আব্দুল কাদের বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃÑ নওগাঁর বদলগাছী ঐতিহাসিক পাহাড়পুরে বিশ^ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে শতাধীক গুনিজন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এখানে বিশ^ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবীতে দীর্ঘ দিন থেকে মানববন্ধন, স্মারক লিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছে এলাকাবাসী। পাহাড়পুর বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবীর যৌক্তিকতা ও বিভিন্ন গুনিজনের মতামত পর্যালোচনায় জানা যায়, প্রাচীন কালে তৎকালীন সোমপুর বিহার নামে গড়ে তোলা হয়েছিল শিক্ষা, জ্ঞান চর্চা ও গবেষণা ভিত্তিক বিশ^ বিদ্যালয়। যে কারনে তৈরী হয়েছে আজকের পাহাড়পুর।
বিশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘঠে। সেটি সংঘটিত হয়েছিল ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে। ওই সময় মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদশাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয় নামে একটি পুঁথি আবিস্কার করে আনেন। এ ঘটনার ১০ বছর পর ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে হরপ্রসাদশাস্ত্রী মহাশয়ের সম্পাদনায় হাজার বছরের পুরান বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা নামে তা প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত এ পুঁথিটির পরিশিলীত নাম চর্যাগীতি, চর্যাপদ। চর্যাপদই বংলা ভাষায় রচিত প্রাচীন ও প্রথম সাহিত্য নিদর্শন। সপ্তম-অষ্টম শতকের গোড়া থেকেই বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার সুত্রপাত হয়েছে বলে পন্ডিতেরা অনুমান করেন।
মধ্যযুগের শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তীন লিখিত পুঁথি আবিস্কার এবং চর্যাপদের বিষয়বস্তুগত ঐতিহাসিকতার নিরিখেই এটা প্রায় সিদ্ধান্তে পর্যবসিত হয় যেÑচর্যার রচনাকাল সপ্তম থেকে দশম -একাদশ শতকে। বিশিষ্ট চর্যাপদ গবেষক অধ্যাপক আলীম মাহমুদ রচিত চর্যাপদ-এ সঙ্গীত প্রসঙ্গ বই থেকে এ সুত্র জানা যায়। চর্যাপদ সপ্তম থেকে দশম-একাদশ শতকে ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে(সোমপুর) সৃষ্টি করা হয়েছিল জন্যই চর্যাপদ গবেষক অধ্যাপক আলীম মাহমুদ বদলগাছী সদরে ও পাহাড়পুরে পর্যাপদ বিষয়ে আলোচনা ও চর্যাগানের অনুষ্ঠান করেন। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকাবাসী জানতে পারে বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ সৃষ্টি করা হয়েছে তৎকালীন সোমপুর বিহার আজকের পাহাড়পুরে। নওগাঁর সাবেক জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান পাহাড়পুরের ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাহাড়পুর বিশ^ বিদ্যালয় নির্মানের প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবিত বিশ^ বিদ্যালয় নিয়ে জেলার বিভিন্ন এমপি মন্ত্রীদের মধ্যে শুরু হয় রশি টানাটানি। অনিশ্চয়তার এক পর্যায়ে পাহাড়পুর বিশ^ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবীতে সভা সমাবেশ করে চলেছে এলাকাবাসী। সম্প্রতি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার দর্শক বান্ধব করতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন হাজার বছর পূর্বে যেখানে শিক্ষা, জ্ঞান চর্চা কেন্দ্র ছিল জন্যই আজকের পাহাড়পুর সৃষ্টি। এখানে বিশ^ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী যৌক্তিক দাবী। তিনি জোড় সুপারিশ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পাহাড়পুর বিশ^ বিদ্যালয় ব্যস্তবায়নণ কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের একমাত্র ভরসার জায়গা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। পাহাড়পুর শুধু এলাকা নয় দেশের মধ্যে উন্নতম প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন। এখানে বিশ^ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পেলে পাহাড়পুর আরো পর্যটক বান্ধব হিসাবে গড়ে উঠবে। পাহাড়পুর বিশ^ বিদ্যালয় নির্মান করার উপযুক্ত জায়গা রয়েছে। রয়েছে চতুর্মূখী যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা। রেলওয়ে যোগাযোগের সুবিধা। এছাড়া রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া এলাকার মাঝামাঝি জায়গা পাহাড়পুর। এখানে বিশ^ বিদ্যালয় হলে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি সব এলাকার ছাত্রছাত্রীরা উন্নত শিক্ষার সুযোগ পাবে। একই ধরনের কথা বললেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু খালেদ বুলু। বদলগাছী বঙ্গবন্ধু সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ও কবি ড. ফাল্গুনী রাণী চক্রবর্তী বলেন পাহাড়পুর তথা বদলগাছীবাসীর যে প্রাণের দাবী এখানে বিশ^ বিদ্যালয় স্থাপনের। তা অত্যন্ত যৌক্তিক। এই বিহার আজকের নয় হাজার বছর আগেও বিশ^ বিদ্যালয় হিসাবে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র ছিল। এছাড়া বাংলাভাষা ও সাহিত্যের চর্চা ও এখানে হয়েছে তার প্রমান রয়েছে প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের একমাত্র নিদর্শন চর্যাপদ। এখানে বিশ^ বিদ্যালয় স্থাপন হওয়া সময়ের দাবী।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোছাঃ আলপনা ইয়াসমিন বলেন পাহাড়পুরে দেশী বিদেশী ট্যুরিস্ট আসে। এখানে রেলওয়েসহ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। পাহাড়পুরে বিশ^ বিদ্যালয় হলে বিদেশী ছাত্রছাত্রী ভর্র্তি হবে এবং তারা আর্কিওলজিস্ট গবেষণার সুযোগ পাবে।