এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই
মিরসরাইয়ের পাহাড়ি জনপদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাড়ার নিম্ম মধ্যবিত্ত
পরিবারের সন্তান দীপক ত্রিপুরা (৪০)। সে উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ৫
নং ওয়ার্ডের গেড়ামারা সাইবেনির খিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাড়ার মন চন্দ্র
ত্রিপুরা ও ধন লক্ষী ত্রিপুরার পুত্র। চার ভাইয়ের মধ্যে সে সবার বড়। তাঁর বাবা
মন চন্দ্র ত্রিপুরা ছিলেন কৃষক। মা ধন লক্ষী ত্রিপুরা মানষিক প্রতিবন্ধী।
মেজ ভাই গোপাল ত্রিপুরা ও সেজ ভাই পানাই ত্রিপুরা শারীরিক প্রতিবন্ধী
এবং ছোট ভাই বিমল ত্রিপুরা দিনমজুর। করেরহাট কে.এম উচ্চ বিদ্যালয়
থেকে ২০০২ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী হয়েও
পরিবারের আর্থিক দৈন্যতার কারণে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়ে উঠেনি
তার। মাধ্যমিক স্কুল জীবন থেকে সে তার বাবার সাথে পাহাড়ে জুম চাষ ও
বাঁশ, লাকড়ি সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে
সংসারের হাল ধরে। যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা সেখানে
পড়াশোনার চিন্তা করা দূরহ। পরবর্তীতে তার বাবা দুরারোগ্য ব্লাড
ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে জীবনের কঠিন সময় পার করতে হয় পুরো পরিবারকে।
২০১৯ সালে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন তার বাবা, অপরদিকে
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পরে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মারা যায় তার
মা।
করেরহাট ইউনিয়নের বদ্ধ ভবানী এলাকায় সরকারি অনাবাদি জায়গায়
উপকারভোগীদের লেবু বাগান করে সাবলম্বী হতে দেখে সেখান থেকে
অনুপ্রেরণা পেয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং ২০১১ সালে নিজ এলাকায়
সরকারি অনাবাদি জায়গায় উপকারভোগী হিসেবে লেবু বাগান করে
সেই লেবু বিক্রি করে সংসার খরচ ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ যোগান
দিচ্ছে দীপক।
দীপক ত্রিপুরার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে। বড় ছেলে বাবুল ত্রিপুরা নিজামপুর
সরকারি কলেজে মানবিক বিভাগে এইচএসসি প্রথম বর্ষ, মেয়ে
সুবর্ণা ত্রিপুরা করেরহাট কেএম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ
থেকে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং ছোট ছেলে সাকিব
ত্রিপুরা একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জেএসসি পরীক্ষার্থী।
দীপক ত্রিপুরা বলেন, মাধ্যমিক স্কুল জীবনের শুরু থেকে প্রতিনিয়তই
নিজের জীবনের সাথে, পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে যুদ্ধ করে টিকে
আছি তবুও কখনো হার মানি নাই। বর্তমানে জুম চাষ ও লেবু বাগানে
আমরা স্বামী-স্ত্রী কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি, সংসার চালানো
এবং সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছি।
সাইবেনির খিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাড়ার হেডম্যান উষা ত্রিপুরা বলেন, আমার
পাড়ার মধ্যে দীপক ত্রিপুরা খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান যার পারিবারিক
অবস্থা খুবই করুণ। চার ভাইয়ের মধ্যে সে সবার বড় হওয়ায় এবং
সংসারের অভাব অনটনের কারণে বাবার সাথে হাল ধরে তাই বেশি
পড়াশোনা করতে পারেনি। সে অত্যন্ত ন¤্র ও খুব পরিশ্রমী। বর্তমানে সে
কৃষিকাজ ও লেবু বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
করেরহাট ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন,
সাইবেনির খিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাড়ার দীপক ত্রিপুরা জীবন যুদ্ধে লড়াই
করে জীবনযাপন করে আসছে। তাদের প্রতিদিনই জীবন ও জীবিকার জন্য
যুদ্ধ করতে হয়। অত্যন্ত করুন অবস্থার মধ্যদিয়ে তাদের জীবন যাপন।