সুদসহ ঋণের ৫১ কোটি টাকা ব্র্যাক ব্যাংককে পরিশোধ সাপেক্ষে কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ফেরত পাবেন নিলামে বিক্রি হওয়া ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি।
আপিল বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী, ছয় মাসের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে। ছয় মাসে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারলে ওই সম্পত্তি নিলামে ক্রয়কারী ব্যবসায়ী আবদুর রশিদকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরও ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে ব্যবসায়ী শফিকুলকে। আর পরিশোধ করতে না পারলে নিলাম কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে শফিকুলের পক্ষে হাইকোর্টে করা রিট এবং সেই রিটে উদ্ভূত আদালত অবমাননার মামলা খারিজ হয়ে যাবে।
এই ছয় মাস হাইকোর্টের করা রিট ও আদালত অবমাননার অভিযোগের কার্যকারিতা স্থগিত থাকবে। ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার দিনে মামলাটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসবে। ওই দিন ফের শুনানি হবে। হাইকোর্টের আদেশ ও আদালত অবমাননার অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী আবদুর রশিদের করা লিভ টু আপিলের শুনানি করে আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে ব্যবসায়ী আবদুর রশিদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন নুরুল আমিন এবং ব্যবসায়ী শফিকুলের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। পরে ব্যারিস্টার রাগীব রউফ সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবসায়ী শফিকুলের কাছে ব্র্যাক ব্যাংকের মোট পাওনা ৫১ কোটি টাকা। তিনি এরই মধ্যে সাড়ে চার কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি টাকা ছয় মাসে পরিশোধ করতে হবে। তাহলে তিনি ১২৩ কোটি টাকা মূল্যের মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিল ও ভিআইপি ফ্লাওয়ার মিল ফেরত পাবেন। আর এই টাকা ব্যাংককে পরিশোধ করতে পারলে সম্পত্তিগুলো নিলামে ক্রয়কারী ব্যবসায়ী আবদুর রশিদকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এই ছয় মাস হাইকোর্টের আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত থাকবে। তবে পরিশোধ করতে না পারলে ব্যবসায়ী শফিকুল নিলাম ঠেকাতে যে রিট করেছেন এবং রিটের পরিপ্রেক্ষিতে যে আদালত অবমাননার মামলা করেছেন, সেগুলো খারিজ হয়ে যাবে।
জানা যায়, ব্যবসায়ী শফিকুলের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২ আগস্ট ওই ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিল ও ভিআইপি ফ্লাওয়ার মিলের নিলাম কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। একই সঙ্গে এক মাসের মধ্যে ২০ কোটি টাকা ব্র্যাক ব্যাংককে পরিশোধ করতে বলা হয়। এ ছাড়া এক বছরের মধ্যে আরও ছয় কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলা হয় ঋণগ্রহীতা শফিকুল ইসলামকে।
কিন্তু আদালতের এ আদেশ লঙ্ঘন করে ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করা হয় কুষ্টিয়ার বিশিষ্ট চাল ব্যবসায়ী আবদুর রশিদের মালিকানাধীন রশিদ এন্টারপ্রাইজের কাছে। এরপর গত বছরের ৫ আগস্ট ভোরে পুলিশের সহযোগিতায় ওই সম্পত্তি দখলে নেয়। এ ঘটনায় নিলামের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন ব্যবসায়ী শফিকুল। আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১১ আগস্ট নিলাম কার্যক্রমের ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকার পরও ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি ১৫ কোটি টাকায় নিলামে বিক্রি করায় ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসাইন, কুষ্টিয়ার ডিসি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, এসপি মো. খায়রুল আলম, সদর থানার ওসি মো. সাব্বিরুল আলম ও নিলামে সম্পত্তি নেওয়া ব্যবসায়ী আবদুর রশিদকে তলব করেন হাইকোর্ট। ২১ আগস্ট তাদের হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। পরে হাইকোর্টের এসব আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ। যে আবেদনের ওপর আজ শুনানি হয়।
জানা যায়, কুষ্টিয়ার আইলচারায় অবস্থিত মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স অ্যান্ড ভিআইপি রাইস মিল ব্র্যাক ব্যাংক পোড়াদহ শাখার কাছে ঋণ চাইলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জমির ভ্যালুয়েশন করে ৯২ কোটি টাকা। ব্র্যাক ব্যাংক পোড়াদহ শাখা সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ওই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ৪২ কোটি টাকা ঋণ দেয়। এরপর ওই ব্যবসায়ী ৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। এখনো ব্যাংকটির পাওনা রয়েছে ৫১ কোটি টাকা। ভিআইপি রাইস মিল সময়মতো ঋণের কিস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে এমন অভিযোগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অতি গোপনে অখ্যাত একটি কাগজে নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয়। এরপর ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম নিলাম বিজ্ঞপ্তি স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন।