স্টাফ রিপোর্টার :
জামালপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারির সকল কর্মযজ্ঞে দিশেহারা জেলা জামায়াত ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যেই এডভোকেট আব্দুল আওয়ালকে বহিষ্কার করে তৃণমূলের সংগঠকদের দায়িত্ব দিয়ে আগামীতে জামালপুর জেলা জামায়াতের সকল কর্মকাণ্ড বেগবান করবেন জানায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ বলে এমনটিই প্রত্যাশা করেন জেলা জামায়াত ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
খোজ নিয়ে জানা যায়, জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য হলো আল্লাহ প্রদত্ত এবং রাসুল (সা:) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা । আর এ লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে জামায়াত ইসলামী। কিন্তু জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল আওয়ালের কর্মকান্ডে দিন দিন নেতাকর্মীদের সাথে দুরত্ব বেড়েই চলছে। আরো জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ আকাশ গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিভিন্নভাবে তাকে ছাড়িয়ে নিতে জামালপুর সদর থানায় তদবির করেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট আব্দুল আউয়াল। এডভোকেট আব্দুল আউয়াল ও বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতার নির্দেশেই গ্রেপ্তার করা হয় আওয়ামী লীগের এই আইনজীবী নেতাকে। কারণ আওয়ামী লীগের আইনজীবী প্যানেলকে দুর্বল করার কারণে ও আমান উল্লাহ আকাশকে চাপে রাখতেই পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারের চেষ্টায় সফল হোন।গ্রেপ্তারের পর মোটা অংকের টাকার রফাদফা হলে তদবীর শুরু করেন জামায়াত নেতা এডভোকেট আব্দুল আওয়াল। শেষে আওয়ামী লীগ নেতা আমান উল্লাহ আকাশকে তার হেফাজতে রাখার কথা উল্লেখ করে রাতভর থানা থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার কূটকৌশল অবলম্বন করেন। ঘটনাটি জামালপুরে টপ অব দ্যা টাউনে পরিণত হলে থানা থেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হোন তিনি। পরদিন জামায়াত নেতা এডভোকেট আব্দুল আউয়াল আওয়ামী লীগ নেতা আমান উল্লাহ আকাশের জামিনের আবেদনে প্রথম সাক্ষরটি তিনিই করেন ও জামিন শুনানিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারী বিশেষ তদবিরের মাধ্যমে জামিনে মুক্ত হোন আওয়ামী লীগ নেতা আমান উল্লাহ আকাশ। জামায়াত নেতার এমন দ্বিচারিতার বিষয়টি জানাজানি হলে অনেকের মাঝেই মিস্ত্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সিনিয়র নেতার এমন অসদাচরণে ক্ষুব্ধ দলের লোকজন। সেই সাথে দলের ইমেজের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন জেলা জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও তিনি এডভোকেট আব্দুল আওয়াল জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি হওয়ার পর থেকেই দলীয় প্রভাব বিস্তার করে মামলা বাণিজ্যে জেলার যে কোন প্রভাবশালী আইনজীবীদেরকে পেছনে রেখেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এডভোকেট আব্দুল আওয়াল গত ১৫ বছরে কোন হামলা মামলার শিকার হোন নি। আইনজীবী হিসেবে নিজের পকেটভারী কথার চিন্তাই করেছেন সব সময়। সংগঠনে নামমাত্র সময় দিয়ে নিজেকে বিরোধীদলের রক্তচক্ষুর আড়ালে থেকেছেন। ইসলামী ব্যাংকের নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী হয়ে দু হাত ভরে অর্থ কামিয়েছেন। বাদী ও বিবাদী দুই পক্ষের আছ থেকেই হাতিয়ে নিয়েছেন টাকা। কথিত আছে, টাকা দিকে তিনি সব করতে রাজী। তাই নিজ দলের নেতাকর্মীরা যখন স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের মিথ্যা মামলায় কারাগারে যেতেন। তখন তিনি আওয়ামী লীগ ও জামায়াত নেতাদের বিপক্ষের লোকদের আছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে নিজ দলের বিপক্ষে মামলা পরিচালনা করতেন। তার এহেন কর্মকাণ্ডে অসহায় তৃণমূলের জামায়াত নেতাকর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণে চোখের জল ফেলে কারাগারের উদ্দেশ্যে রওনা হতেন।
ইসলামী ব্যাংকের মামলায় সাবেক রোকন ও শিবির নেতা মানোয়ারুল হক মানিক,জামালী, সংগঠনের ছাত্র নেতা রেজাউল করীম কে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মী হিসেবে বার বার অনুরোধ করলেও পাষাণ হৃদয়ের এডভোকেট আওয়াল তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও মেলান্দহে জামায়াত নেতা মোজাম্মেল ও শরাফত আলী ফারাজীকে মামলা দিয়ে জেল খাটান তিনি।
তার একনায়কতন্ত্র ও একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে তৃণমূলের সক্রিয় নেতাকর্মীরা দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের দূরে রাখছেন। আবার অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। তিনি জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি হলেও তাকে এই জেলা তো দূরের কথা, জামালপুর শহরেই হাতে গুণা কয়েকজন ছাড়া কেউ চিনে না। অপরিচিত ও অদক্ষ একজনকে জামায়াতের মতো সুশৃঙ্খল সাংগঠনিক দলের গুরু দায়িত্ব দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশার ছাপ ধীরে ধীরে সুস্পষ্ট হচ্ছে।
জেলা জামায়াতের শক্তিশালী ইউনিট হচ্ছে শিবির। অথচ শিবির এর সাথে তার সম্পর্ক খুবই খারাপ। তার দিক নির্দেশনা মানতেও নারাজ শিবিরের কর্মীরা। কারণ, তিনি সাংগঠনিক দূরদর্শীতামূলক কোন দিক নির্দেশনাই দিতে পারেন না।
শুধু শিবির নয়, ৮০ দশক হতে নির্যাতিত, কারাবন্দী ও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিভিন্ন হামলা মামলার শিকার নেতাদের সাথেও তার কোন সুসম্পর্ক নেই৷ তাই তারাও দলের সকল কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের দূরে রেখেছেন।
আল আকাবা সমিতির অর্থ আত্নসাতের কাহিনী নিয়ে সারা দেশেই তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আল আকাবার দায়িত্ব প্রাপ্তরা। এর নেপথ্যের মূল কারিগর জামায়াত নেতা এডভোকেট আওয়াল। হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
আল আকাবা সমিতিকেও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছেন তিনি। দলীয় ৬ শতাধিক ভোটের সদস্যদের মধ্যে ৩০০ জনকে আল আকাবার সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। যেন সংগঠনের ভোটব্যাংক হিসেবে কাজ করে আল আকাবা। আর তার দিক নির্দেশনাতেই এই রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার নীল নকশা বাস্তবায়ন করেন আল আকাবা।
এডভোকেট আব্দুল আওয়ালের দিক নির্দেশনায় গঠনতন্ত্র ও সমিতির সকল আইনের বাইরে গিয়ে আল আকাবা সমিতির দ্বিতীয় শাখা অফিস খুলেন জামালপুর শহরের ইসলামি ব্যাংকের ৫ম তলায়। পরবর্তীতে অভিযোগ আসলে দ্রুত তা মাদারগঞ্জে নিয়ে যান। এখানেও প্রায় কোটি টাকা লোকসান হয় সমিতির।
সমিতির গ্রাহকদের টাকা না দেওয়ায় প্রতিদিন কোন না কোন টেলিভিশন বা পত্রিকায় আল আকাবাকে নিয়ে সাংবাদিকরা সংবাদ পরিবেশন করছেন।জামায়াত সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্নসাতের ঘটনায় সংগঠনের ইমেজ তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে।
অথচ আল আকাবার বিপদকালীন সময়ে এডভোকেট আব্দুল আওয়াল তার গচ্ছিত অর্থ সময়মতো উত্তোলন করেছেন। নিয়েছেন সকল সুদের টাকাও। আল আকাবার নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী হওয়ায় কোটি কোটি টাকা অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। সাধারণ জনগণ জীবনের শেষ সম্বল আল আকাবার কাছে গচ্ছিত রেখে তা ফেরত না পেয়ে চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে বিচারের দাবীতে মানববন্ধন ও মিছিল করে যাচ্ছেন। আল আকাবার দুরাবস্থার জন্য দায়ী জামায়াতের এই নেতা।
এডভোকেট আব্দুল আওয়াল ছিলেন আল আকাবার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিশ্বস্ত। তাই তাদের সকল জমি ক্রয় বিক্রয়, জমি সংক্রান্ত মামলা ও অগ্রণী ব্যাংক জামালপুর শাখা হতে নিজ দলের প্রভাব খাটিয়ে ৩৭ কোটি বিনিয়োগ গ্রহণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেন। এছাড়াও আলফা ব্রিক্স, ঢাকায় গার্মেন্টস শিল্প, মিনারেল ওয়াটার, গরু ছাগলের ফার্ম, ঢাকা কক্সবাজার অত্যাধুনিক এসি বাস ক্রয় করার সার্বিক সহযোগিতা তিনিই করেন। আল আকাবার ধ্বংসের মূল নায়ক তিনি। অথচ তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও তিনি নিজেকে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। ব্যস্ত ছিলেন নিজের আইন পেশায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিন্দুমাত্র ভূমিকা তার ছিলো না। দেন নি সাংগঠনিক কোন নির্দেশনাও।
সামাজিক,রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবেবিতর্কিত ও নানা অপকর্মের মূল হোতা এডভোকেট আব্দুল আওয়ালকে বহিষ্কার করার দাবী জানিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন। আবার অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে।
জামালপুর শহর শাখা জামায়াতের একাধিক নেতারা বলেন, ওনি আতাতের রাজনীতি করার অনার উপর আজ সবাই অনাস্তা প্রকাশ করে
বিগত ১৫ বছর যখন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সাংগঠনিকভাবে নিজেদের অস্তিত্বকে জানান দিয়েছেন জামালপুর জেলা জামায়াতের নেতাকর্মীরা। সেখানে এডভোকেট আব্দুল আওয়াল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই হতাশা কাটছেই না জামালপুর জেলা জামায়াতের নেতাকর্মীদের মাঝে।একটা আদর্শিক দলের এত বড় নেতা হয়ে এমন কাজ ওনি কিভাবে করেন। যা জামায়াতের নীতি ও আদর্শের সাথে বেমানান।
জামায়াতের কর্মী ও মহাদান ইউনিয়নের সাবেক জামায়াতের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ আবু তাহের জানান, বারবার কারা নির্যাতনের শিকার। ব্যবসা কেড়ে নেয়া হয়েছে পুলিশের রিমান্ড ও নির্যাতনের শিকার হয়েও এলাকায় আমার মেধা সম্পদ ও শ্রম দিয়ে কাজ করেছি। এক দিনের জন্যও নিজের বাড়ীতে ঘুমাতে পারি নাই। অন্যায় ও অনিয়মের অভিযোগ করায় বারবার আমাকে হেনাস্তার শিকার হয়েছি জামায়াতের এই নেতার কাছে। ওর ওনি ১৭ বছর আতাতের রাজনীতি করেছেন। নিজের বাসায় ঘুমিয়েছেন একদিন ও জেলে যেতে হয় নি। জামায়াতের কর্মীরা জেলে গেলে ওনি তাদের সাথে ও তাদের পরিবারের সাথে দূর্ব্যাবহার করেছেন।এবং এক দিকে সংগঠন থেকে বেশি বিল নিয়েও মামলার তদারকি ঠিকঠাক করেন নাই জেলে বেশি থাকলে টাকা বেশি পাবেন এই নিতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। আবার পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিতেন। আমি ওনার মত লোভী ও আতাত কারীর বহিষ্কার চাই। একটি আদর্শবাদী দলের নেতা ওনি হতে পারেন না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি এডভোকেট আব্দুল আউয়াল এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।