়া হয়েছে। ফলে বিষয়টি এমন কি ? উদ্দেশ্যে কে বা কারা কাকে ? শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষের কাছে তা বোঝা মুশকিল হয়ে পড়েছে। কেউ আবার স্কুলের গন্ডি পেরুতে পারেনি, ছিলেন নাপিত (নরসুন্দর) কিšত্ত স্যুট-কোর্ট-টাই পরে সুরভী জর্দ্দার পান চিবানো ছবি দিয়ে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গীর প্যানা টাঙ্গিয়েছে যেন তিনি বিশাল কোনো ভাইটাল নেতা। ( তবে কারো পেশাকে ছোট করে দেখা হচ্ছে না এটা ক্ষমা সৃন্দর দৃষ্টিতে নিবেন ) আরে ভাই আর বলবেন না, বগি নেতাদের তৈরী প্যানায় (স্থানীয় ভাষায় দলের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকলেও নেতা পরিচয় দেয়) ভইরা গেছেগা পুরা এলাকা। পুরো এলাকা জুড়ে বগি নেতাদের তৈরী খালি প্যানা আর প্যানা। যে চা ব্যাছে সেও নেতা আবার যে ভ্যান চালাই সেও নেতা এমনকি নরসুন্দর সেও নেতা। তাহলে বুলেন আমাদের মতন গাজী আর কাজীর কামডা কি ? থাকে, এমন আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বললেন বাধাইড় এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব আব্দুল জব্বার। বগি নেতা ও প্যানা বলতে কি বোঝালেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এইড্যা বুঝলেন না ভাই ?, এরা কোন কারন ছাড়াই ব্যানার-পোস্টার ও ফেস্টুন বানিয়ে নিজেদের নেতা বলে জাহির করে। আর প্যানা দিয়ে এসব ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন তৈরী করা হয় অপরের টাকায়। আব্দুল জব্বারের মতো অনেকেই বগি নেতাদের তৈরী প্যানা (ডিজিটাল ব্যানার) নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এসব প্যানা বা রঙ-বেরঙের পোস্টার যে কত বিচিত্র হতে পারে দেশের মানুষ বাপের জন্মেও তা কল্পনা করেনি। ভাষায় রুচির পরিচয় নেই লেশমাত্র বরং দাস সূলভ মনোবৃত্তির প্রকাশ প্যানা পোস্টারে। আতœপ্রচার ও আতœপ্রশংসার লজ্জা-শরমের বালাই নেই। বিশ-ত্রিশ বছর আগেও মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পোস্টার পড়ত, এখন ওদিকে তাকিয়েও দেখে না। দেখলেও ঘৃণাভরে তাকায় অন্তরে খিস্তি করে। সে যাই হোক পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে কাগজের ওজন যদি আরেকটু বেশি হতো তাহলে দেয়ালগুলো ভেঙ্গে পড়তো পোস্টারের ভারে। গাছ-পালা বিদ্যুতের খুঁটি বিলবোর্ড প্রভৃতি টাঙ্গানোর জন্য যথেস্ট নয়। তার বাইরে প্রয়োজন রয়েছে বাঁশের খুঁটির। এতো বেশি বাঁশের খুঁটি ব্যবহার হচ্ছে যে এক সময় মৃত দেহের কবর দেয়ার মতো বাঁশও আমদানি করতে হতে পারে পেঁয়াজের মতো অভিমত অভিঙ্গ মহলের।
তানোর পৌর এলাকার দিনমজুর আলামিন আলী বলেন, রাজনীতি-টাজনীতি বুঝিনা। ভোট যখন হয় তখন ভোট দিই। কিšত্ত এসব বগি নেতাদের জ্বালায় শান্তি নাই। যেদিক দিয়া য্যাবেন, সেদিক দিয়্যাই এসব বগি নেতাদের তৈরী প্যানা আর প্যানা। প্যানার ঠ্যালাই কিছুই চোখে পড়ে না। তানোর পৌর এলাকার বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন বলেন, রাজনীতি দিন দিন প্যানা নির্ভর হয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষ ভোট দিয়েছে। কিšত্ত এখন অনেক লিডার জনগণকে বাদ দিয়ে ওইসব বগি নেতাকর্মীদের নিয়া লাফালাফি করছে। তানোর পৌর সদরের এক স্কুল শিক্ষক বলেন, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া, সজিব ওয়াজেদ জয় ও তারেক জিয়ার ছবি ব্যবহার করে বগি নেতাদের যেসব প্যানা তৈরী হচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে নুন্যতম নিয়ম-নীতি থাকা প্রয়োজন ছিল। অধিকাংশক্ষেত্রে চোলাইমদ-চুয়ানীখোর, চোরাকারবারী-কালোবাজারী, থানার দালাল-দাদন ব্যবসায়ী, সুদখোর ও অপরাধীরাও পিছিয়ে নেই এরা যদি এসব নেতা-নেত্রীর ছবি প্যানার মাধ্যমে ব্যবহার করে, তাহলে তাদের মূল্যবোধটা থাকে কোথায়। তানোর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড সাবেক কাউন্সিলর রাশেল সরকার উত্তম বলেন, ওয়ার্ড কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ের কোনো ভাইটাল নেতা পোস্টার বা প্যানা-ট্যানা করতে পারে। কিšত্ত এসব কি যে যেমন পারছে, দেদারসে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্যানা তৈরী করছে কোনো নিয়ম-কানুনের বালাই নাই। তিনি বলেন, তানোরের সর্বত্রই রাস্তার দুই ধারে ও জনবুহুল স্থানে গাছের ডাল ও স্থাপনায় একশ্র্রেণীর বগি নেতার তৈরী শুধু প্যানা আর প্যানা। #
তানোর প্রতিনিধি