এক দেশে ছিল তিনজন পাগল—পাগলা রতন, পাগলা যতীন আর পাগলা মতিন। তারা কেউ কারও চেয়ে কম নয়। গ্রামের মানুষ সবসময় তাদের নিয়ে মজা পায়, কারণ তাদের কাজকর্মে কিছুই ঠিকঠাক হয় না। একদিন হঠাৎ তিনজন মিলে এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিল—“এই যে, আমরা তো প্রতিদিন পাগলামি করি, আজ একটা নতুন কিছু করি! আজ থেকে আমরা এক দিনের জন্য রাজা হবো! আর কে হবে সেই রাজা? সবাই মিলে ঠিক করি।”
পাগলা রতন খুব তাড়াতাড়ি হাত তুলে বলল, “আমি হবো রাজা! আমার মাথায় সবসময় বড় বড় পরিকল্পনা ঘোরে। আমি হলে দেশের সব গাছের পাতা দিয়ে টাকা বানাব।”
পাগলা যতীন কিছুতেই মেনে নিতে চায় না। “তুই রাজা হবি? আমি হলে রাজ্যের সব মানুষের পেটে বেলুন ঢুকিয়ে একবারে হাওয়া ভরে দেবো। সবাই উড়ে বেড়াবে! রাজত্ব কাকে বলে আমি দেখাবো।”
পাগলা মতিন একটুও দেরি না করে বলল, “হুম! তোমাদের দুজনের চিন্তায় গরুরও হাসি পাবে। আমি হলে সব মুরগিকে সিংহ বানিয়ে দেবো। ভাবো, রাজ্যের চারপাশে সিংহের মতো গর্জন করছে মুরগি!”
তাদের মধ্যে তো শুরু হলো রাজা হওয়ার প্রতিযোগিতা। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি ছাড়তে রাজি নয়। শেষে সিদ্ধান্ত হলো, তিনজনই এক দিনের জন্য রাজা হবে, আর সবাই যার যার মতো রাজত্ব করবে।
প্রথম দিন রতন হলো রাজা। সে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রামের সব গাছের পাতা নিয়ে গিয়ে লোকজনকে বলল, “নাও, তোমাদের জন্য নতুন টাকায় বাজার করো।” সবাই হাসতে হাসতে পেটের ব্যথা ধরে। কিন্তু রতন খুবই সিরিয়াস! তার মতে, গাছের পাতাই আসল সম্পদ। তাই বাজারের দোকানির কাছে পাতা নিয়ে গেল, দোকানি তাকিয়ে বলল, “হ্যাঁ রে পাগলা, তোকে তো আজ চাঁদের রাজা করা উচিত ছিল!”
দ্বিতীয় দিন যতীন রাজা হলো। সে গ্রামের সবার পেটে বেলুন ঢুকিয়ে হাওয়া ভরার জন্য রেডি হয়ে গেল। সে বলল, “এবার দেখো, সবাই আকাশে উড়ে বেড়াবে!” সবাই তো আতঙ্কে পালাতে লাগল। পাগলা যতীন রাস্তায় হাঁক দিচ্ছে, “আরে পালিয়ে যাও কেন! এই উড়ে চলাটাই আসল রাজত্ব!”
তৃতীয় দিন এল মতিনের পালা। সে রাজ্যের সব মুরগিকে ধরে নিয়ে এসে সিংহ বানাতে লাগল। মুরগির মাথায় পাগড়ি পরিয়ে বলল, “এবার তোরা গর্জন কর, রাজ্যের লোক তোদের ভয়ে কাঁপবে!” মুরগিগুলো হতভম্ব হয়ে শুধু ডিম পাড়তে লাগল। মতিন চিৎকার করে বলল, “এই রাজ্যে সবাই বড় ভুল বুঝেছে!”
তিন দিনের শেষে তিনজনই রাজত্ব করতে করতে ক্লান্ত হয়ে আবার পুরনো পাগলামীতে ফিরে গেল। গ্রামের মানুষ তাদের এই নতুন পাগলামি দেখে এমন হাসি হাসল যে গ্রামের পুকুরে পা পিছলে পড়ে গেলেন বৃদ্ধ মজনু চাচা! তিন পাগল মিলে তাকে দেখে বলল, “দেখো, আমাদের রাজত্বে এমনকি পুকুরেও মানুষ রাজা হতে চায়!”
সেই থেকে ‘তিন পাগলের এক দিনের রাজা’ গল্পটা গ্রামের মানুষ বলে চলে, আর শোনার পর সবাই হাসতে হাসতে পেটের নাড়িভুড়ি বের হয়ে আসে!