শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১, ১১:১৯ পূর্বাহ্ন
মো:নজরুল ইসলাম,ঝালকাঠি প্রতিনিধি:: ঝালকাঠির বিষখালী ও নলছিটির সুগন্ধা নদীর দু’পাড়ে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের মহা উৎসব চলছে। দীর্ঘ ৮/১০ বছর ধরে একাধারে চক্রটি বালু উত্তোলন করে আসলেও প্রশাসন মাঝে মাঝে লোকদেখানো দু’একটি অভিযান চালালেও তা কোন কাজে আসেনি। প্রশাসন অভিযান চালালে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় চক্রটি বালু উত্তোলন শুরু করে দেয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১০/১২ টি বল গেট দিয়ে কালিজিরার সুগন্ধা নদীর গড়িপাশা ও রায়াপুরের দু’পাড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বালু ব্যবসায়ী একটি চক্র। চক্রটি প্রতিদিন গড়ে ১ লক্ষ ঘন ফুট বালু উত্তোলন করে। কোন ইজারা না নিয়ে চক্রটির বালু উত্তোলনে সরকার প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এতে মাসে সরকারের রাজস্ব হারানোর পরিমান দাড়ায় প্রায় ২ কোটি টাকা। আর বছরে ওই টাকার পরিমান দাড়ায় প্রায় ২০ কোটি টাকার মত। বছরের পর বছর অবৈধভাবে সরকার যেমন শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে অপরদিকে নদীর দু’পাড়ে ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এতে করে নদীর দু’পাড়ে মানুষের জন জীবন ক্রমেই হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে। চক্রটির হুমকি-ধামকিতে নদী পাড়ের মানুষেরা মুখ খুলতেও পারছেনা। এতে করে তাদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অপরদিকে ঝালকাঠির বিষখালী নদীতে দীর্ঘ একযুগ ধরে একাধারে চক্রটি বালু উত্তোলন করে আসছে। প্রতিদিন ১৫/২০ টি বল গেট দিয়ে দুই লক্ষ ঘন ফুট বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। পাশাপাশি হুমকির মুখে নদীভাঙ্গন এলকার মানুষ শত শত মানুষ। নদী গর্ভে বিলিন হচ্ছে ফসলি জমি।
এছাড়া বছরের পর বছর বালু উত্তোলনে ধীরে ধীরে হুমকি মুখে পড়ছে শহীদ আঃ রব সেরনিয়াবাত সেতু ও কালিজিরা ব্রীজ। সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারানো, নদী পাড়ের মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়া ও আঃ রব সেরনিয়াবাত সেতু এবং কালিজিরা ব্রীজ হুমকির মুখে এসব মিলিয়েও প্রশাসনের যেন কোন দায় নেই। কিছু দিন পর পর লোক দেখানো দু’একটি অভিযান চালিয়ে যেন প্রশাসন দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
তবে প্রশাসনে শক্ত ও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় চক্রটিকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থামানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী কেউ কেউ মনে করছেন প্রশাসনকে একপ্রকার ম্যানেজ প্রক্রিয়া করেই দিনের পর দিন বালু উত্তোলন করে আসছে চক্রটি। নয়তো প্রশাসনের অভিযানেই চক্রটির বালু উত্তোলন থেমে যেত। বালু উত্তোলনের বিষয়টির সংবাদ সংগ্রহে ওই এলাকায় সরেজমিনে গেলে চক্রটির পূর্বের দেয়া হুমকি-ধামকির ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে নারাজ।
এছাড়া আরো অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাসহ বেশ কিছু কথিত সাংবাদিকদেরও ম্যানেজ করে ফেলছে ওই চক্রটি। বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্থ নদী পাড়ের মানুষদের অভিযোগ তারা অভিযোগ জানালেও কোন প্রতিকার পাইনি। বরং ক্ষতিগ্রস্থ মানুষগুলো প্রভাবশালীদের চাপের মুখে রয়েছে। এছাড়া প্রায় সময় ওই বালু উত্তোলনকারীদের মাসোয়ারা নিয়ে এলাকায় সংঘাতের ঘটনাও ঘটে।
অপরদিকে ককেজন বালু ব্যবসায়ীর দাবী বালু উত্তোলনে ঝালকাঠী জেলা প্রশাসকেরর মৌখিক অনুমতি রয়েছে। অনুমতি নিয়েই আমরা বালু উত্তোলন করছি।
এদিকে নলছিটির ইউএনও রুúা সিকদারের সাক্ষরিত ১ মাস মেয়াদে সুগন্ধা নদীতে বালু উত্তোলনের একটি অনুমতিপত্র রয়েছে এ প্রতিবেদকের কাছে। অনুমতিপত্রে দেখা যায় ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়া থাকলেও এখন পর্যন্ত চলছে বালু উত্তোলন। তবে সরকারি রাস্তা মেরামতের কাজে বালু উত্তোলনের জন্য ওই অনুমতিপত্র দেখা হয়েছিল বলে জানায় একটি সূত্র।
এ সকল বিষয়ে ঝালকাঠীর জেলা প্রশাসক জোহর আলী বলেন, সুগন্ধা নদীতে বালু উত্তোলনে মৌখিক বা লিখিত অনুমতি দেয়া হয়নি। এটা হাস্যকর। সুগন্ধা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হবে।