লক্ষ্মীপুর বিজয়ের আনন্দে, বেদনার স্পর্শ “শহীদ আবুসাঈদ”

লক্ষ্মীপুর বিজয়ের আনন্দে, বেদনার স্পর্শ “শহীদ আবুসাঈদ”

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার তোফায়েল আহমেদ,

সীমান্তে এবং অভ্যান্তরে মুক্তিবাহিনী ও যৌথ বাহিনীর ক্রমাগত আক্রমণ প্রতি আক্রমণ অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানীরা অভ্যন্তর ত্যাগ করে সীমান্তে জড়ো হয়। এমনি অবস্থায় লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জ সড়কে কাপিলাতলী ও কাজীর দিঘির পাড় রাজাকার ক্যাম্পের শত্রুরা আত্মসমর্পণ করে। রায়পুর ছেড়ে শত্রুরা লক্ষিপুর ফরিদগঞ্জ পলায়ন করে। রায়পুর নির্বিঘ্নে শত্রুমুক্ত হয়। “রায়পুর লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জ এর জংশনে অবস্থিত দালালবাজার শত্রুর ঘাটি দ্বিমুখী আক্রমণে রাজাকাররা আত্মসমর্পণের সম্মত হয়।। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যোগাযোগ নিবিচনা থাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাই। স্কুলের দল থেকে এক পক্ষ থেকে গোলাগোলি অব্যাহত রাখলে বেশকিছু শত্রু সৈন্য নিহত হয়। এমতাবস্থায় শত্রুরা পাল্টা আক্রমণ করলে দালালবাজার গার্ড স্কুলে ররাজাকারদের দিকে অগ্রসর মানবীর দুঃসাহসী যোদ্ধা মনসুর আহমেদ নিহত হয়। “বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মুনসুরকে নিয়ে দালালবাজার মুক্ত হয়। ডিসেম্বরের ২ তারিখ থেকে লক্ষ্মীপুর বাগবাড়িতে অবস্থিত শত্রুর ঘাটি আক্রমণ শুরু করি। আমি এবং রায়পুরের এজাজ পূর্ব দিক থেকে সারাদিন সারারাত্র এবং ডিসেম্বরের ৪ তারিখ সারাদিন যুদ্ধ গোলাগোলি চালাতে থাকি। এমনি অবস্থায় চতুর্দিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমণে শত্রুর মনোবল ভেঙ্গে যায় এবং সরবরাহ ব্যবস্থাও বিচিন্ন করা হয়। এমনি অবস্থায় ডিসেম্বরের ৪ তারিখ পড়ন্তবিকেলে গোধূলি বেলায় রাজাকাররা আত্মসমর্পণে সম্মত হয় এবং তৎকালীন সার্কেল অফিসারের অফিসের মাঠে রাজাকাররা অস্ত্র সমর্পণ করে। দৌড়ে হাফাতে হাফাতে আনন্দ উল্লাসে আত্মসমর্পণে উপস্থিত হই। দীর্ঘ নয় মাসের বলিষ্ঠ ও সুদৃঢ় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাময়িক অভিজ্ঞ দক্ষ সৈনিকদের নেতৃত্বে লক্ষ্মীপুর মুক্ত ও বিজয়ীহই। বন্দি দশা থেকে লক্ষ্মীপুরের মানুষ। মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের আলো বাতাসে ঝাপিয়ে পড়ল। বিজয়ীদের হাজার বন্ধু আর রাজাকারদের অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। লক্ষ্মীপুর শত্রুমুক্ত আনন্দের গোলাগোলিতে লক্ষ্মীপুর প্রকম্পিত হচ্ছিল। এমনি অবস্থায় মুক্ত লক্ষ্মীপুরে মুক্তিযোদ্ধারা অসংগঠিত হয়ে বাগবাড়ি থানায় এবং দালালবাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের মাটি স্থাপনকরাহয়। বিজয় উজ্জিবিত মুক্তিবাহিনী আনন্দেও ছিলাম। এই বড় বিজয় অংহকারী অথবা বিনয়ী করে। কিন্তু আমরা কোনটাই ছিলাম না ।কিন্তু আনুষ্ঠানিক বিজয়ের পরেও ৫রা ডিসেম্বর সন্ধ্যা বীর মুক্তিযোদ্ধা হামদে রাব্বি নান্নুর নেতৃত্বে চন্দ্রগঞ্জ দত্তপাড়ার দিক থেকে গোলাগুলির ব্রাশফায়ারের আওয়াজ শুনতে পাই। শত্রুর অগ্রগামী বার্তা পেয়ে আমাদেরকে সতর্ক করতে অনর্গল ব্রশফায়ার করে। এমনি অবস্থায় চিন্তিত হয়ে লক্ষ্মীপুর খানায় অবস্থিত সেনাবাহিনীর কমান্ডারদেরকে নিকট গোলাগুলির বিষয়টি আলোচনা করি। বাগবাড়িতে আবুসাইদ তালে বালি সিরাজ উল্ল্যা মনাবাক শাল, খায়ের, শফিক, দেলোয়ার, এমদাদ এদেরকে নিয়ে নিরাপত্তা দায়িত্ব ও ভারে ছিলাম। মনোবল সাহস সঞ্চয় করে অবস্থান ত্যাগ না করে বাগবাড়িতে অবস্থান গ্রহণ করি এবং মাদাম ব্রিজের নিকট এমদাদ এবং দেলোয়ার কে নিয়োজিত করি। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাত প্রায় ১১ টার দিকে বিনা মেঘেব জ্রপাতের মত চন্দ্রগঞ্জ থেকে গভীর রাতে এক দল পাকিস্তানী সৈন্য রাজাকার কমান্ডার মাওলানা আবদুল হইর নেতৃত্বে বাগবাড়ি আমাদের ক্যাম্পের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে। আমরা ও কিছুক্ষণ আক্রমণের উত্তর ও প্রতিহত করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু শত্রুরভারী অস্ত্রশস্ত্র ও সংখ্যাধিক্য থাকায় বেশ কিছুক্ষণ গোলাগোলির পর আমাদের অবস্থান প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। কিন্তু এরই মধ্যেই আমাদের সহযোদ্ধা আবু সাঈদ শহিদ হন এবং তালেবআলীর পা ক্ষত বিখত হয়। এইরূপ সময়ে আনুষ্ঠানিক বিজয়ের পরও শত্রুর আক্রমণের স্বীকার হই। এরূপ অতর্কিত আক্রমণে আমরা বিশৃঙ্খল হয়ে সহযোদ্ধাদের লাশক্ষত বিক্ষত বন্ধুর দেহ ফেলে রেখে পিছু হটতে হয়েছে। বাগবাড়ি শত্রুর দখলকরে নেয়। ধন্য সেইমা যে এমন একটি ছেলে পেটে ধারণ করেছিল যে নিজের জীবন দিয়েছে জাতির জন্য। ঐ দিনের সাথী হিসাবে তালেব, খসরু, সফিক, মরাবাকশার, খায়ের, এমদাদ বেচে আছি অলৌকিক রহস্য জনক ভাবে।

দীর্ঘদিন হাইড আউটে অভয়াশ্রমের মধ্যে লুকিয়ে ছিলাম রনাঙ্গনের গোপন আস্তানা থেকে সূর্যের আলো দেখলাম। মুক্ত বাতাসে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠার সময়, আপনজন থেকে বিচ্ছিন্নতা গুছিয়ে ছিলাম। নিজেরা দীর্ঘ সময় সুশৃঙ্খল থেকে লক্ষীপুর মুক্ত করেছিলাম অসংগঠিত ছিলাম। দীর্ঘ নয় মাস খাঁচায় বন্দী থাকা মুক্ত লক্ষ্মীপুর বাসী যখন আনন্দ উল্লাসে ভাসছে দীর্ঘ ৯ মাস পরে যখন প্রসন্নতায় মন ভরে উঠল স্ফুর্তিতে উত্তেজনা, আনন্দ উৎসব করবত খন মনেব্যথা, কষ্ট, যন্ত্রণা, দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে রইলাম। উৎসা হেভাটাপড়ল। লক্ষ্মীপুরের মাটি শহিদের রক্তে লালহল। শহিদদের স্বজনদের আহাজারিতে লক্ষ্মীপুরের বাতাস ভারী করল। মৃত্যু মানুষকে অমরত্ব দেয় যাজীবনের শেষ পরিণতি।জাতির জন্য মৃত্যু গৌরবের অহংকারের। ওই সময়ের খোকা বোকা ছিলনা। এই খ্যাতিমান মৃত্যু বরণ লাভ অনুপ্রেরণা মূলক অমরকীর্তি। এইরূপ অবস্থায় যুদ্ধে মৃত্যুর থেকে বেঁচে থাকা অবিশাস্য চমকপ্রদ ও সৌভাগ্যের বিষয়। যাহারা জাতির অধিকার, স্বাধীনতা ও মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহন করে, মৃত্যু বরণকরে তাহারা শহীদের মর্যাদা লাভ জাতির জন্য “উদাহরণ” এবং বেচে থাকলে বিশেষ রাষ্ট্রীয় মর্যাদার ব্যাক্তিত্ব।

শত্রুরা বুঝতে পেরেছিল পরদিন সকাল থেকে মুক্তিবাহিনী সংগঠিত হয়ে তাদের জীবন রক্ষাও হবেনা পালিয়ে যেতে পারবে না। লক্ষ্মীপুর বাজারে কিছু হত্যা ও লুন্ঠন করে রাতের অন্ধকারে জন্তুরমত লেজ গুটিয়ে লক্ষ্মিপুর ত্যাগকরে।আমরা লক্ষ্মীপুর অভি মুখের ওয়ানা হয়ে লক্ষ্মীপুরে অবস্থান গ্রহণ করি এবং স্মৃতি স্মরণ করে যে ডিসেম্বরের ৪ তারিখ থেকে লক্ষ্মীপুর চিরমুক্ত ও স্বাধীন। পাকবাহিনী অতর্তিকত চোরা গুপ্তা আক্রমনে আমরা কোনঠাসা বিড়ালের মত আচড়কামড় দেয়া ছাড়া কিছু ইকরতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ভীতু ইদুরের মতলু কিয়েছিলাম। ঐদিন বীরত্বের কিছু করতেনা। পারলেও পূর্ব সাবধানতা আমাদের ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ কম ছিল। যুদ্ধে অনেক পরাজয় বরণ করতে হয়।

Exit mobile version