ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের জন্য মুখিয়ে আছি: নরেন্দ্র মোদি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মোদি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভির।

এক্সে মোদি লিখেছেন, কিছুক্ষণ আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের জন্য মুখিয়ে আছি।

এর আগে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, তখন তাদের একে অপরকে উষ্ণ আলিঙ্গন করতে দেখা যাবে, হাসি-ঠাট্টাও হবে। কিন্তু বিষয়টা এখানেই শেষ হয়ে যাবে না।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী মোদি বছরের পর বছর ধরে একটা দৃঢ় ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এর প্রতিফলন দেখা যায় তাদের হাই-প্রোফাইল বৈঠকগুলোয় এবং যৌথ উপস্থিতিতে।

ওয়াশিংটনে ২০১৭ সালে তাদের প্রথম বৈঠকের পর থেকে তাদের একাধিক সমাবেশে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। এই যৌথ উপস্থিতির হাত ধরেই তাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে। এই তালিকায় হিউস্টন ও আহমেদাবাদের বিশাল সমাবেশও রয়েছে।

দুই নেতার সম্পর্কের রসায়নের নেপথ্যে রয়েছে তাদের অভিন্ন বিশ্বদর্শন ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং চীনকে মোকাবিলা করার পারস্পরিক কৌশল। দুই দেশের কাছেই চীন উদ্বেগের কারণ এবং এটা বৃহত্তর মার্কিন-ভারত অংশীদারিত্বকে শক্তিশালীও করে তুলেছে।

এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়শই ভারতের সমালোচনা করেছেন, কিন্তু তিনি কখনও নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেননি।

আর তাই প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের সময় তারা সম্ভবত মার্কিন-ভারত কৌশলগত অংশীদারিত্বের পরবর্তী পদক্ষেপগুলোকে ম্যাপ করার বিষয়ে ব্যস্ত থাকবেন। দুই দেশের এই অংশীদারিত্ব ইতিমধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে।

শোনা যাচ্ছে, সফরকালে নরেন্দ্র মোদি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য ছাড়াও শীর্ষ মার্কিন ব্যবসায়ী নেতৃত্ব এবং ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি, তিনি স্পেসএক্স এবং টেসলা প্রধান ইলন মাস্কের সঙ্গেও দেখা করতে পারেন।

ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈদ্যুতিক যানবাহনের সেক্টরের আয়তন বৃদ্ধির বিষয়ে আগ্রহী নরেন্দ্র মোদি। যদি ইলন মাস্ক ভারতে টেসলার একটা কারখানা স্থাপন করেন, তাহলে তিনি খুশিই হবেন।

তবে ট্রাম্প-মোদি সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব এবং কৌশলগত অংশীদারত্বের বিষয়ে আলাপ- আলোচনাকে ঢেকে দিতে পারে এমন একটা বাস্তবতা যেখানে দুই পক্ষই লেনদেনের বিষয়টাকে প্রকাশ্যে আনবেন। বিশেষত ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি একগুচ্ছ দাবি নিয়ে প্রস্তুত রয়েছেন।

তবে দিল্লি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভালোভাবেই চেনে, কারণ নরেন্দ্র মোদির বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের মেয়াদের সময়ে মোদি প্রশাসনের অংশ ছিলেন।

গত মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই এর প্রতিফলন দেখা গেছে। দিল্লির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে একাধিক সংকেত পাঠানো হয়েছে, যেমন- আমদানি শুল্ক কমানো, অনথিভুক্ত ভারতীয় অভিবাসীদের ফিরিয়ে নেওয়া এবং আরও বেশি পরিমাণে আমেরিকান তেল কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করা।

ইতিমধ্যেই কিছু ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো ১০৪ জন অনথিভুক্ত ভারতীয়কে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত আগাম পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভারতের কাছে সুনির্দিষ্ট দাবি জানানো থেকে বিরত রাখা এবং নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে উত্তেজনার শঙ্কা কমানো।

এরপরেও অবশ্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্য ঘাটতি (ট্রেড ডেফিসিট) হ্রাস করতে মোদিকে শুল্ক আরও কমানোর কথা বলতে পারেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি চার হাজার ৬০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। তবে একটা বাধা কিন্তু সুযোগও হয়ে উঠতে পারে।

অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানাতে পারেন নরেন্দ্র মোদি। যার উদ্দেশ্য হবে দুই পক্ষের শুল্কই হ্রাস করা।

Exit mobile version