রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। সেই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে নিজেই রুগ্ন। গাইবান্ধার বাদিয়াখালি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি এখন শুধু নামেই একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র । এখানে নেই কোনো চিকিৎসক ও জনবল। গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ১০ শয্যার অভ্যন্তরীণ সেবা। বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগী আসলেও পর্যাপ্ত ঔষধ ও চিকিৎসক না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার মানুষ। খাতা কলমে দুজন চিকিৎসকসহ ১১ জনের পদ থাকলেও দু-জন আয়া ও একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা দিয়েই চলছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির কার্যক্রম। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয়রা। জানা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালিতে ১৯৬৬ সালে ৬৬ শতাশং জমির ওপর ১০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। তখন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে দু’জন চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে সরকারের নজর কমতে থাকলে ক্রমান্বয়ে সেখান থেকে রোগীরা চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। চিকিৎসকের অভাবে প্রায় এক যুগের বেশি সময় থেকে বন্ধ অভ্যন্তরীণ বিভাগ। এর ফলে রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে যায়। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির জরুরি চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল বাদিয়াখালিসহ সাঘাটা ও ফুলছড়ির কয়েকটি ইউনিয়নের হাজারো মানুষ চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু থাকলেও চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় সে কার্যক্রমটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে। খাতা কলমে দুজন চিকিৎসকসহ ১১ জনের পদ থাকলেও দু-জন আয়া ও একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা দিয়েই চলছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির কার্যক্রম। সেই দায়িত্বরত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাও রয়েছেন দুটি ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্বে। তিনি বাদিয়াখালি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে অফিস করেন সপ্তাহে দুইদিন। যে কারণে বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগী চিকিৎসা নেয়ার জন্য আসলেও তারা হতাশ হয়ে ফিরে যান। অন্যদিকে ব্যবহার না হওয়ায় বাদিয়াখালি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের বিশাল চত্ত্বরটি পরিণত হয়েছে গো-চারণ ভূমিতে। স্টাফ কোয়ার্টার, ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামো অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব পরিণত হয়েছে জুয়ারি ও মাদকসেবীদের আড্ডা খানায়। এলাকার কাজী আব্দুল খালেক নামে এক ব্যক্তি বলেন, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল ছিল। কিন্তু এখন কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। দ্রুত এটি সচল করে মানুষের দুর্ভোগ কমানো প্রয়োজন। মজিদ মিয়া নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, সরকারি সকল সুবিধা থাকলেও আশপাশের মা ও শিশুদের গাইবান্ধা জেলা শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। মাঝে মধ্যে রাস্তায় প্রসব করার ঘটনাসহ নানা সমস্যা হয়ে থাকে। বাদিয়াখালি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি চালু করা হলে এলাকার মানুষের সুবিধার পাশাপাশি জেলা মা ও শিশু কেন্দ্রে চাপ কমবে। গাইবান্ধা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) প্রসেনজিৎ প্রনয় জনসাধারণের অসুবিধার কথা স্বীকার করে বলেন, জনবল সংকটের কারণে বাদিয়াখালিসহ অন্যন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসক ও স্টাফ নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। বাদিয়াখালি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী চিকিৎসক না থাকলেও প্রতিদিন এখানে ১০০ থেকে ১৫০জন রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ঔষধ দিয়ে থাকেন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা।