গত এক দশকে স্কোর ও অবস্থানের স্থবিরতায় দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা হতাশাজনক: টিআইবি

দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২১-এ টানা চতুর্থবারের মত বাংলাদেশের স্কোর অপরিবর্তিত ২৬;

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২১-এ টানা চতুর্থবারের মত বাংলাদেশের স্কোর অপরিবর্তিত ২৬; 

 

ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি, ২০২১: বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২১-এ টানা চতুর্থবার বাংলাদেশের স্কোর (২৬) অপরিবর্তিত। বৈশ্বিক গড় স্কোরের (৪৩) তুলনায় এবারও বাংলাদেশের স্কোর অনেক কম এবং গতবারের মতই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনি¤œ স্কোর ও অবস্থানে আছে। গত এক দশকে সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থানের স্থবিরতা প্রমাণ করে, দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা আশংকাজনক। এ প্রেক্ষিতে, কোন ভয় বা অনুকম্পা ব্যতিরেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’র কার্যকর প্রয়োগ এবং অপরাধের ‘দায়মুক্তি’র চর্চা বন্ধ করে অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে (টিআইবি)।

আজ সকালে সিপিআই ২০২১ এর বৈশ্বিক প্রকাশ উপলক্ষে অনলাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, “২০২১ সালের সূচকে ০-১০০ স্কেলে টানা চতুর্থবার অপরিবর্তিত ২৬ স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ। গত এক দশকের স্কোরের বিশ্লেষণে বাংলাদেশের ২৬-এ স্থবিরতা এবং সার্বিকভাবে অবস্থানের উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন না হওয়া হতাশাব্যঞ্জক। এবারের সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে সর্বনি¤œ  থেকে গণনা অনুযায়ী ২০২০ এর তুলনায় ১ ধাপ উন্নতি হয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। আর সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী একধাপ পিছিয়ে ১৪৭তম। একই স্কোর পেয়ে এবার নি¤œক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে ১৩তম অবস্থানে মাদাগাস্কার ও মোজাম্বিক। ২০১২ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে অষ্টমবারের মত এবারও বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনি¤œ এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩১টি দেশের মধ্যে তৃতীয় সর্বনি¤œ, যা বিব্রতকর, উদ্বেজনক ও হতাশার।”
আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম এর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা- নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২১ সালের সিপিআই অনুযায়ী ৮৮ স্কোর পেয়ে যৌথভাবে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। ৮৫ স্কোর নিয়ে যৌথভাবে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও নরওয়ে এবং ৮৪ স্কোর পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড। আর ১১ স্কোর পেয়ে তালিকার সর্বনি¤œ দক্ষিণ সুদান, ১৩ স্কোর পেয়ে যৌথভাবে তালিকার দ্বিতীয় সর্বনি¤œ  সিরিয়া ও সোমালিয়া এবং ১৪ স্কোর পেয়ে তৃতীয় সর্বনি¤œ  অবস্থানে ভেনেজুয়েলা।

এসময় ড. জামান বলেন, “সূচকে বাংলাদেশের আরো ভালো করার সুযোগ ছিল। যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘শূন্য সহনশীলতা’র অঙ্গীকার বাস্তবে প্রয়োগ করা যেতো, দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অকার্যকরতা ও বিচারহীনতার অবসান ঘটিয়ে আইনের শাসন নিশ্চিত করা যেতো এবং সরকারি ও রাজনৈতিক অবস্থান ব্যক্তিগত উন্নয়নের লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা যেতো, তাহলে আমাদের স্কোর ও অবস্থানের আরো উন্নতি হতে পারতো। কোভিড-১৯ অতিমারির সংকটময় মূহুর্তে দেশের স্বাস্থ্যখাতের প্রকট দুর্নীতি- বিশেষ করে, উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির বিচার না হওয়া, আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহ খেলাপি ঋণ ও জালিয়াতি, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের অবস্থান ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়া এবং ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতার ঘাটতিও আমাদের অবস্থানের উন্নতিতে অন্তরায় হয়েছে। বিভিন্ন নীতি ও তার প্রয়োগ ক্রমাগত জনস¦ার্থ বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতাবানদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব,  রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের অবক্ষয়, ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি কাজে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও অপরাধের সাথে রাজনৈতিক যোগসূত্রতা এবং ‘রাঘবোয়াল’দের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা বাংলাদেশের আরো অগ্রগতি অর্জনের সুযোগ নষ্ট করেছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, “দুর্নীতির কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের দুই-তিন শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি খাতে সেবা নিতে গিয়ে যারা ঘুষ প্রদানে বাধ্য হন, তাদের ৮৯ শতাংশের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ঘুষ ছাড়া সরকারি সেবায় অভিগম্যতা অসম্ভব। দুর্নীতি এখন আমাদের সাধারণ জীবনাচারের অংশ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুফল সাধারণ ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে, তবে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক ‘যদি-কিন্তু’ রয়েছে। আমাদের আইন আছে, রাজনৈতিক অঙ্গীকারও আছে। কিন্তু যাদের ওপর এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ভার, তাঁদের একাংশই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, দুর্নীতির ফলে লাভবান, দুর্নীতিকে সুরক্ষা দেন এবং দুর্নীতির প্রসারে কাজ করেন। তাই এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।”

 

Exit mobile version