লিয়াকত হোসাইন লায়ন।। ধর্মমন্ত্রী মোঃ ফরিদুল হক খান বলেছেন, সরকার ইউনানি-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ও শিক্ষাখাতকে নিয়ে সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই খাতে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে চূড়ান্ত হয়েছে ইউনানি-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষা আইনের খসড়া। এচিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অধীনে একটি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এই ল্যাবের মাধ্যমে চিরায়ত ওষুধের গুণগত মান বজায় রেখে ওষুধ প্রস্তুত করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বহির্বিশ্বে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
মন্ত্রী রবিবার(১১ফেব্রুয়ারী) ঢাকার বাংলামটরে রুপায়ন ট্রেড সেন্টারে হামদর্দ কনফারেন্স রুমে বিশ্ব ইউনানি দিবস উপলক্ষ্যে হামদর্দ ল্যাবরেটরীজ (ওয়াক্ফ) বাংলাদেশ এবং হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন- আমাদের দেশের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে চিরায়ত মেডিসিন। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় চিরায়ত মেডিসিনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৫ জুলাই এক গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বোর্ড অব ইউনানি অ্যান্ড আয়ুর্বেদিক সিস্টেম অব মেডিসিন স্থাপন করার জন্য ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করেন। তিনি আরো বলেন, এদেশে চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক রচিত হয় ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। সে বছর সর্বপ্রথম ৩৩ জন ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ও হোমিও চিকিৎসাকে জেলা সদর হাসপাতাল গুলোতে নিয়োগ দিয়ে এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়।
ধর্মমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সারাদেশে ২শত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৫৮টি জেলা হাসপাতাল ও ১২টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিরায়ত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ভেষজ ম্যানুয়াল, ফার্মাকোপিয়া এবং ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন তৈরি ও সরবরাহ করা হয়েছে।
চিরায়ত মেডিসিনে ভারতের সাফল্যের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, ব্যাপক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা, অত্যাধুনিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন শিল্প এবং বিপুল সংখ্যক লোক তাদের স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনে এটি ব্যবহারের কারণে ইউনানি মেডিসিন সিস্টেমে ভারত বিশ্বব্যাপী নেতৃত্বের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়া, WHO Global Medicine Centre এর সাথে যৌথভাবে গবেষণার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেটি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানান।
চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নে হামদর্দ বাংলাদেশের ভূমিকা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, সময়ের পরিক্রমায় হামদর্দ ইউনানি-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাখাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে; গড়ে তুলেছে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশে চিরায়ত চিকিৎসা ব্যবস্থায় হামদর্দের অবদান অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি হামদর্দের অব্যাহত অগযাত্রা কামনা করেন।
হামদর্দ ল্যাবরেটরীজ (ওয়াক্ফ) বাংলাদেশের চিফ মোতাওয়াল্লী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. হাকীম মোঃ ইউছুফ হারুন ভূইয়ার সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। মূল প্রবন্ধ হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনানি চেয়ার অধ্যাপক ডা. এম এ কাজমি উপস্থাপনায় অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় সংসদ সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান, ওয়াকফ প্রশাসক আবু সালেহ মোঃ মহিউদ্দিন খাঁ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী প্রমূখ বক্তব্য করেন।