ঠিকাদারদের দৌরাত্ম্যতের কবলে বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ! 

দুমকিতে চরম উৎকন্ঠায় শিক্ষক - শিক্ষার্থী - অভিভাবক।

মো.সুমন মৃধাঃ দুমকি(পটুয়াখালী)প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর দুমকিতে ঠিকাদারদের দৌরাত্ম্য, টালবাহানা, চরম গাফেলতি আর  উদাসীনতায় দীর্ঘদিন ধরে  ঝুলে  আছে জলিশা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের কাজ।
জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, পটুয়াখালী এর তত্ত্বাবধানে দুমকি উপজেলাধীন জলিশা বালিকা মাধ্যমিক  বিদ্যালয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের মেসার্স এস এইচ এন্টারপ্রাইজ, আমিরগঞ্জ, মেহেন্দিগঞ্জ,বরিশালকে দেড় বছরের মধ্যে হস্তান্তরের লক্ষ্যে  প্রি-কাস্ট পাইলসহ প্রায় তিন কোটি বাষট্টি লাখ টাকার একটি চারতলা ভবনের নির্মাণ কাজ দেয়া হলে তা ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ খ্রি: তারিখে  শুভ উদ্বোধন করা হয়। এরপর ১ম দফায় কোভিড-১৯ এর কারনে
দীর্ঘ ০৭ মাসের বেশি সময় ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার পর ০৬ নভেম্বর ২০২০ তারিখ থেকে পুনরায় চালু হয়।  কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ভিটি লেভেল পর্যন্ত  কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ঠিকাদার ডানিয়েল ও শহিদুল এর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ২১ এপ্রিল ২০২১ খ্রি: তারিখ ২য় দফায়  নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এতদ্বিষয়ে ঠিকাদারদের ও সংশ্লিষ্টদের সাথে বিভিন্নভাবে যোগোযোগ ও পীড়াপীড়ির এক পর্যায়ে দীর্ঘ ৮ মাস নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার পর গত ১৮ জানুয়ারি ২০২২ তারিখ হতে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করে শুধু নিচতলার কলাম  ঢালাইয়ের কাজ শেষে কিউরিং না করেই ৩য় ধাপে আবারও কাজ বন্ধ করে দেয়।
আরও জানা যায়, নির্মাণ সামগ্রী ঠিকভাবে সরবরাহ  না করার পাশাপাশি ঠিকমত লেবারদের কাজের প্রাপ্য টাকা পরিশোধ  না করার কারণে লেবাররা সবকিছু যত্রতত্র ফেলে নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে চলে যায়।
এছাড়াও নির্মাণ সামগ্রী দেখভালের কোন লোক নেই। পাম্প মেশিন অকেজো হওয়ায় কারো পক্ষে কিউরিং করা সম্ভব হয়নি।
গতকাল (১০ মার্চ) বৃহস্পতিবার সরজমিনে দেখা যায়, ভবনের নিচতলার পিলার পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সীমাবদ্ধ ও মালামাল যততত্র পড়ে আছে, রডগুলোতে মরিচা পড়েছে। অন্যদিকে ভবনের ভূগর্ভস্থ পাইল স্হাপনের সময় ভারি দুরমুজ ও মেশিনের  কম্পনের ফলে বিদ্যালয়ের পুরাতন টিনশেড ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে।
বিদ্যালয়ের ম্যনেজিং কমিটির সভাপতি  শাহ আলম মাস্টার বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলে তারা সরেজমিনে পরিদর্শন সত্ত্বেও কোন সমাধান মেলেনি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, সামনে  ঝড় বৃষ্টির মৌসুম। ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষে  ক্লাস কি করে নিব? কোনরূপ দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার কে নেবে? এ নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় আছি। এ পরিস্থিতির সবকিছু স্বীকার করে সাব কন্ট্রাক্টর সালাম,তার অধিনস্ত রফিক ও লেবার সরদার মাসুম বলেন, ঠিকাদার ডানিয়েল আমাদের কাজের বিল নিয়ে নানা টালবাহানা করে। তাই আমরা ঠিকভাবে কাজ চালাতে পারছি না।
ঠিকাদার ডানিয়েলের সাথে যোগাযোগ করলে বলেন,আমি ৫-৭ দিনের মধ্যেই আবার কাজ শুরু করবো। আমার অন্যত্র একটি প্রজেক্ট চলমান থাকায় এতদিন উক্ত প্রজেক্টটি ঢিলেঢালাভাবে চলছিলো।
ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও তাকে  পাওয়া যায় নি।
ঘটনার সত্যত স্বীকার করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী লুতফর রহমান  বলেন, আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। মানবেতর পরিবেশে ক্লাস গ্রহণসহ চরম ভোগান্তি ও ঝুঁকিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং আতঙ্কিত আছেন অভিভাবক মহল। ঠিকাদারদের বলেছি যতদ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করতে নইলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
উল্লেখ্য, তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, পটুয়াখালী মহোদয় সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং  সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ কাজী কানিজ সুলতানা হেলেন এর ডিও লেটারসহ যথারীতি আবেদন করা হলেও অদ্যাবধি কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
সদ্যবিদায়ী ইউএনও শাহাদাত হোসেন মাসুদ  বিদ্যালয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে বলেছিলেন, সংশ্লিষ্ট খাতে অর্থ না থাকায় আমার পক্ষ থেকে কোন বরাদ্দ দেয়া সম্ভব নয়।
##
Exit mobile version