ইসলামে দাসীর স্তন খোলা রাখা নিয়ে হাদিস গুলোর তাহকীক ও জবাব

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মুক্তমনা নাস্তিকদের দেখানো দাসিদের স্তনে বাড়ি খাওয়া সক্রান্ত হাদিস গুলোর তাহকীক:

আবু-বকর আল-বায়হাকী তাঁর ‘আস-সুনানুল কুবরা’ (2/320) তে বর্ননা করেছেন :

وَأَخْبَرَنَا أَبُو الْقَاسِمِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ الْحِرَفِيُّ بِبَغْدَادَ أنبأ عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الزُّبَيْرِ الْكُوفِيُّ، ثنا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ عَفَّانَ، ثنا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ، عَنْ حَمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ قَالَ: حَدَّثَنِي ثُمَامَةُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ جَدِّهِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: ” كُنَّ إِمَاءُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَخْدِمْنَنَا كَاشِفَاتٍ عَنْ شُعُورِهِنَّ تَضْرِبُ ثُدِيُّهُنَّ

‘আমাদের আবুল-কাসিম আব্দুর-রহমান বিন উবাইদুল্লাহ আল-হিরাফী বাগদাদে বর্ননা করেছেন যে……আনাস বিন মালিক (রা) হতে বর্নিত তিনি বলেছেন : উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর দাসীরা আমাদের খেদমত করতেন, চুল খোলে রাখা অবস্থায়, যা তাদের স্তনে বাড়ি খেত’

অনেকে দাবি করে যে এখানে বলা হয়েছে ‘تَضْطَرِبُ ثُدِيُّهُنَّ’ অর্থাৎ ‘তাদের (দাসীদের) স্তনগুলো দোল খেত/ বিশৃংখল হয়ে যেতো ‘। কিন্ত এটা আসলে সঠিক না। উক্ত হাদিসে এমন কিছু বলা হয়নি, বরং এই হাদিসটিতে বলা হয়েছে ‘كَاشِفَاتٍ عَنْ شُعُورِهِنَّ تَضْرِبُ ثُدِيُّهُنَّ’ যাদ্বারা স্পষ্ট হয় যে ‘তাদের চুলগুলো স্তনে বাড়ি খেত’। এখানে ‘তাদের স্তনগুলো দোল খেত’ বা এই ধরনের কোনোকিছু বলা হয়নি।

এই বর্ননাটাকে উল্লেখ্য করতে গিয়ে কিছু আলেম تَضْطَرِبُ ثُدِيُّهُنَّ শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা কিনা সঠিক না।আস-সুনানুল কুবরা আমাদের সামনে আছে, এবং আমরা দেখতে পারছি যে আল-বায়হাকী “تَضْرِبُ” বর্ননা করেছেন “تَضْطَرِبُ” নয়!

পক্ষান্তরে “দাসীদের স্তনগুলো দোল খেত/ বিশৃংখল হয়ে যেতো” – এই কথাটিসহ উল্লেখিত হাদিসটি বর্নিত হয়েছে ‘ইয়াহইয়া বিন সালাম’ এর রিওয়ায়েতে।

ইয়াহইয়া বিন সালাম তাঁর ‘তাফসিরে'(1/441) উল্লেখিত হাদিসটিকে কিছুটা ভিন্ন শব্দে বর্ননা করেছেন :

وَحَدَّثَنِي حَمَّادٌ وَنَصْرُ بْنُ طَرِيفٍ، عَنْ ثُمَامَةَ بْنِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: كُنَّ جَوَارِي عُمَرَ يَخْدُمْنَنَا كَاشِفَاتِ الرُّءُوسِ، تَضْطَرِبُ ثُدِيُّهُنَّ بَادِيَةً خِدَامُهُنَّ

‘আমাকে হাম্মাদ ও নাসর বিন তারিফ সম্মিলিতভাবে বর্ননা করেছেন ছুমামাহ বিন আনাস বিন মালিক হতে যে আনাস বিন মালিক (রা) হতে বর্নিত, তিনি বলেছেন : উমারের (রা) দাসীরা আমাদের খেদমত করতো, মাথা খোলা রাখা অবস্থায়, তাদের স্তনগুলো দোল খেত/ বিশৃংখল হয়ে যেতো, উরু (হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত দেহাংশ) একদম প্রকাশ্য উন্মুক্ত থাকতো ‘

কিন্ত ‘ইয়াহইয়া বিন সালাম ‘ কে আদ-দারাকুতনী, ইবন আদী, আল-হাকিম, আল-বায়হাকী,ইবনুল যাওযি, আয-যাহাবী এবং ইবন হাজার ‘যইফ/শক্তিশানী নয়/প্রচুর ভুলকারী’ বলেছেন। সুতরাং রাবি হিসেবে ইয়াহইয়া বিন সালাম ‘যইফ’।

[দেখুন : আল-ইলাল (5/117), আস-সুনান (1862) & (3271),আল-কামিল (9/126),
মুখতাসারু তালখিসিয যাহাবী (1/528), ফাতহুল বারী (4/243),আদ-দুয়াফা ওয়াল মাতরুকিন (3/196),আল-খিলাফিয়াত (2/430) এবং http://hadith.islam-db.com তে তার তরজমাহ ]

সুতরাং

  • ইয়াহইয়া বিন সালামের বর্নিত উক্ত রেওয়ায়েতটি ‘যইফ’, যার অর্থ এটি গ্রহনযোগ্য নয়।
  • অপরদিকে, আল-বায়হাকীর আস-সুনানুল কুবরা গ্রন্থে বর্নিত রেওয়ায়েতটিও নির্ভর করার মতো না।

আল-বায়হাকীর ‘আস-সুনানুল কুবরা’ (2/320) তে বর্নিত রেওয়ায়েতটির সনদ নিম্নরুপ :

وَأَخْبَرَنَا أَبُو الْقَاسِمِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ الْحِرَفِيُّ بِبَغْدَادَ أنبأ عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الزُّبَيْرِ الْكُوفِيُّ، ثنا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ عَفَّانَ، ثنا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ، عَنْ حَمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ قَالَ: حَدَّثَنِي ثُمَامَةُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ جَدِّهِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ

এই সনদটিতে একজন রাবি হলেন ‘হাম্মাদ বিন সালামাহ’। হাম্মাদ বিন সালামাহ একজন বড়মাপের মুহাদ্দিস ও রাবি হিসেবে নির্ভরযোগ্য ছিকাহ ছিলেন । কিন্ত বৃদ্ধ হয়ার পর তাঁর স্বরনশক্তি ক্রুটিপুর্ন ও বিকৃত হয়ে গিয়েছিল।

বৃদ্ধ বয়সে হাম্মাদের স্বরনশক্তি ক্রুটিপুর্ন ও বিকৃত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিভংগি নিম্নে উল্লেখ্য করা হলো :

এক. আবু-বকর আহমদ ইবনুল-হুসাইন আল-বায়হাকী –

হাম্মাদের ব্যাপারে আল-বায়হাকী বলেছেন :

هو أحد أئمة المسلمين إلا أنه لما كبر ساء حفظه فلذا تركه البخاري وأما مسلم فاجتهد وأخرج من حديثه عن ثابت ما سمع منه قبل تغيره

‘তিনি (হাম্মাদ) মুসলিমদের ইমামদের অন্তর্ভুক্ত একজন, কিন্ত যখন তিনি বৃদ্ধ হন, তাঁর স্বরনশক্তি বাজে হয়ে যায়, এবং একারনেই আল-বুখারি তাকে পরিত্যাগ করেছেন। আর যদি কথা আসে মুসলিমের, তিনি ইজতেহাদ করেছেন এবং তাঁর (হাম্মাদের) ছাবিত হতে বর্নিত সেইসমস্ত হাদিস থেকে বর্ননা উল্লখ্য করেছেন, যেগুলো হাম্মাদের স্বরনশক্তি বাজে হয়ার পুর্বে তাঁর (হাম্মাদের) নিকট হতে শ্রবন করা হয়েছে।’

→[দেখুন : আল-খিলাফিয়াত (2/50); তাহযিবুত তাহযিব (3/14) ]

আল-বায়হাকী আরো বলেছেন :

وَحَمَّادٌ سَاءَ حِفْظُهُ فِي آخِرِ عُمُرِهِ، فَالْحُفَّاظُ لَا يَحْتَجُّونَ بِمَا يُخَالِفُ فِيهِ

“এবং জিবনের শেষের দিকে হাম্মাদের স্বরনশক্তি বাজে হয়ে গিয়েছিলো,কাজেই হাফেযরা (হাম্মাদের)সেইসব হাদিস দ্বারা দলিল দেন না যেগুলোতে হাম্মাদ ভিন্নতা প্রকাশ করেন”

→[দেখুন : আল-খিলাফিয়াত (4/285)&আস-সুনানুল কুবরা (8/46)]

দুই. আল-ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল আল-বুখারী –

ইমাম আল-বুখারী ‘হাম্মাদ বিন সালামাহ’ এর বর্নিত হাদিসগুলো দ্বারা ইহতিজাজ করেন নি শুধুমাত্র এই কারনে যে, বৃদ্ধ বয়সে হাম্মাদের স্বরনশক্তি বিকৃত ও ক্রুটিপুর্ন হয়ে গিয়েছিল

→[দেখুন : আল-খিলাফিয়াত (2/50); তাহযিবুত তাহযিব (3/14) ]

তিন. আল-ইমাম মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আল-কাশিরী –

তিনি জানতেন যে হাম্মাদের স্বরনশক্তি শেষ বয়সে ক্রুটিপুর্ন হয়ে গিয়েছিল, তাই তিনি ইজতিহাদের দ্বারা হাম্মাদের সেই বর্ননাগুলোকে নির্দিষ্টভাবে বাছাই করেছেন, যেগুলো হাম্মাদ তাঁর স্বরনশক্তিতে সমস্যা সৃষ্টি হয়ার পুর্বে বর্ননা করেছেন ও শুনেছেন

→[দেখুন : আল-খিলাফিয়াত (2/50); তাহযিবুত তাহযিব (3/14) ]

চার. আল-ইমাম আহমদ বিন হানবল আশ-শাইবানী আয-যুহলী-

আবু-বকর আল-বায়হাকী, ইমাম আহমদ হতে নক্বল করে বলেন :

‘قَالَ الشَّيْخُ أَحْمَدُ: حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ سَاءَ حِفْظُهُ فِي آخِرِ عُمْرِهِ. فَلَا يُقْبَلُ مِنْهُ مَا يُخَالِفُهُ فِيهِ الْحُفَّاظُ’

‘এবং শায়খ আহমদ বলেছেন : শেষ বয়সে হাম্মাদ বিন সালামাহ এর স্বরনশক্তি বাজে হয়ে গিয়েছিলো, সুতরাং তাঁর (হাম্মাদের) নিকট হতে এমন হাদিস গ্রহন করা হবেনা যেগুলোর ক্ষেত্রে (অন্যান্য) হাফেযরা হাম্মাদের প্রতি ভিন্নতা প্রকাশ করেছেন। ‘

→[দেখুন : মা’রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার (2/212) ]

পাচ. আবু-হাতেম মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস ইবনুল মুনযির আর-রাযী –

আবু-হাতিম আর-রাযী বলেছেন :
وكان حماد ساء حفظه في آخر عمره
‘এবং শেষ বয়সে হাম্মাদের স্বরনশক্তি বাজে হয়ে গিয়েছিলো’

→[দেখুন : আজ-জারহু ওয়াত তা’দিল (9/66)]

ছয়. আবুল-ফাদ্বাল আহমদ ইবন হাজার আল-আসকালানী –

ইবন হাজার আল-আসকালানী বলেছেন :

حماد بن سلمة بن دينار البصري، أبو سلمة، ثقة عابد، أثبت الناس في ثابت وتغير حفظه بأَخَرَةٍ

‘হাম্মাদ বিন সালামাহ বিন দিনার আল-বসরী, আবু-সালামাহ,ছিকাহ আবিদ, ছাবিতের ক্ষেত্রে মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। এবং শেষ বয়সে তাঁর স্বরনশক্তি বাজে হয়ে গিয়েছিলো।’

→[দেখুন : তাকরিবুত তাহযিব (রাবি/1499)]

সাত. যাইনুদ্দিন আবুল-বারাকাত ইবনুল কিয়াল আল-খাতিব :

ইবনুল কিয়াল তাঁর “আল-কাওয়াকিবুন নাইরাত ফি মা’রেফাতে মান ইখতালাতা মিনার রুয়াতিছ ছিকাত”(পৃ/460) এ হাম্মাদকে উল্লেখ্য করেছেন

আট. বুরহানুদ্দিন আবুল-ওয়াফা সাবাত ইবনুল-আজামী :

সাবাত ইবনুল আজামী তাঁর “আল-ইগতিবাত বিমান রুমিয়া বিল-ইখতিলাত”(রাবি/28) গ্রন্থে হাম্মাদকে উল্লেখ্য করেছেন।

এইক্ষেত্রে আলোচ্য হাদিসটি হাম্মাদ ছাড়া আর কেওই বর্ননা করেন নি (ইয়াহইয়ার রেওয়ায়েত অনুযায়ি নাসর বিন তারিফ হাম্মাদের সহিত বর্ননা করে মুতাবায়াত করেছেন, কিন্ত নাসরের বর্ননা বিবেচনারই যোগ্য না, কেননা নাসর ছিলো একজন হাদিস জালকারী মিথ্যুক)। যেহেতু হাম্মাদের বৃদ্ধবয়সে স্বরনশক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো, এবং তিনি ছাড়া আর কেওই উক্ত হাদিস বর্ননা করেন নি ; সুতরাং হাম্মাদের বর্নিত এই হাদিসটিও নির্ভরযোগ্য না।

দাসির দেহের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করা সক্রান্ত বর্ননার তাহকিক

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর ব্যাপারে একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যে তিনি (রা) একদা বাজারে যান, এবং একটি দাসী ক্রয় করার ইচ্ছা করেন।এবং বাজারের এক দাসীর নিতম্ব, স্তন, পেট,কোমড়, রান ও তার শরিরের কিছু অংশ হাত দ্বারা হাতিয়ে দেখেন।

এই লেখাটিতে এই ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

এক.

আবু-বকর আল-বায়হাকী ‘আস-সুনানুল কুবরা'(11/216) – এ বর্ণনা করেছেন :

أخبرَنا أبو الحُسَينِ ابنُ بِشْرانَ العَدلُ ببَغدادَ، أخبرَنا إسماعيلُ ابنُ محمدٍ الصَّفّارُ، حدثنا الحَسَنُ بنُ علىِّ بنِ عَفّانَ، حدثنا ابنُ نُمَيرٍ، عن عُبَيدِ اللهِ بنِ عُمَرَ، عن نافِعٍ، عن ابنِ عُمَرَ، أنَّه كان إذا اشتَرَى جاريَةً، كَشَفَ عن ساقِها ووَضَعَ يَدَه بَينَ ثَديَيها وعَلَى عَجُزِها ، وكأنَّه كان يَضَعُها عَلَيها مِن وراءِ الثَّوبِ.

…নাফে, ইবন উমার (রা) সম্পর্কে বলেন যে তিনি যখন দাসী ক্রয় করেছিলেন, উক্ত দাসীর ঊরু থেকে কিছু পোশাক সরিয়েছিলেন এবং তার দুই স্তনের মাঝে ও নিতম্বে নিজের হাত রেখেছিলেন।এবং ব্যাপারটা অনেকটা এমন ছিল যে তিনি তার (দাসির) উপর তার(দাসির) কাপড়ের উপর দিয়ে হাত রাখছিলেন।

তাহকিক – এমর্মে যত বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে, তাদের মধ্যে তুলনামুলকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালি সনদের অধিকারী হচ্ছে আল-বায়হাকীর বর্ণিত এই বর্ণনাটি। বর্ণনাটিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ্য আছে যে ইবনু উমার (রা) স্তনের মাঝে ও নিতম্বে হাত রেখেছিলেন কাপড়ের উপর দিয়ে, উলঙ্গ করে নয়। এবং তিনি পোশাক সরিয়েছিলেন ঊরুর অঞ্চল হতে, এর বেশি নয়।

এই বর্ণনাটির সনদের একজন রাবি হলেন ‘الحَسَنُ بنُ علىِّ بنِ عَفّانَ ‘ [আল-হাসান বিন আলি বিন আফফান]। আল-হাসান বিন আলি বিন আফফানকে অনেক মুহাদ্দিসরা ছিকাহ বলেছেন। কেওই তাকে ‘যইফ’ বা ক্রুটিযুক্ত বলে সরাসরি মন্তব্য করেন নি।

কিন্ত ‘আল-হাসান বিন আলি বিন আফফান’ হাদিস বর্ণনার বেলায় অল্প কিছুক্ষেত্রে ভুল করতেন, অর্থাৎ উনি অতি-অল্প ভুলকারী ছিলেন। নিম্নে এর পক্ষে কিছু প্রমাণ উল্লেখ্য করা হলো :

ইবনু-হাজার আল-আসকালানী তাঁর ‘তাকরিবুত তাহযিব'(রাবি/1261) গ্রন্থে আল-হাসানকে “صدوق” (সুদুক) বলেছেন, এবং ইবনু-হাজার তাকরিবুত তাহযিবের ভূমিকায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে যেসমস্ত রাবিরা সামান্য কিছু ভুলের কারণে ছিকাহ স্তর হতে অল্প একটু নিচে নেমে গিয়েছেন, তাদের বেলাতেই তিনি এই صدوق শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

আবু-বকর আল-বায়হাকী ‘আস-সুনানুল কুবরা'(1/415) তে একটি হাদিস প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন
فَإِمَّا أَنْ يَكُونَ غَلَطًا مِنْهُ أَوْ مِنَ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ

অর্থ : “হয় ভুলটি তার কারণে হয়েছে, আর নাহয় আল-হাসান বিন আলির কারণে “

আল-হাসান সম্পর্কে আল-বায়হাকীর এই বক্তব্যটি হতে সুস্পষ্ট হয় যে আল-বায়হাকীর নিকট আল-হাসান এমন একজন রাবি ছিলেন, যিনি কিনা হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে ভুল করতে পারতেন।

ইবনু-আবি-হাতিম আর-রাযী ‘আজ-জারহু ওয়াত তাদিল'(3/22) গ্রন্থে আল-হাসান বিন আলি সম্পর্কে লিখেছেন,
‘كتبنا عنه وهو صدوق’
অর্থ : ‘আমরা তার নিকট হতে (হাদিস) লিখেছি এবং সে সুদুক’।

আল-খাতিবুল বাগদাদী তাঁর ‘আল-কিফায়াহ'(পৃ/23) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে ইবনু-আবি-হাতিমের নিকট ‘ছুদুক’ পর্যায়ের রাবিদের বর্ণনা দলিলযোগ্য নয়।

ইবনু রাসলান ‘শারহু সুনানে আবি-দাউদ'(17/237) এ ও আয-যাহাবী ‘তাযহিবু তাহযিবিল কামাল'(2/302) এ উল্লেখ্য করেছেন যে ‘আবু-হাতিম আর-রাযী’ আল-হাসানকে ‘صدوق’ (ছুদুক) বলেছেন, তিনি আল-হাসানকে ছিকাহ বলেন নি, যার অর্থ উনার দৃষ্টিতে আল-হাসানের দ্বারা ভুল হতে পারে।

অপরদিকে, আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা) ছিলেন রাসুল (সা) এর কথা ও কাজের একজন প্রচন্ড কট্টর কঠোর অনুসারী। তিনি রাসুল (সা) এর কথা ও কাজগুলোকে অক্ষরে অক্ষরে হুবুহু পালন, অনুকরন ও অনুসরণ করতেন। এমনকি অনেক তুচ্ছ বিষয়ের বেলাতেও তিনি রাসুল (সা) এর পদ্ধতিকে অনুকরন করতেন। এব্যাপারে ‘ইবনু বাত্তাহ আল-উকবারী’ তাঁর ‘আল-ইবানাহ'(1/240-245) গ্রন্থে কিছু বর্ণনা উল্লেখ্য করেছেন, সেগুলো দেখে নেয়া যেতে পারে। তাছারা এইব্যাপারটির পক্ষে আরো প্রচুর পরিমাণের বর্ণনা প্রচুর সংখ্যাক ইতিহাস ও রিজাল-শাস্ত্র সক্রান্ত গ্রন্থে বিভিন্ন সনদ ধরে বর্ণিত হয়েছে, এই ব্যাপারটির সত্যতা যাচাইয়ে ইচ্ছুক কোনো ব্যাক্তি চাইলে সেগুলোও অনুসন্ধান করে দেখে নিতে পারেন।

আল-বুখারী তাঁর ‘সহিহ’ (হা/6788) গ্রন্থে সনদ ধরে আয়েশাহ (রা) হতে বর্ণনা করেছেন যে আয়েশাহ (রা) বলেছেন :
“وَمَا مسَّت يَدُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَ امْرَأَةٍ إلاَّ امْرَأَةً يملكها”

“যেই মহিলার উপর রাসুলের (সা) অভিভাবকত্ব আছে সেই মহিলা ব্যাতিত অন্য কোনো মহিলার হাতকে রাসুল (সা) এর হাত কখনৌই কোনোভাবেই স্পর্শ করেনি “

যেখানে কিনা রাসুলের (সা) হাত কোনো গায়রে মাহরামের হাতকে কখনৌই স্পর্শ করেনি, সেখানে ইবনু উমারের (রা) মত রাসুলের (সা) একজন কট্টর কঠোর কড়া অনুসারী ও হুবুহু অনুকরনকারী কিভাবে একজন গায়রে মাহরামের দেহে স্পর্শ করতে পারেন?

যেহেতু উক্ত বর্ণনাটি ইবনু-উমার (রা) এর ব্যাপারে বর্ণিত প্রসিদ্ধ বর্ণনাগুলোর সহিত খাপ খাচ্ছেনা, সুতরাং এক্ষেত্রে আল-হাসান বিন আলির ভুল হয়াটা আবশ্যক।

অর্থাৎ আল-হাসান এক্ষেত্রে বর্ণনাতে ভুল করেছেন ও এই বর্ণনাটি দলিলযোগ্য নয়।

দুই.

ইবনু আবি-শাইবাহ উনার ‘মুসান্নাফ’ (4/289-হা/20240) এ বর্ণনা করেছেন :

حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، قَالَ: كُنْتُ مَعَ ابْنِ عُمَرَ أَمْشِي فِي السُّوقِ فَإِذَا نَحْنُ بِنَاسٍ مِنَ النَّخَّاسِينَ قَدِ اجْتَمَعُوا عَلَى جَارِيَةٍ يُقَلِّبُونَهَا، فَلَمَّا رَأَوَا ابْنَ عُمَرَ تَنَحَّوْا وَقَالُوا: ابْنُ عُمَرَ قَدْ جَاءَ، فَدَنَا مِنْهَا ابْنُ عُمَرَ فَلَمَسَ شَيْئًا مِنْ جَسَدِهَا، وَقَالَ: أَيْنَ أَصْحَابُ هَذِهِ الْجَارِيَةِ، إِنَّمَا هِيَ سِلْعَةٌ

মুজাহিদ (রহ) হতে বর্নিত : আমি ইবন উমারের (রা) সাথে বাজারে হাটছিলাম। আমরা কিছু দাস-দাসী ব্যবসায়ীদের নিকটবর্তি হলাম এবং দেখলাম যে তারা সবাই একটি দাসীর নিকট একত্রিত হয়ে তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে। যখন তারা ইবনে উমারকে দেখল তারা সরে গেল এবং বলল : ইবন উমার এসেছেন! , তারপর ইবনে উমার (রা) দাসিটীর নিকটবর্তি হলেন এবং তার দেহের কিছু অংশ স্পর্শ করলেন, এবং বললেন এই দাসীর মালিকেরা কোথায়?

তাহকিক –

বর্ণনাটিতে একজন রাবি হলেন ‘مجاهد بن جبر’ (মুজাহিদ বিন জাবার)। ইমাম আহমদ বিন হানবল মুজাহিদ সম্পর্কে বলেছেন যে মুজাহিদের শেষজীবনে মানসিক বিকৃতি ঘটেছিলো। [ইমাম আহমদ হতে এমনটা উল্লেখ্য করেছেন আল-ইজলী তাঁর ‘আছ-ছিকাত'(পৃ/49) এ এবং ইবনুল-আজামী তাঁর ‘আল-ইগতিবাত'(রাবি/89) এ]। মানসুর উক্ত হাদিসটি মুজাহিদ হতে মুজাহিদের মানসিক বিকৃতি ঘটার পরবর্তিকালে শ্রবণ করেছেন বলে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে, কেননা এই হাদিসটি ইবনু-উমার (রা) এর ব্যাপারে প্রসিদ্ধ হয়া বিষয়গুলোর সাথে মিলছেনা।

সনদটিতে একজন রাবি হলেন ‘منصور ابن المعتمر’ (মানসুর ইবনুল-মু’তামির)। আবু-হাতিম ইবনু হিব্বান আল-বুস্তী তাঁর ‘আছ-ছিকাত'(7/474) গ্রন্থে বলেছেন যে মানসুরের মধ্যে শিয়াপনা ছিলো। এব্যাপারটা অতি-সামান্য হলেও সন্দেহ তৈরি করে যে হয়তো মানসুর শিয়াপনার প্রভাবে এসে ইবনু-উমার (রা) এর ব্যাপারে এমনটা বর্ণনা করেছেন।

সনদটিতে অপর একজন রাবি হলেন ‘جرير بن عبد الحميد’ (জারির বিন আব্দুল-হামিদ)।

প্রথমত, জীবনের শেষের দিকে জারিরের স্বরনশক্তি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো।

আবু-বকর আল-বায়হাকী ‘আস-সুনানুল কুবরা'(6/143) তে বলেছেন :

“وَالْحَدِيثُ الْآخَرُ فِي رُوَاتِهِ مَنْ نُسِبَ فِي آخِرِ عُمْرِهِ إِلَى سُوءِ الْحِفْظِ، وَهُوَ جَرِيرُ بْنُ عَبْدِ الْحَمِيدِ”

অর্থ : “এবং অপর হাদিসটির রাবিদের মধ্যে এমন একজন আছেন যাকে শেষ জীবনে স্বরনশক্তি দুর্বল হয়ার দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, এবং তিনি হলেন জারির বিন আব্দুল-হামিদ। “

আল-আলবানী তাঁর ‘সিলসিলাতুয যয়িফাহ’ (3/317) তে আল-বায়হাকীর উক্ত বক্তব্যটির উপর নির্ভর করেছেন।আন-নওওই তাঁর ‘আল-মাজমু’ (17/429) তে ও আশ-শাওকানী তাঁর ‘নাইলুল আওতার'(6/332) এ জারিরের ব্যাপারে প্রদানকৃত আল-বায়হাকীর উক্ত বক্তব্যটিকে বিবেচনার যোগ্য হিসেবে গন্য করেছেন, এবং একই কাজ করেছেন ইবনুত-তুর্কমানী তাঁর ‘আজ-জাওহারুন নাক্বী'(2/254) তে।ইবনুল-কিয়াল, আল-আলাঈ ও ইবনুল-আজামী [যথাক্রমে : আল-কাওয়াকিবুন নাইরাত (পৃ/122), কিতাবুল মুখতালিতিন (পৃ/17) ও আল-ইগতিবাত (রাবি/18) এ] আল-বায়হাকীর উক্ত বক্তব্যটির উপর নির্ভর করে জারিরকে সেসমস্ত রাবিদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গন্য করেছেন যাদের কিনা শেষ জীবনে মানসিক বিকৃতি ঘটেছিলো বা স্বরনশক্তি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো।

উক্ত হাদিসটি ইবনু-উমার (রা) এর ব্যাপারে বর্ণিত হয়া প্রসিদ্ধ বিষয়গুলোর সাথে মিলেনা, সামঞ্জস্যপুর্ণ হয়না, কাজেই প্রবল সম্ভাবনা আছে যে জারির উক্ত বর্ণনাটি তাঁর স্বরনশক্তি দুর্বল হয়ার পর বর্ণনা করেছেন।

দ্বিতীয়ত, জারিরের মধ্যে প্রচন্ড রকমের শিয়াপনা ছিলো।

আলাউদ্দিন মোগলতাঈ ‘ইকমালু তাহযিবিল কামাল’ (2/89) গ্রন্থে বলেছেন :

وقال قتيبة: ثنا جرير الحافظ المقدم، لكني سمعته يشتم معاوية علانية، وعمر،

“এবং কুতাইবাহ বলেছেন : আমাদের নিকট আল-হাফিযুল মুকাদ্দাম জারির হাদিস বর্ণনা করেছেন, কিন্ত আমি তাঁকে প্রকাশ্যে মুয়াবিয়াহকে ও উমারকে গালি দিতে শুনেছি “

ইবনু হাজার আল-আসকালানী ‘ফাতহুল বারী ‘ (1/395) তে বলেছেন :
وَنسبه قُتَيْبَة إِلَى التَّشَيُّع المفرط
‘এবং কুতাইবাহ তাঁকে (জারিরকে) মাত্রাতিরিক্ত শিয়াপনার দিকে সম্পৃক্ত করেছেন ‘

অতিরিক্ত শিয়াপনা যাদের মধ্যে আছে, তারা ইবনু উমার (রা) কে কিছুটা ঘৃনা করেন অপছন্দ করেন, কেননা উনাদের মতে ইবনু-উমার (রা) ইয়াযিদের আনুগত্য স্বীকার করে খুবই খারাপ কাজ করেছেন।

সুতরাং, এই নির্দিষ্ট হাদিসটির জন্য এই নির্দিষ্ট সনদটি নির্দিষ্টভাবে সন্দেহজনক।

তিন.

ইবনু আবি-শাইবাহ উনার ‘মুসান্নাফ'(4/289-হা/20241) এ বলেন :

نَا عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّهُ كَانَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَشْتَرِيَ الْجَارِيَةَ وَضَعَ يَدَهُ عَلَى أَلْيَتَيْهَا، وَبَيْنَ فَخِذِهَا، وَرُبَّمَا كَشَفَ عَنْ سَاقَيْهَا

নাফে, ইবনে উমার (রা) হতে বর্ননা করেন যে : তিনি (ইবনে উমার) যখন একটি দাসী ক্রয় করতে চাইলেন তিনি তার হাত উক্ত দাসীর নিতম্বের মাঝে রাখলেন এবং ঊরুর/রানের মাঝে রাখলেন। এবং ঊরু থেকে তার কিছু পোশাক সরালেন

তাহকিক –

সনদটিতে একজন রাবি হলেন ‘عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ’ (আলি বিন মুসহির)। আলি বিন মুসহির সাধারনভাবে একজন ছিকাহ রাবি ছিলেন, কিন্ত শেষ জীবনে তিনি অন্ধ হয়ে যান এবং শুধুমাত্র স্বরনশক্তি দ্বারা হাদিস বর্ণনা করতে থাকেন (স্বাভাবিক ক্ষেত্রে তিনি হাদিস সংরক্ষনের, বর্ণনা করার ও মনে রাখার জন্য লিখে রাখতেন)। এরফলে তাঁর বর্ণিত হাদিসগুলোতে দুর্বলতা দেখা দেয়।

[দেখুন : আবূ-জাফর আল-উকাইলীর ‘আদ্ব-দুয়াফাউল কাবির'(3/251) এবং ড. ইব্রাহিম আল-লাহিমের আজ-জারহু ওয়াত তা’দিল (পৃ/131)]

তাছারা, আলি বিন মুসহিরের শেষজীবনে অন্ধ হয়ে শুধুমাত্র স্বরনশক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে দুর্বলতা অর্জন করার আগেও উনার সাথে একটা নেতিবাচক ঘটনা ঘটে গিয়েছিলো। ঘটনাটা হচ্ছে অনেকটা এইরকম যে তাঁর হাদিসের নোটখাতাগুলো সব হারিয়ে গিয়েছিলো, তারপর তিনি আবার নতুন করে নোটগুলো তৈরি করেন, এই ঘটনার কারণে ইমাম আহমদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে যেহেতু আলির সাথে এমন একটা ঝামেলা ঘটে গিয়েছে, সুতরাং আলি একা কোনো হাদিস বর্ণনা করলে উনার একা বর্ণিত সেই হাদিস নির্ভরযোগ্য হবেনা, এবং এরই ভিত্তিতে ইমাম আহমদ আলির একটা হাদিসকে মুনকার বলেছিলেন।তবে ইমাম আহমদ বাদে অন্যান্য ইমামরা এঘটনার কারণে আলির হাদিস নিয়ে কোনো সন্দেহ করেন নি। [দেখুন : আল-লাহিমের ‘আজ-জারহু ওয়াত তা’দিল'(পৃ/131)]।

ইবনু-আবি-শাইবাহ, আলি বিন মুসহির হতে তাঁর অন্ধ হয়ার পরে বর্ণিত হাদিস শ্রবন করেছেন বলে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। সুতরাং এই সনদটি সন্দেহজনক।

চার.

আব্দুর-রাজ্জাক আস-সান’আনী উনার ‘আল-মুসান্নাফ’ (হা/13198-13205) গ্রন্থে এইমর্মে অনেকগুলো বর্ণনা উল্লেখ্য করেছেন :

عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ عَطَاءٍ قَالَ: قُلْتُ لَهُ: الرَّجُلُ يَشْتَرِي الْأَمَةَ، أَيَنْظُرُ إِلَى سَاقَيْهَا، وَقَدْ حَاضَتْ، أَوْ إِلَى بَطْنِهَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ عَطَاءٌ: كَانَ ابْنُ عُمَرَ «§يَضَعُ يَدَهُ بَيْنَ ثَدْيَيْهَا، وَيَنْظُرُ إِلَى بَطْنِهَا، وَيَنْظُرُ إِلَى سَاقَيْهَا، أَوْ يَأْمُرُ بِهِ

ইবন জুরাইজ, আতা হতে বর্ননা করে বলেন : আমি তাকে (আতাকে) বললাম, একজন ব্যাক্তি দাসী ক্রয় করতে গেলে সে কি তার হাটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত বা তার পেট দেখতে পারবে? তিনি (আতা) বললেন : হ্যা, আতা আরো বললেন : ইবন উমার তার হাত দাসীর দুই স্তনের মাঝখানে রাখেন এবং তার পেটে দিকে তাকান, এবং তার হাটু হতে গোড়ালি পর্যন্ত দেহের অংশে তাকান।

عَبْدُ الرَّزَّاقِ قَالَ: أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ قَالَ: أَخْبَرَنِي عَمْرٌو – أَوْ أَبُو الزُّبَيْرِ -، عَنِ ابْنِ عُمَرَ: ” أَنَّهُ §وَجَدَ تُجَّارًا مُجْتَمِعِينَ عَلَى أَمَةٍ، فَكَشَفَ عَنْ بَعْضِ سَاقِهَا، وَوَضَعَ يَدَهُ عَلَى بَطْنِهَا.

উমার বা আবুয যুবাইর,ইবনে উমার সম্পর্কে বর্ননা করেন যে তিনি কিছু ব্যবসায়ীদের একটি দাসির নিকট একত্রিত হতে দেখলেন। তারপর তিনি তার(উক্ত দাসির) হাটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত দেহের অংশ হতে কিছু কাপড় সরালেন। এবং তার পেটে হাত রাখলেন

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، وَمَعْمَرٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ كَانَ §إِذَا أَرَادَ أَنْ يَشْتَرِيَ جَارِيَةً، فَرَاضَاهُمْ عَلَى ثَمَنٍ، وَضَعَ يَدَهُ عَلَى عَجُزِهَا، وَيَنْظُرُ إِلَى سَاقَيْهَا وَقُبُلِهَا – يَعْنِي بَطْنَهَا.
عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَالِمٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ مِثْلَهُ

নাফে হতে বর্নিত তিনি ইবনে উমার সম্পর্কে বলেন যে : যখন ইবনে উমার একটি দাসী ক্রয় করতে চাইলেন, তখন তিনি উক্ত দাসীর মালিকদের পর্যাপ্ত মুল্য দিলেন এবং তার হাত উক্ত দাসীর নিতম্বে রাখলেন এবং তার পা, পেট ও সম্মুখভাগের দিকে তাকালেন। সালিম, ইবনে উমার সম্পর্কে অনুরুপ বর্ননা করেছেন।

.عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ قَالَ: مَرَّ ابْنُ عُمَرَ: عَلَى قَوْمٍ §يَبْتَاعُونَ جَارِيَةً، فَلَمَّا رَأَوْهُ وَهُمْ يُقَلِّبُونَهَا، أَمْسَكُوا عَنْ ذَلِكَ، فَجَاءَهُمُ ابْنُ عُمَرَ، فَكَشَفَ عَنْ سَاقِهَا، ثُمَّ دَفَعَ فِي صَدْرِهَا، وَقَالَ: «اشْتَرُوا». قَالَ مَعْمَرٌ، وَأَخْبَرَنِي ابْنُ أَبِي نَجِيحٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ قَالَ: وَضَعَ ابْنُ عُمَرَ يَدَهُ بَيْنَ ثَدْيَيْهَا، ثُمَّ هَزَّهَا

উমার বিন দিনার বলেন মুজাহিদ হতে বর্নিত : ইবনে উমার একটি দলের নিকট দিয়ে গেলেন যারা একটি দাসী বিক্রি করতে চাচ্ছিল, যখন তারা ইবনে উমারকে দেখলেন তখন দাসিটির নিকট তেকে সরে গেলেন। অতপর ইবনে উমার তাদের নিকট আসলেন এবং উক্ত দাসির পায়ের অঞ্চল থেকে কিছু পোশাল সরালেন। তারপর তার বুকে ধাক্কা দিলেন। এবং বললেন : “ক্রয় করো”। এবং ইবন আবি নাজিহ মুজাহিদ হতে বর্ননা করেন : ইবনে উমার সেই দাসিটীর দুই স্তনের মাঝখানে নিজের হাত রাখলেন, তারপর তার স্তন নাড়াচারা করলেন।

.عَنِ ابْنِ عُيَيْنَةَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ قَالَ: كُنْتُ مَعَ ابْنِ عُمَرَ فِي السُّوقِ، §فَأَبْصَرَ بِجَارِيَةٍ تُبَاعُ، فَكَشَفَ عَنْ سَاقِهَا، وَصَكَّ فِي صَدْرِهَا، وَقَالَ: «اشْتَرُوا». يُرِيهِمْ أَنَّهُ لَا بَأْسَ بِذَلِكَ

মুজাহিদ হতে বর্নিত তিনি বলেন : আমি বাজারে ইবনে উমারের সাথে ছিলাম। তিনি একটি বিক্রিত হয়ার উপযুক্ত দাসী দেখলেন, এবং তার পায়ের অঞ্চল হতে কিছু পোশাক খুললেন। এবং তার বুকে থাপড়ালেন। এবং বললেন “ক্রয় করো”।

.عَنِ ابْنِ عُيَيْنَةَ قَالَ: وَأَخْبَرَنِي ابْنُ أَبِي نَجِيحٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ قَالَ: «§وَضَعَ ابْنُ عُمَرَ يَدَهُ بَيْنَ ثَدْيَيْهَا، ثُمَّ هَزَّهَا.
মুজাহিদ হতে বর্নিত : ইবনে উমার তার হাত দাসির দুই স্তনের মাঝে রাখলেন এবং তারপর তা নাড়াচাড়া করলেন।

عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ ابْنَ عُمَرَ: ” كَانَ يَكْشِفُ عَنْ ظَهْرِهَا، وَبَطْنِهَا، وَسَاقِهَا، وَيَضَعُ يَدَهُ عَلَى عَجُزِهَا
নাফে হতে বর্নিত যে ইবনে উমার উক্ত দাসির পিঠ, পেট ও পা হতে কিছু কাপড় সরাচ্ছিলেন এবং তার নিতম্বে হাত রাখছিলেন।

এই বর্ণনাগুলো নিম্নে উল্লেখিত এই দশটি সনদ ধরে আব্দুর-রাজ্জাক বর্ণনা করেছেন :

(১) ইবনু-জুরাইজ → আতা

(২) ইবনু জুরাইজ → হয় উমার, আর নাহয় আবুয-যুবাইর

(৩) আব্দুল্লাহ বিন উমার → নাফি

(৪) মা’মার → আইয়ুব → নাফি

(৫) ইবনু জুরাইজ → নাফি

(৬) মা’মার → উমার বিন দিনার → মুজাহিদ

(৭) মা’মার → ইবনু-আবি-নাজিহ → মুজাহিদ

(৮) ইবনু উয়াইনাহ → উমার বিন দিনার → মুজাহিদ

(৯) ইবনু উয়াইনাহ → ইবনু-আবি-নাজিহ → মুজাহিদ

(১০) মা’মার → আয-যুহরী → সালিম

জুমহুর মুহাদ্দিসদের মত ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আব্দুর-রাজ্জাক আস-সান’আনী সাধারনভাবে রাবি হিসেবে নির্ভরযোগ্য ছিকাহ ছিলেন।

কিন্ত উনার কিছু সমস্যা ছিলো।

প্রথমত, তাঁর মধ্যে ‘তাশাইয়ু ‘ (শিয়াপনা) ছিলো।

[দেখুন : ইবনু আদীর ‘আল-কামিল'(6/545), আল-ইজলীর ‘আছ-ছিকাত'(পৃ/302), ইবনু হিব্বানের ‘আছ-ছিকাত'(8/412), মোগলতাঈ এর ‘আল-ইকমাল'(8/268) এ আবু-দাউদ হতে নক্বলকৃত বক্তব্য, ইবনু হাজারের ‘তাহযিবুত তাহযিব'(6/314) এ আল-বাযযার হতে নক্বলকৃত বক্তব্য, আয-যাহাবীর ‘সিইরু আ’লামিন নুবালা ‘(9/563) …ইত্যাদি ইত্যাদি]

দ্বিতীয়ত, এই তাশাইয়ু এর প্রভাবে আব্দুর-রাজ্জাক অন্যদের অপমান করে ও আহলুল বাইতের প্রসংশা করে বহু মুনকার হাদিস বর্ণনা করেছেন।

[দেখুন : ইবনু আদীর ‘আল-কামিল'(6/545)]

ইবনু-উমার (রা) এমন একজন ব্যাক্তি যাকে শিয়ারা ভালো নজরে দেখেন না, উনাদের মতে ইবনু-উমার (রা) ইয়াযিদের আনুগত্য স্বীকার করে খুবই খারাপ কাজ করেছেন। অনেক শিয়ারা উনার ব্যাপারে অনেক অপমানজনক কথা বলতো ও বলে। কাজেই শিয়াপনার প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে অন্যদের ব্যাপারে মুনকার হাদিস বর্ণনাকারী আব্দুর-রাজ্জাক হতে এমনটা আশা করাই যায় যে তিনি এই অপমানজনক বর্ণনাগুলো ইবনু-উমার (রা) এর ব্যপারে বানোয়াট সনদে বর্ণনা করেছেন।

অর্থাৎ আব্দুর-রাজ্জাকের এই বর্ণনাগুলো সন্দেহজনক। অপরদিকে, যদিও আব্দুর-রাজ্জাক জুমহুর মুহাদ্দিসদের নিকট সাধারন অবস্থায় ছিকাহ ছিলেন, কিন্ত তবুও মুহাদ্দিসদের একটা উল্লেখ্যযোগ্য অংশ আব্দুর-রাজ্জাককে হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে গাইরে ছিকাহ হিসেবে গন্য করেছেন ও সমালোচনা করেছেন। আর এব্যাপারটাও উক্ত বর্ণনাগুলোকে সন্দেহজনক করে তোলে।

তাছারা এই ১০ টি সনদের প্রত্যেকটিই এককভাবে সন্দেহজনক।

১ম সনদের একজন রাবি হলেন ‘আতা’, তাঁর শেষজীবনে মানসিক বিকৃতি ঘটেছিলো। [দেখুন : আল-লাহিমের ‘আজ-জারহু ওয়াত তাদিল'(পৃ/270)]

২য় সনদে একজন রাবি হলেন ‘আবুয-যুবাইর’, তিনি প্রচুর তাদলিসকারী তৃতীয় স্তরের প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস, উনার তাদলিসের আধিক্যতার কারণে একদল মুহাদ্দিস তাঁকে যইফও বলেছেন [দেখুন : ইবনু হাজারের ‘তবাকাতুল মুদাল্লিসিন'(রাবি/101) ও ‘ফাতহুল বারী'(1/442)]।এই সনদে ইবনু-উমার (রা) হতে শ্রবণ স্পষ্ট করা হয়নি।

৩য় সনদে একজন রাবি হলেন ‘আব্দুল্লাহ বিন উমার বিন হাফস ‘,তিনি রাবি হিসেবে যইফ [দেখুন : ইবনু হাজারের ‘তাকরিবুত তাহযিব'(রাবি/3489)], অর্থাৎ এই সনদটি যইফ।

৪র্থ ও ১০ম সনদে আব্দুর-রাজ্জাক মা’মার হতে বর্ণনা করেছেন। আব্দুর-রাজ্জাকের ব্যাপারে আদ-দারাকুতনী বলেছেন :
ثقة، لكنه يخطئ على معمر في أحاديث

অর্থ : “ছিকাহ, কিন্ত তিনি (আব্দুর-রাজ্জাক) বহু হাদিসের বেলায় মা’মারের ক্ষেত্রে ভুল করেন ” …[দেখুন : মিযানুল ই’তিদাল (2/610)]

৫ ম সনদের একজন রাবি ইবনু-জুরাইজ, তিনি প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস ছিলেন, বাজে মানের তাদলিস করতেন [দেখুন : আবু-উমার আল-ওয়াকিলের সংকলিত নাছলুন নাবাল (4/41-43)]। এই সনদে তিনি নাফি হতে শ্রবণ স্পষ্ট করেন নি, কাজেই সনদটি যইফ।

৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম সনদে রয়েছেন ‘মুজাহিদ বিন জাবার ‘,ইমাম আহমদ বিন হানবল মুজাহিদ সম্পর্কে বলেছেন যে মুজাহিদের শেষজীবনে মানসিক বিকৃতি ঘটেছিলো। [ইমাম আহমদ হতে এমনটা উল্লেখ্য করেছেন আল-ইজলী তাঁর ‘আছ-ছিকাত'(পৃ/49) এ এবং ইবনুল-আজামী তাঁর ‘আল-ইগতিবাত'(রাবি/89) এ]

অতপর, যদি ধরে নেই যে ইবনু-উমার (রা) হতে বর্ণিত এই ঘটনাটি সঠিক, তাহলে এক্ষেত্রে বিবেচনাযোগ্য বর্ণনাটি হবে শুধুমাত্র আল-বায়হাকীর বর্ণনাটি, কেননা : আল-বায়হাকীর বর্ণিত সনদটি তুলনামুলকভাবে সবচেয়ে বেশি পরিচ্ছন্ন ও শক্তিশালী, অপরদিকে এটা বাদে বাকি যত সনদ বর্ণিত হয়েছে, তার সবগুলোর বেলাতেই যথেস্ট আপত্তি করা যায়, সন্দেহ করা যায়, দুর্বলতা দেখানো যায়। এমনকি অন্যান্য রেওয়ায়েতগুলোর মধ্য হতে কিছু রেওয়ায়েতের সাথেত আল-বায়হাকীর উক্ত বর্ণনাটির বিরোধও পাওয়া যায়।

আল-বায়হাকীর বর্ণনাটিতে বলা হয়েছে:

“নাফে, ইবন উমার (রা) সম্পর্কে বলেন যে তিনি যখন দাসী ক্রয় করেছিলেন, উক্ত দাসীর ঊরু থেকে কিছু পোশাক সরিয়েছিলেন এবং তার দুই স্তনের মাঝে ও নিতম্বে নিজের হাত রেখেছিলেন।এবং ব্যাপারটা অনেকটা এমন ছিল যে তিনি তার (দাসির) উপর তার(দাসির) কাপড়ের উপর দিয়ে হাত রাখছিলেন।”

আল-বায়হাকীর এই বর্ণনাটিতে স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে ইবনু-উমার (রা) উক্ত স্পর্শটি করেছেন দাসীটির কাপড়ের উপর দিয়ে, উলঙ্গ করে নয়। তিনি কিছুটা কাপড় সরিয়েছেন শুধু ঊরু অঞ্চল হতে, এর বেশি নয়।

এখন প্রশ্ন হলো, ইবনু-উমার (রা) কি এই কাজটা ঠিক করেছেন? নাকি ভুল করেছেন?

এই প্রশ্নটির উত্তর নিম্নরুপ :

এটা জেনে রাখা জরুরি যে সাহাবিরা শতভাগ ভুলের উর্ধ্বে ছিলেন না, উনাদের দ্বারাও কিছু ভুল হতো।

ইবনু-উমার (রা) এর নিজস্ব, নিজের নির্ধারণ করা, নিজের তৈরি করা, নিজের পছন্দ করা, নিজের বাছাই করা ‘মুলনিতী’ অনুযায়ী বিবেচনা করলে তিনি (রা) এই কাজটি সঠিক করেন নি,বরং ভুল করেছেন। এটা আমার ব্যাক্তিগত রায় বা মত না বরং ইবনু-উমার (রা) এর নিজস্ব মুলনিতীই এব্যাপারটাকে প্রমাণ করে।

ইবনু-উমার (রা) এর ব্যাপারে এটা প্রসিদ্ধ যে তিনি রাসুল (সা) এর কথা ও কর্মসমুহকে কঠোরভাবে অনুসরন ও অনুকরন করতেন, সেটা অতি-তুচ্ছ বিষয় হলেও তিনি সেটাতে রাসুল (সা) এর পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। অর্থাৎ তাঁর মুলনিতী ছিলো যথাসম্ভব রাসুল (সা) কে অনুসরণ ও অনুকরন করে চলা, তা অতি তুচ্ছ বিষয়ের বেলায় হলেও।

পুর্বে উল্লেখ্য করা হয়েছে যে রাসুল (সা) যেই মহিলাদের অভিভাবকত্ব গ্রহন করেন নি, তাদের কাওকেই তিনি কখনোই স্পর্শ করেন নি। এহিসেবে ইবনু-উমারের (রা) মুলনিতী অনুযায়ী ইবনু-উমারের (রা) উক্ত দাসীকে স্পর্শ না করাটাই উচিত ছিলো। কিন্ত তিনি করেছেন, যার অর্থ উনার মুলনিতী অনুযায়ী উনার এই কাজটি সঠিক না, কেননা এই কাজটি রাসুল (সা) এর আমলের সাথে মিলেনি।

মুয়াবিয়া(রা.) ও বিবস্ত্র দাসীর ঘটনা

‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থ থেকে বর্ণনাটি নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

“ইবনে আসাকির হযরত মু’আবিয়ার আযাদকৃত গোলাম খোঁজা খাদীজের জীবনী আলোচনা প্রসঙ্গে তার উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন,

(একবার) মু’আবিয়া (রা) একটি সুন্দরী ও ফর্সা বাঁদী খরিদ করলেন, এরপর আমি তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় তার সামনে পেশ করলাম, এ সময় তার হাতে একটি দণ্ড ছিল৷ তিনি তা দ্বারা তার বিশেষ অঙ্গের প্রতি নির্দেশ করে বলেন, এই সম্ভোগ অঙ্গ যদি আমার হত! তুমি তাকে ইয়াযীদ বিন মু’আবিয়ার কাছে নিয়ে যাও৷

… রাবী’আ যখন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলেন, তখন তিনি তাকে বলেন, এই বাঁদীকে বিবস্ত্র অবস্থায় আমার সামনে আনা হয়েছে এবং আমি তার বিশেষ বিশেষ অঙ্গ দেখেছি, এখন আমি তাকে ইয়াযীদের কাছে পাঠাতে চাই৷ তিনি বললেন, না৷ আমীরুল মু’মিনীন ! আপনি তা করবেন না৷ কেননা, সে তার জন্য আর হালাল হবে না ৷ তিনি বলেন, তুমি অতি উত্তম রায় প্রদান করেছ৷

রাবী বলেন, এরপর তিনি হযরত ফতিমা (রা.) -এর আযাদকৃত গোলাম আবদুল্লাহ বিন মাসআদা আল ফাযারীকে বাঁদীটি দান করেন৷ আর সে ছিল কৃষ্ণাঙ্গ, তইি তিনি তাকে বলেন, এর মাধ্যমে তোমার সন্তানাদিকে ফর্সা করে নাও৷ এ ঘটনা হযরত মু’আবিয়ার ধর্মীয় বিচক্ষণতা ও অনুসন্ধিৎসার পরিচায়ক৷ যেহেতু তিনি কামভাবের সাথে বাঁদীটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন৷ কিন্তু তার ব্যাপারে নিজেকে দুর্বল গণ্য করেন (এবং তাকে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন) তাই তিনি নিম্নের আয়াতের কারণে বাঁদীটি তার পুত্র ইয়াযীদকে দান করা থেকে বিরত থেকেছেন। … ”
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ – ইবন কাসির, ৮ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), পৃষ্ঠা ২৬৬-২৬৭

আরো কোনো কোনো স্থানে এই বর্ণনাটি পাওয়া যায়, তবে সব স্থানেই ইবন আসাকির(র.) থেকেই বর্ণনাটি উল্লেখ করা হয়েছে; মূল উৎস একই। এই বর্ণনাটি উল্লেখ করে ইসলামবিরোধীরা ইসলামকে নারীবিদ্বেষী ও অমানবিক ধর্ম হিসেবে দাবি প্রমাণের চেষ্টা করে (নাউযুবিল্লাহ)।

প্রথমতঃ

কোনো বর্ণনা থেকে কিছু দাবি করতে হলে সর্বপ্রথম দেখতে হবে বর্ণনাটি কতোটুকু বিশুদ্ধ বা নির্ভরযোগ্য। উপরে আমরা দেখেছি ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থে এই বর্ণনাটি ইবন আসাকির(র.) এর সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে (আন্ডারলাইনকৃত)। কাজেই ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ইবন আসাকির(র.) এর মূল বর্ণনার সনদ যাচাই করতে হবে। তবে এর পূর্বেই লক্ষনীয় যে ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থের সকল নুসখায় এই বর্ণনাটি নেই। এটি কিছু নুসখায় আছে আবার কিছু নুসখায় অনুপস্থিত।

সনদের রাবী (বর্ণনাকারী) সহ ইবন আসাকির(র.) মূল বর্ণনাটি নিম্নরূপঃ

1225 – حديج ووجدته في كتاب من كتب إسحاق بن إبراهيم الموصلي خديج وهو خصي (4) وكان لمعاوية بن أبي سفيان حكى عنه وعن أبي الاعور السلمي وربيعة الجرشي (5) وروى عنه عوانة بن الحكم وعبد الملك بن عمير وكان مع معاوية بالجابية اخبرنا أبو بكر محمد بن محمد بن محمد بن كرتيلا أنبأنا أبو بكر محمد بن علي بن محمد الخياط أنبأنا أبو الحسين احمد بن عبد الله السوسي أنبأنا أبو جعفر احمد بن أبي طالب علي بن محمد الكاتب نبأنا أبي نبأنا محمد بن مروان ابن عم الشعبي حدثني محمد بن احمد أبو بكر الخزاعي حدثني جدي يعني سليمان بن أبي شيخ نبأنا محمد بن الحكم عن عوانة حدثني حديج خصي لمعاوية رأيته زمن يزيد بن عبد الملك في ألفين من العطاء قال اشترى لمعاوية جارية (6) بيضاء جميلة فأدخلتها عليه مجردة وبيده قضيب فجعل يهوي به إلى متاعها ويقول هذا المتاع لو كان له متاع اذهب بها إلى يزيد بن معاوية ثم قال لا ادع لي ربيعة بن عمرو الجرشي وكان فقيها فلما دخل عليه قال أن هذه اتيت بها مجردة فرأيت فيها ذاك وذاك (7) واني اردت أن ابعث بها إلى يزيد قال لا تفعل يا أمير المؤمنين فإنها لا تصلح له

আমরা উপরে দেখতে পাচ্ছি বর্ণনাকারীদের মধ্যে আছেন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আবু বকর খাযাঈ (محمد بن احمد أبو بكر الخزاعي) [উপরে লাল রঙে চিহ্নিত]। তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে যঈফ বা দুর্বল ছিলেন।

কাজেই আলোচ্য বর্ণনা যঈফ বা দুর্বল সাব্যস্ত হয়েছে। এককভাবে এই বর্ণনা থেকে কোনো কিছু প্রমাণ করা যাবে না।

ترجمة معاوية رضي الله عنه وذكر شيء من أيامه ودولته- الجزء رقم11

كتاب تاريخ دمشق لابن عساكر

الأعلام للزركلي | مجلد 5 | صفحة 309 | حرف الميم | مح | ابن أبي الأزهر | التراجم والطبقات | جامع الكت

একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে প্রাচীন তারিখ (ইতিহাস) গ্রন্থগুলোতে এমনকি তাফসির গ্রন্থগুলোতেও কোনো বর্ণনা থাকলেই সেটি বিশুদ্ধ নয়। তারিখ গ্রন্থগুলোতে সহীহ, দুর্বল, জাল সব ধরণের বর্ণনাই রয়েছে। তারিখ গ্রন্থগুলোতে বর্ণনা উল্লেখের ক্ষেত্রে ইমামগণ হাদিস গ্রন্থের চেয়ে কম সতর্কতা অবলম্বন করতেন। অনেক সময়ে তাফসির গ্রন্থগুলোতেও ইমামগণ সহীহ বর্ণনার সাথে সাথে কিছু দুর্বল বর্ণনাও উল্লেখ করেছেন। ইমামগণ সাধারণভাবে এই বর্ণনাগুলো উল্লেখ করে যেতেন এবং মন্তব্য করতেন। তাঁরা নিজেরাও কখনো দাবি করেননি যে এই বর্ণনাগুলোর সবগুলোই সহীহ। এই প্রাথমিক বিষয়গুলো মাথায় রাখলে আর বিভ্রান্ত হবার সুযোগ থাকে না। ইসলামবিরোধীরা এখানে যে বর্ণনাটি উল্লেখ করে মুয়াবিয়া(রা.) এর ব্যাপারে নানা খারাপ জিনিস বলবার চেষ্টা করে সেটি দুর্বল বর্ণনার অন্তর্গত। কাজেই তাদের প্রচারণায় আমরা কেউ যেন বিভ্রান্ত না হই।

সংগৃহিত:

তাহলে, প্রথমে যে চিত্র টি দিয়েছিলাম, সেটার বদলে নিচের চিত্রটি সঠিক

Exit mobile version