ইউনিয়ন পরিষদ ভবনগুলোতে দিনে ও রাতে লোক চক্ষুর আড়ালে পতিতাবৃত্তি।
মোঃ আবুল কাশেম, জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক প্রতিবাদ, ভোলা, বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরূদ্ধে মামলা চালুর খবর বেড়িয়ে পরার পর থেকে বাংলাদেশের চরফ্যাসন উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলো আর ইউনিয়ন পরিষদ নাই। সব ভূতুরে বাড়ি। চেয়ারম্যানগন পলাতক। সেই সাথে আওয়ামী বীরত্বের মেম্বারগনও। তৃনমূল জনসাধারনের দোড়গোরায় বিদ্যমান ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সরকারের স্থানীয় প্রশাসনের সেবা প্রদানের দরজা নামে পরিচিত চরফ্যাসনের ইউনিয়ন পরিষদগুলো বর্তমানে সম্পূর্ণ রুপেই বন্ধ রয়েছে। তারা (চেয়ারম্যান-মেম্বারগন) এই যুগের হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) হয়েছে– ধারনা করে, কোন নাগরীক সেবা প্রার্থী নাগরীকেরা অতি অগ্রবর্তী হয়ে তাদের (চেয়ারম্যান-মেম্বারগনের) শ্বশুর বাড়িতেও খোঁজ পায় না। এওয়াজপুরের Aguri খোঁজ নেওয়া শারমিন নামের এক গার্মেন্টস কর্মী জানায় যে, সে তিন মাস আাগে চট্রগ্রামের ইপিজেডের এক গার্মেন্টসে ফ্লোর হেলপার পদে চাকরী করত। তার সেই গার্মেন্টসের ফ্লোর ইনচার্জ – বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সফল করে আন্দোলন থেকে চাকরিতে ফিরে এসে তাকে কোয়ালিটি করেছে। কোয়ালিটি পদে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বেশি। তাই তাকে সেই পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য হাল নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ নিতে হবে। এই জন্য রাস্তা-ঘাটের পরিবহনের বহু প্রতিবন্ধকতার মধ্যে হাল নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ নেওয়ার জন্য এওয়াজপুরে বাড়ি হওয়ায়– সুদূর চট্রগ্রাম হতে বাড়িতে/এলাকায় এসে পর পর তিন দিন সহ মোট আট দিন এওয়াজপুর ইউনিয়ন পরিষদে হাল নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ নেওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে আসা-যাওয়া ও ঘোরাফেরা করেও চেয়ারম্যান মেম্বারের সাক্ষাৎ পান নাই। সে আরো জানিয়েছে যে, তার এলাকার মেম্বার আওয়ামিলীগ করত তাই সে বাড়িতে থাকে না। আর খোকন চেয়ারম্যান (এওয়াজপুর ইউনিয়নের) অফিস করে না। খোকন চেয়ারম্যানের কুনজের হাট এলাকার শ্বশুর বাড়িতেও সে গিয়েছে, সেখানেও চেয়ারম্যানকে পায় নাই। এই ব্যাপারে এওয়াজপুরের লোকজনের নিকট খোঁজ নিয়ে সংক্ষেপে জানা যায় যে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারে ময়লা। আসলেই চেয়ারম্যান অফিসে থাকে না। যারা চেয়ারম্যানের পরিচিত তাদের কাজও পরে থাকে না, চেয়ারম্যান গায়েবিভাবে সেরে দেন। তবে গত ১৫/০৮/২০২৪ ইং তারিখে আবু বকরপুর ইউনিয়নের সিরাজ চেয়ারম্যানকে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত বোরকা পড়া মহিলারা ঝাড়ু পেটা করার ও গলায় জুতার মালা পড়ানোর এবং নাজেহাল করার খবর বেরিয়ে পরার পর চরফ্যাসন উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে নাগরিক সেবা প্রদানের অফিসিয়াল কাজে পাওয়া যায় না। রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত নাগরীক সেবা জনসাধারনের হাতের নাগালে পাওয়ার জন্য সাবেক আমিনাবাদ ইউনিয়ন ভেঙ্গে আমিনাবাদ, আবুবকরপুর ও আব্দুল্যাপুর নামে তিন ভাগে তিনটি ইউনিয়নে পরিনত করা হলেও ঐ তিন ইউনিয়নের সামষ্টিক হাল ইতিহাস দেখে জানা গেল যে, এক ইউনিয়ন থাকা কালে জনসাধারনের জন্য সরকারের যেই পরিমান রাষ্ট্র সম্পদ বৃহত্তর আমিনাবাদ ইউনিয়নের নামে বরাদ্দ পেয়ে লুটপাট করা হত তার চেয়েও তিনগুন বেশি সরকারী রাষ্ট্র সম্পদ লুটপাট ও বেখাত করার জন্য এক ইউনিয়নকে ভাগ করে তিন ইউনিয়নে পরিনত করা হয়েছে। আব্দুল্যাপুর ইউনিয়নের সাত নং ওয়ার্ডের মসজিদের ঈমাম পরিচয় দেওয়া এক বড় হুজুরের ভাষায় জানা গেল যে, আব্দুল্যাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্থানীয় সাবেক জ্যাকব এমপির খাদেমগিরি করার জন্য সব সময়েই চরফ্যাসন পৌরসভায় তার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানী করে। তাই তাকে ইউনিয়ন পরিষদে পাওয়া যায় না। বর্তমানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে থাকায় আব্দুল্যাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানী ঢাকা রাজধানীতে করতে হয়। শেখ হাসিনা ভারতচ্যুত হয়ে লন্ডনে বা অন্য কোন দেশে চলে গেলে আব্দুল্যাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভারতে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানী করতে হবে। চরফ্যাসনের আন্যান্য একুশটি ইউনিয়নে একা একা কেউ কেউ কোন কোন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে সন্ধান করতে পারলেও একতাবদ্ধ চার-পাঁচজন নয়া আগন্তুকের কাছে কোন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে পেশ বা হাজির পাওয়া যায় না। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, বর্তমান চেয়ারম্যান-মেম্বারগণ শেখ হাসিনার তৃনমূলীয় প্যানেল। শেখ হাসিনা নেই তারাও নাই। এলাকায় যেই চেয়ারম্যানেরই খোঁজ নেই শুনা যায়, তিনি কোথায় – এমন প্রশ্নের উত্তরে পাওয়া যায় যে, চেয়ারম্যান সাহেব ঢাকায়। ঢাকা বা অন্যত্র। অন্যত্র এর খোঁজ নিলে পাওয়া যায় সেখানেও নাই। এমতাবস্থায় সরকারের কোটি কোটি টাকায় নির্মিত চরফ্যাসন উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ ভবনগুলো শুধু যৌন পল্লীর পরিত্যাক্ত ভবনের মত পড়ে আছে। তবে চরফ্যাসন উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে নিশি রাতে কিংবা দিবসের লোক চক্ষুর আড়াল ক্ষনে অদৃশ্য পতিতাবৃত্তি চলে কিনা– এমন প্রশ্নের “না” বোধক উত্তর হওয়ার কোন উপাদানও খুঁজে পাওয়া যায় না। ছবিতে— চরফ্যাসনের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যাক্ত ভবন ও শেখ হাসিনার নামে চালু হওয়া মামলার বিভিন্ন খবরের শিরোনাম।