Site icon দৈনিক দেশের সংবাদ deshersangbad.com

ঢাকার মোড়ে মোড়ে সহিংসতার ক্ষত

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল রাজধানী ঢাকা। দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত শুক্রবার মধ্যরাতে ঢাকাসহ সারাদেশে কারফিউ জারির পাশাপাশি সেনা মোতায়েন করে সরকার। সাত ঘণ্টা কারফিউ শিথিল হওয়ার পর গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সহিংসতার ক্ষত।

গতকাল রামপুরা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন পুলিশ বক্সটি যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভেতরে থাকা চেয়ার-টেবিল, খাতাপত্রসহ সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এমনকি আন্দোলনের সময় দেওয়া আগুনে অন্তত ১০-১৫টি পুলিশের মোটরসাইকেল, একাধিক পুলিশ ভ্যান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বক্সটির পাশেই কিছু পুলিশ সদস্য বসে থাকলেও তাদের চোখে মুখে ছিল আতঙ্ক।

রামপুরা-মালিবাগ এলাকায় গিয়েও পুলিশ বক্সসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন দেখা গেছে। গতকাল পর্যন্ত মালিবাগ রেলগেট থেকে আবুল হোটেল হয়ে রামপুরা পর্যন্ত মূল সড়কে গত কয়েক দিনের আন্দোলন ও সংঘর্ষের বিভিন্ন ক্ষতচিহ্ন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। সড়কের পাশে কোথাও উপড়ে ফেলা রোড ডিভাইডার, ইটের টুকরা ইত্যাদিও পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সড়কে গাড়ি চললেও মোছেনি ক্ষতগুলো।

রামপুরা এলাকার টিভি রোডের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনে এই এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ছিল। যে কারণে তাদের সংখ্যা বেশি থাকায় সেদিন পুলিশ অনেকটাই কোণঠাসা ছিল। শুরুতে পুলিশ গুলি করলেও এক পর্যায়ে তারা পিছু হটে এবং শিক্ষার্থীরা পুরো রামপুরা-মালিবাগ এলাকা দখল নেয়। গত ১৭ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৫দিন রামপুরা এলাকায় কোন পুলিশ বা অন্যকোনো বাহিনী ঢুকতে পারেনি। আন্দোলনকারীরা পুরো এলাকা তছনছ করেছে।

মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে অধিদপ্তরের পুরো ১০ তলা ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভবনের নিচে জেনারেটর, সার্ভার স্টেশনসহ সম্পূর্ণ ফ্লোরই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে আগুন দেওয়া হয়। তেজগাঁও ফায়ার স্টেশন থেকে একটি পানিবাহী গাড়ি, একটি ইঞ্জিনবাহী গাড়ি এবং একটি অ্যাম্বুলেন্সবাহী গাড়ি রওনা হয়। উত্তেজিত জনতা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে গাড়িটি আটকে ভাঙচুর করে। অ্যাম্বুলেন্সটি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হন। এর পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডের একটি আগুনের ঘটনায় পানিবাহী ও পাম্পটানা গাড়ি দুটি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

মহাখালী এলাকার ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার মহাখালীর আমতলী মোড় থেকে বীর উত্তম একে খন্দকার সড়কে আন্দোলনকারী একদল যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে এগিয়ে আসে। তারা তিতুমীর কলেজের আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সামনে এসে ইটপাটকেল ছোড়ার পাশাপাশি সড়কে এবং ভবনটির প্রবেশ পথের সামনে থাকা কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পাশে থাকা গাড়িগুলোতে আগুন ধরে যায়। আধা ঘণ্টা জ্বলার পর আগুন ওই ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে।

Exit mobile version