দিনাজপুরে মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক পক্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা নারীকেন্দ্রিক ভাবনাগুলো আমাদের সমাজের পুরুষতান্ত্রিক গ-ি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি

জিন্নাত হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধি ॥
‘বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের পূর্বশর্ত নারী-পুরুষের সমতা’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার আয়োজনে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন এর মাধ্যমে সাংগঠনিক পক্ষ-২০২৪ এর উদ্বোধন করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর-২০২৪) ‘বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের পূর্বশর্ত নারী-পুরুষের সমতা’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার আয়োজনে সম্মানীত সদস্য হুসনে আরা সাত্তারের সদস্য নবায়নের মাধ্যমে ১৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর সাংগঠনিক পক্ষ-২০২৪-এর উদ্বোধন করা হয়েছে। সাংগঠনিক পক্ষ পালন উপলক্ষ্যে কর্মীসভা, সাংগঠনিক সফর, পেশাজীবী নারী-পুরুষের সাথে মতবিনিময়, তরুণীদের সাথে মতবিনিময়, সৃজনশীল কর্মসূচী, রচনা/বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখা।
শহরের মুন্সিপাড়া জেলা কার্যালয়ে বিকেল ৩ টায় সাংগঠনিক পক্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি ড. মারুফা বেগম-এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রুবিনা আকতার-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা শাখার সহ-সভাপতি মাহবুবা খাতুন, মিনতি ঘোষ, অর্চনা অধিকারী, মনোয়ারা সানু, সুমিত্রা বেশরা, গোলেনুর বেগম, লিগ্যাল এইড সম্পাদক গৌরী চক্রবর্তী, প্রচার সম্পাদক শুকলা কুন্ডু, সদস্য সিবানী উড়াও, মিনতি এক্কা, রেহেনা বেগম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, নারীর প্রতি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই শ্রেণীচেতনার ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কারণ পরিবারে পুরুষ যে আধিপত্য বিস্তার করে, এই আধিপত্যের মধ্যে থেকেই পরিবারের নারী অধিকার কোনো অর্থেই বিন্দুমাত্র কম নয়। নারীর পরিবারের দেখাশোনার ঊর্ধ্বে সন্তান লালন-পালনে যে শ্রম ও সময় ব্যয় করে, তা একজন পুরুষের পরিবারে যা অবদান, তার চেয়ে এক বিন্দুও কম নয়। এখানে নারীকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এ জন্যই আজ প্রশ্ন উঠেছে ‘বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের পূর্বশর্ত নারী-পুরুষের সমতা’।
বক্তারা বলেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা নারীকে শ্রেণীভুক্ত হিসেবে বিবেচনা করে। সে জন্য নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখোমুখি নয়। নারীকে দমিয়ে রাখার চেষ্টায় পুরুষ আধিপত্য বিস্তার করে রাখে। এমনকি ধর্মীয় রাজনৈতিক দল তাদের নানা রকম নীতির মধ্যে নারীকে জাহেলিয়াতের যুগে ঠেলে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। এভাবে সমাজ নারীর প্রতি যে অন্যায় কাজ সাংবিধানিকভাবে করে, সেটা কোনো সম্মানজনক উচ্চারণ নয়। এটাও বলা যায়, রাষ্ট্র অনেক সময় নারীর প্রতি সম-আচরণ করে না। ইয়াসমীনের মতো মেয়ে পুলিশের হাতে যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে। এমন উদাহরণ একটি নয়, আছে অনেক। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে শ্রেণীবিভাগ বেশ বড় আকারে রয়ে গেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা, পারিবারিক নির্যাতন, ফতোয়া দানসহ নানা বৈষম্য নারীর জীবন আষ্টেপৃষ্ঠে বন্দি করে রেখেছে। সব মিলিয়ে নারীকেন্দ্রিক ভাবনাগুলো আমাদের সমাজের পুরুষতান্ত্রিক গ-ি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।##

 

Exit mobile version