আকাশে মেঘ দেখলেই কাঁদেন জাহানারা

ভোলা: ভোলা সদর  উপজেলার ২নং পুর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মেঘনার তীরে কালুপুর গ্রামে বসবাস করেন অসহায় মোতালেব ও জাহানারা দম্পতি।

আজ ভোলার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন দেখতেই কান্নায় জর্জরিত জাহানারা বেগম (৬৫)। কিভাবে আজ রাত কাটাবেন কাগজের তৈরি ঘরে। অর্থাভাবে এবছর চালার কাগজ পরিবর্তন করতে পারেন নি জাহানারা।

একেতো শীতকাল কাগজের ঘরে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে অনায়াসে। তারপরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন যদি বৃষ্টি হয় তাহলে অসুস্থ স্বামী মোতালেব কে নিয়ে থাকবেন কোথায় সেকারনেই কাঁদছে জাহানারা বেগম।

৬৫ বছর বয়সী জাহানারা বেগমদের নিজ ভিটে মাটি রাক্ষুসী মেঘনা গিলে খেয়েছে অনেক আগেই। তবে মেঘনার তীরে তীরে পরের জমিতে বাসা বেঁধেছিলেন অনেকবারই মোতালেব ও জাহানারা।

তবে পাতা আর কাগজের তৈরি করা ঘরেই মেঘনার ঝড়ঝাপটা, আর এই শীতের হিমেল হাওয়ায় কষ্টে  কেটেছে তাদের জীবন।

জাহানার স্বামীর ভিটেমাটিতে প্রায় দেড় যুগ আগের একটি একচালা ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও মেঘনার কড়াল থাবায় সারতে সারতে একসময় সেই ঘরটিও হয়ে যায় ঝির্নসির্ন। ঝির্নসির্ন ঘরের অবশিষ্ট অংশ এখন না থাকায় কাগজের ঘরে বসবাস তাদের।

জাহানারার ঘরের চালের কাগজ পঁচে  নষ্ট হয়ে গেছে, শীতের কুয়াশা অনায়াসেই ঢুকে পরতো তার কাগজের ঘরে। এই কাগজের ঘরটি ভালো করার সাধ্য নেই জাহানারার। সামান্য বৃষ্টি হলেই ভিজে যায় জাহানারা মোতালেবদের সামান্য  বিছানাপত্র, অনেক সময় বৃষ্টি সহ্য করতে না পেরে বিছানাপত্র নিয়ে আশ্রয় নেয় পাশের ঘরে।

তবে জাহানারাদের ঘরের দিকে তাকালে যেকারো মনে পড়বে ছোট বেলার সেই আসমানী কবিতার পঙতিগুলো।

আজও বাংলাদেশে আসমানীরা রয়েছে অভাবনীয় হলেও সত্যি। আসমানীদের ভেড়না পাতার ছাউনী থাকলেও জাহানারা মোতালেব দের নিশ্চয়ই প্লাস্টিক পাতার ছাউনী।

মানবেতর জীবনযাপনের চরম দরিদ্রতায় বেঁচে আছেন জাহানার বেগমের স্বামী মোতালেব। বৃ্দ্ধ মোতালেব(৮০) আজ ৮ বছর ধরে দুরারোগ্য প্যারালাইসড এ আক্রান্ত হয়েছে । আর এই আট বছর ধরেই কালুপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় কাগজের ঘরেই বসবাস করেন তারা।

অনেক কষ্টে এলাকার বিভিন্ন জন মানুষের কাছে সাহায্য সহযোগিতা নিয়েই খাবার আর মোতালেবের ওষুধ জোগান জাহানারা বেগম।

জাহানারা দম্পতির দুইটি মেয়ে  বিয়ে দিলেও ছোট মেয়ের স্বামী একটি সন্তান সহ ফেলে রাখেন গত ৯ মাস ধরে।  নিজেদের পেট চালাতে কষ্ট হলেও জাহানারা মোতালেব ফেলেদিতে পারেন মেয়ে কে । কাগজের তৈরি ঘরে এখন বাস করেন মোতালেব,জাহানারা ও এক নাতনীসহ তার স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে।

এদিকে জাহানারা  বয়স ও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে আগের মত অন্যের বাড়িতে যাওয়া আসা করতে পারে না। তাই এবছর কাগজ  লাগাতে পারে নাই মাথা গোঁজার একমাত্র ঘরটির।

জাহানারার কান্নায় ভেঙে পরা আকুতি সারা জীবন কষ্ট করেছি শেষ বয়সে না খেয়ে থাকলেও  একটু শান্তিতে ঘুমাতে চাই। স্বামী প্যারালাইজড হয়ে পঙ্গু হয়ে গেছে এই লোকটির জন্য হলেও একটি ঘর ভিক্ষা চান জাহানারা।

ভোলা সদর উপজেলায় সরকারের জমি আছে ঘর নাই আশ্রয়ন প্রকল্পের শত শত ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

জাহানারাদের জমিও নাই ঘরও নাই তাই বলে কি তাদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘর জুটতে পারেনা এমন প্রশ্নের উত্তর কোথায় খুঁজবে জাহানারা বেগমরা তাও জানা নাই।

জমি নাই ঘরও নাই এমন অসহায় জাহানারাদের ভাগ্যে জোটেনি একটি সরকারি ঘর। তাইতো একটি সরকারি ঘরের জন্য আকুতি জানিয়েছেন অসহায় বৃদ্ধ মোতালেব ও জাহানারা।

প্রতিবেশী রাজিয়া ও হারেছা  বেগম বলেন জাহানারা  বেগম খুবই কষ্ট করে দিন যাপন করেন। আগে বিভিন্ন কাজকর্ম করতেন এখন সেটাও পারেন না। কারন ঘরে তার বৃদ্ধ স্বামী  প্যারালাইজড রোগী তাকে দেখতে হয় খাওয়াতে হয় আবার তারও বয়স হয়েছে পেরে উঠছে না।

তাদের ঘরটা প্লাস্টিকের কাগজের হওয়ায় বৃষ্টির দিনে খুব কষ্ট হয় তাদের। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে থাকা সব দিকেই তাদের সমস্যা। বৃষ্টি হলে তখন আশেপাশের বাড়ি থেকে রান্নাবান্না করে নিয়ে যায় তাদের জন্য একটা ঘরে ব্যবস্থা করা হলে খুব ভালো হবে।

এলাকার অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,জাহানারারা  অত্যন্ত গরীব। যাদের জমি আছে ঘর নাই সরকার তাদেরকে ঘর দিচ্ছে। এদের  চাইতে অনেক সচ্ছল মানুষ সরকারি ঘর পেলেও জাহানারাদের ভাগ্যে জোটে নাই। একটি সরকারি ঘর পেলে আর কিছু না হোক দিন শেষে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে।

এ ব্যাপারে ২নং ইলিশা  ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটন  বলেন, যাদের জমি আছে ঘর নাই সরকার তাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। যাদের জমিও নাই ঘরও নাই সরকার তাদেরকে খাস জমিতে ঘর করে একদম দলিল করে দিচ্ছে। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর এরকম কোনো সুযোগ-সুবিধা আসে নাই।

তবে আমার ইউনিয়নে প্রকল্পের অনেক ঘর খালি পড়ে আছে, ঘর নিয়ে তারা ঘরে থাকেনা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহি অফিসার মহদয়কে জানানো হয়েছে। তিনি যাচাই করে চাইলে এসব ঘরে অসহায়দের তুলে দিতে পারেন।

তবে  জাহানারা বেগম কে ও তার স্বামী প্যারালাইজ সমস্যা ভুগছেন জানি, তারা  একেবারেই অসহায়  সুযোগ-সুবিধা আসলে তাদেরকে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

জাহানারা মোতালেব দের বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বজল চন্দ্র শীল সোনালী নিউজ কে  বলেন অসহায় পরিবারটি ঘরের জন্য আবেদন করলেই আমরা তাকে ঘরের ব্যাবসাথা করে দিবো।

Exit mobile version