গাজীপুর প্রতিনিধি: আর মাত্র ১২ দিন পর টঙ্গীতে তুরাগ তীরে বিশ্ব মুসলিমের দ্বিতীয় বৃহত্তম গণজমায়েত তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। দুই পর্বের এই বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি, মাঝখানে ৪ দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে ২০২৪ সালের বিশ্ব ইজতেমা।গতবারের ন্যায় এবারও প্রথম পর্বের ইজতেমায় মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা এবং দ্বিতীয় পর্বে সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীরা অংশ নেবেন।
বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে ময়দান প্রস্তুতের কাজ। ইতিমধ্যে ১৬০ একর মাঠের পুরোটাতেই বাঁশের খুটি পুতে রাখলেও চারভাগের একভাগ মাঠের বাঁশের খুটির উপর ছালার চট টাঙ্গানো হয়েছে শুক্রবার পযর্ন্ত। পুরো মাঠে প্রায় ১০ হাজার বাঁশের খুটি খাড়া রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় আড়াই হাজার বাঁশের খুটিতে চট টাঙ্গানো হয়েছে। অপরদিকে তাসকিলের কামড়া জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, অসহায় প্রতিবন্ধীদের বয়ান শোনার জন্য পৃথক কামরাসহ বিদেশি মেহমানদের থাকার জন্য টিন দিয়ে আলাদা আলাদা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তাসকিলের কামড়ার উত্তরপাশে প্যান্ডেল বড় করতে মেঝেতে ইট বিছানোর কাজ চলমান রয়েছে।
শুক্রবার জুম্মার দিনে টঙ্গী, গাজীপুর, ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে তাবলীগ জামায়াতের সাথীরা ও সর্বস্তরের মানুষ সম্মিলিতভাবে এসব কাজ করতে দেখা গেছে। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক বাস, ট্রাক, পিকআপ, মিনিবাস ও প্রাইভেটকার ছাড়াও শতাধিক মোটরসাইকেলে ইজতেমা মাঠে এসেছেন। শীত উপেক্ষা করে এবার দেশ বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের আগমন বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেসকল মুসল্লিরা স্বেচ্ছা ইজতেমা মাঠে কাজ করতে এসেছেন তারা মাঠের পূর্বপাশে স্থাপিত মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে নিজ নিজ এলাকার সাথীদের নিয়ে তৈরি করা প্যান্ডেলের নীচে দুপুরের খাবারের আগে মাসোয়ারা ও দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন।
শুক্রবার টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে এগিয়ে চলছে প্রস্তুতির কাজ। কেউ ইজতেমা ময়দানে নামাজের দাগ কাটছেন, কেউ বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ করছেন, কেউ প্যান্ডেলের চট সেলাই করছেন, কেউ করছেন খুঁটির ওপর চট টাঙ্গানোর কাজ। আবার অনেককে ময়দান পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। মুলমঞ্চ তৈরির কাজেও ব্যস্ত ছিলেন অনেকে। বিদেশি মুসল্লিদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে কামরা। এসব কাজে বৃদ্ধ ও যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নিয়েছেন। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকেরাও এসেছেন স্বেচ্ছায় ইজতেমার কাজে অংশ নিতে। এছাড়া রাজারবাগ এলাকা থেকে পুলিশ সদস্যদেরও একটি দল এসেছে। তারাও বাঁশের খুটির উপর ছালার চট টাঙ্গার কাজসহ বিভিন্ন কাজে শরিক হয়েছেন।
পুলিশ সদস্য মামুন বলেন, তারা শুক্রবার ছুটি থাকায় তারা ইজতেমা মাঠে শ্রম দেয়ার জন্য এসেছেন। সিরাজগঞ্জের এক মুরুব্বি তাবলীগ জামায়াতের তিন চিল্লায় এসেছেন কাকরাইল মসজিদে। সেখান থেকে তিনি ইজতেমা মাঠে কাজে সময় দেয়ার জন্য টঙ্গীতে আসেন। এছাড়া আজ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মুসল্লি ছাত্র শিক্ষক ও ইমামসহ হাজারো মুসল্লি ইজতেমা মাঠে কাজ করছেন বলে তারা জানান। তবে এলাকা ভিত্তিক বেশিরভাগ লোকই দল বেধে মাঠে এসেছেন।
এদিকে বিশ্ব ইজতেমা সফল ও সুশৃঙ্খল রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম পিপিএম বার। এছাড়া ইজতেমা ময়দানে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিরাপত্তায় জিএমপি এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের র্যাব এর পক্ষ থেকে প্রায় ৩ শতাধিক ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। সিসিটিভির মাধ্যমে কন্ট্রোল রুম থেকে ইজতেমা মাঠের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন ২৪ ঘন্টা। পুলিশিং নিরাপত্তার প্রস্তুতি কাজ চলছে। এছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও সিটি করপোরেশন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর গাজীপুর থেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।
টঙ্গী তুরাগ নদীর তীরে বিশাল এই ময়দানে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা ১৯৬৭ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। গত ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ভারতের প্রখ্যাত মাওলানা ও তাবলিগের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সা’দ এর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে দুই গ্রুপ দুই পর্বে ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারতের মাওলানা সাদ অনুসারীরা, অপরটির নেতৃত্বে বাংলাদেশের আলেম ওলামাদের মাওলানা যোবায়ের অনুসারী গ্রুপ। এবারও প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা অংশ নিবে। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অনুসারী ওয়াসেক পক্ষের মুসল্লিরা অংশ নিবে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তুরাগ নদীর তীরে তৈরি করছেন পন্টুন। যা দিয়ে সাময়িকভাবে মুসল্লিরা এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করতে পারবেন।