মনির হোসেন,বরিশাল ব্যুরো ঃ নদীর নাব্যতা সংকট, ডুবোচরের কারণে -বরিশাল- চট্টগ্রাম রুটে
জাহাজ পরিচালনার উদ্যোগে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই রুটে জাহাজ চালাতে হলে কমপক্ষে দুটি
পয়েন্টে ড্রেজিং করা জরুরি। তা না হলে জাহাজ চালানো ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক হবে। জাহাজের
ধীরগতির কারণে রুটটি লাভজনক হবে নাদীর্ঘ আট বছর বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রাম-বরিশাল রুটে আবারও
জাহাজ পরিচালনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডাব্লিউটিসি)।
গত নভেম্বর থেকে জাহাজ পরিচালনার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। নৌপথ ড্রেজিংয়ের পর চলতি মাসে
জাহাজ চালানো শুরুর চিন্তা কর্তৃপক্ষের মাথায় রয়েছে।সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ
অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) ও বিআইডাব্লিউটিসির আট কর্মকর্তা
একটি জাহাজে গত ২ ডিসেম্বর পুরো ওই পথ পাড়ি দিয়ে নৌ রুটের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময়
ভোলার সেলিম বাজার টেক হুজুরের চর এলাকায় ডুবোচর ও ভাটির কারণে জাহাজটি প্রায় তিন ঘণ্টা
আটকে ছিল। জোয়ার আসার পর জাহাজ চালু করা সম্ভব হয়। এ ছাড়া বরিশালের কাছাকাছি চরমোনাই
এলাকায়ও নদীর পানির গভীরতা কম ছিল। বিশেষ করে ভাটির সময় এই পয়েন্ট দিয়ে জাহাজ চালানো সম্ভব
হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।নৌ রুট পর্যবেক্ষণ টিমের সদস্য, বিআইডাব্লিউটিএর নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, উচ্চ গতিতে জাহাজ চালানো সম্ভব না হলে চট্টগ্রাম-
বরিশাল রুটে জাহাজ পরিচালনা লাভজনক হবে না। বর্তমানে জোয়ার ও ভাটির বিপরীতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ
গতি তোলা সম্ভব মাত্র সাড়ে চার থেকে পাঁচ নটিক্যাল মাইল। জাহাজের গতি ভাটি ও জোয়ারের
বিপরীতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল থাকা উচিত।তবে বিআইডাব্লিউটিসির কর্মকর্তারা
জানিয়েছেন, তাঁদের পরীক্ষামূলক যাত্রায় জাহাজের গড় গতি ৭.২ নটিক্যাল মাইল রেকর্ড করা হয়েছে।
এসব কারণে চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল পৌঁছাতে সময় লেগেছে প্রায় ১৬ ঘণ্টা।বিআইডাব্লিউটিএর
কর্মকর্তা জানান, সেলিম বাজার টেক হুজুরের চর এলাকায় মাত্র দুই কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করা
হলে জাহাজ চালানো সম্ভব। এ ব্যাপারে বিআইডাব্লিউটিএ কাজ করছে। একইভাবে চরমোনাই
এলাকায়ও কাজ করা হবে।ড্রেজিংয়ের অবস্থা জানার জন্য বিআইডাব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি জেনে
জানাবেন বলেন। পরে তিনি আর টেলিফোন রিসিভ করেননি। এরপর গত শনিবার ওই বিভাগের একজন
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে
বলেন, সেলিম বাজার টেক হুজুরের চরে ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে তিন দিন ধরে। তবে জোয়ার ও ভাটায়
অতিরিক্ত স্রোতের কারণে দুই থেকে তিন ঘণ্টার বেশি কাজ করা সম্ভব হয় না। যেভাবে কাজ চলছে তাতে
৮-১০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। যে জায়গায় ড্রেজিং করা হচ্ছে তা মাত্র দুই কিলোমিটার
এলাকা।নৌ রুটটিতে চলাচলকারী আগের জাহাজগুলো জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০১২ সালে
চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। নতুন করে আবারও নৌ রুটটি চালু হলে চট্টগ্রামে বসবাস করা ভোলা ও
বরিশাল অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সমাপ্তি ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছেও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ইঞ্জিন
সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া একই ডকইয়ার্ডে নির্মিত নতুন জাহাজ এমভি তাজউদ্দিন আহমদ
সংস্থার কাছে রয়েছে। তাজউদ্দিন আহমদ বর্তমানে চট্টগ্রাম-হাতিয়া রুটে সপ্তাহে দুই দিন চলাচল
করছে।দুটি জাহাজের প্রতিটির প্রায় ২০০ টন পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি প্রায় ৮০০ যাত্রী বহন করার
ক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে তাজউদ্দিন আহমদে যাত্রীর আসন সাড়ে ৭০০ আর বারআউলিয়ায় ৮০০ আসন রয়েছে।
তাজউদ্দিন আহমদ জাহাজ নিয়েই গত ২ ডিসেম্বর কর্মকর্তারা রুটটি পর্যবেক্ষণ
করেন।বিআইডাব্লিউটিসি চট্টগ্রাম অফিসের ডিজিএম (কমার্শিয়াল) গোপাল চন্দ্র মজুমদার
জানিয়েছেন, আগে চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ-হাতিয়া হয়ে বরিশাল জাহাজ পরিচালনা করা হতো।
বর্তমানে সন্দ্বীপের পূর্বাংশে চর জেগে ওঠায় এখান দিয়ে জাহাজ চালানো কঠিন। তাই নতুন করে
জাহাজ পরিচালনা করা হলে সন্দ্বীপকে বাদ দিয়ে হাতিয়া হয়ে চালানো হবে। সন্দ্বীপের জন্য আলাদা
জাহাজের ব্যবস্থা রয়েছে।বিআইডাব্লিউটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন করে জাহাজ পরিচালনায়
আমরা নোয়াখালীতে নতুন একটি রুটের সম্ভাব্যতা যাচাই করছি, যা আগে কখনো ছিল না। এটা
হচ্ছে নোয়াখালীর বয়ারচর চেয়ারম্যান ঘাট।’চট্টগ্রাম-ভোলা-বরিশাল জাহাজ সার্ভিস চালুর
উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় সমিতি চট্টগ্রামের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন
ও মহাসচিব আফজাল হোসেন। বরিশাল বিভাগীয় ছাত্র সমিতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি
অমিত মাহামুদ রকি এই সিদ্ধান্তকে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেছেন।বরিশাল
বিভাগীয় চট্টগ্রাম সমিতির মহাসচিব আফজাল হোসেন বলেন, কর্ম উদ্দেশ্যে বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের
প্রায় সাত থেকে আট লাখ লোক চট্টগ্রামে অবস্থান করেন। তাঁদের বিভিন্ন সময় ভোলা-বরিশাল অঞ্চলে
যাতায়াত করতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কারণ তাঁদের হয় চাঁদপুর না হয় লক্ষ্মীপুর জেলার
মজুচৌধুরীর ঘাট হয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে ভেঙে ভেঙে যাওয়ার কারণে আর্থিক,
শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক ধকল সইতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি জাহাজ পরিচালনা করা হলে
দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হবে।বিসিটি ডেস্কঃ নদীর নাব্যতা সংকট, ডুবোচরের কারণে চট্টগ্রাম-
বরিশাল রুটে জাহাজ পরিচালনার উদ্যোগে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই রুটে জাহাজ চালাতে হলে
কমপক্ষে দুটি পয়েন্টে ড্রেজিং করা জরুরি। তা না হলে জাহাজ চালানো ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক হবে।
জাহাজের ধীরগতির কারণে রুটটি লাভজনক হবে না।দীর্ঘ আট বছর বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রাম-বরিশাল
রুটে আবারও জাহাজ পরিচালনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন
(বিআইডাব্লিউটিসি)। গত নভেম্বর থেকে জাহাজ পরিচালনার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। নৌপথ
ড্রেজিংয়ের পর চলতি মাসে জাহাজ চালানো শুরুর চিন্তা কর্তৃপক্ষের মাথায় রয়েছে।সংশ্লিষ্ট দপ্তরের
কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) ও
বিআইডাব্লিউটিসির আট কর্মকর্তা একটি জাহাজে গত ২ ডিসেম্বর পুরো ওই পথ পাড়ি দিয়ে
নৌ রুটের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় ভোলার সেলিম বাজার টেক হুজুরের চর এলাকায় ডুবোচর ও
ভাটির কারণে জাহাজটি প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে ছিল। জোয়ার আসার পর জাহাজ চালু করা সম্ভব হয়।
এ ছাড়া বরিশালের কাছাকাছি চরমোনাই এলাকায়ও নদীর পানির গভীরতা কম ছিল। বিশেষ করে ভাটির সময়
এই পয়েন্ট দিয়ে জাহাজ চালানো সম্ভব হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নৌ রুট পর্যবেক্ষণ টিমের সদস্য, বিআইডাব্লিউটিএর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা
জানান, উচ্চ গতিতে জাহাজ চালানো সম্ভব না হলে চট্টগ্রাম-বরিশাল রুটে জাহাজ পরিচালনা লাভজনক
হবে না। বর্তমানে জোয়ার ও ভাটির বিপরীতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতি তোলা সম্ভব মাত্র সাড়ে চার থেকে
পাঁচ নটিক্যাল মাইল। জাহাজের গতি ভাটি ও জোয়ারের বিপরীতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল
থাকা উচিত।তবে বিআইডাব্লিউটিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের পরীক্ষামূলক যাত্রায়
জাহাজের গড় গতি ৭.২ নটিক্যাল মাইল রেকর্ড করা হয়েছে। এসব কারণে চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল
পৌঁছাতে সময় লেগেছে প্রায় ১৬ ঘণ্টা।বিআইডাব্লিউটিএর কর্মকর্তা জানান, সেলিম বাজার
টেক হুজুরের চর এলাকায় মাত্র দুই কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করা হলে জাহাজ চালানো সম্ভব। এ
ব্যাপারে বিআইডাব্লিউটিএ কাজ করছে। একইভাবে চরমোনাই এলাকায়ও কাজ করা হবে।ড্রেজিংয়ের
অবস্থা জানার জন্য বিআইডাব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর
রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি জেনে জানাবেন বলেন। পরে তিনি আর টেলিফোন
রিসিভ করেননি। এরপর গত শনিবার ওই বিভাগের একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কাছে বিষয়টি
সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সেলিম বাজার টেক হুজুরের চরে
ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে তিন দিন ধরে। তবে জোয়ার ও ভাটায় অতিরিক্ত স্রোতের কারণে দুই থেকে তিন
ঘণ্টার বেশি কাজ করা সম্ভব হয় না। যেভাবে কাজ চলছে তাতে ৮-১০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। যে
জায়গায় ড্রেজিং করা হচ্ছে তা মাত্র দুই কিলোমিটার এলাকা।নৌ রুটটিতে চলাচলকারী আগের
জাহাজগুলো জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০১২ সালে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। নতুন করে আবারও নৌ
রুটটি চালু হলে চট্টগ্রামে বসবাস করা ভোলা ও বরিশাল অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সমাপ্তি ঘটবে বলে
আশা করা হচ্ছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত রুটে জাহাজ পরিচালনার জন্য আগের জাহাজ
এমভি বারআউলিয়াকে মুন্সীগঞ্জের থ্রি অ্যাঙ্গেল ডকইয়ার্ড মেরামত ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ইঞ্জিন
সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া একই ডকইয়ার্ডে নির্মিত নতুন জাহাজ এমভি তাজউদ্দিন আহমদ
সংস্থার কাছে রয়েছে। তাজউদ্দিন আহমদ বর্তমানে চট্টগ্রাম-হাতিয়া রুটে সপ্তাহে দুই দিন চলাচল
করছে।দুটি জাহাজের প্রতিটির প্রায় ২০০ টন পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি প্রায় ৮০০ যাত্রী বহন করার
ক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে তাজউদ্দিন আহমদে যাত্রীর আসন সাড়ে ৭০০ আর বারআউলিয়ায় ৮০০ আসন রয়েছে।
তাজউদ্দিন আহমদ জাহাজ নিয়েই গত ২ ডিসেম্বর কর্মকর্তারা রুটটি পর্যবেক্ষণ
করেন।বিআইডাব্লিউটিসি চট্টগ্রাম অফিসের ডিজিএম (কমার্শিয়াল) গোপাল চন্দ্র মজুমদার
জানিয়েছেন, আগে চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ-হাতিয়া হয়ে বরিশাল জাহাজ পরিচালনা করা হতো।
বর্তমানে সন্দ্বীপের পূর্বাংশে চর জেগে ওঠায় এখান দিয়ে জাহাজ চালানো কঠিন। তাই নতুন করে
জাহাজ পরিচালনা করা হলে সন্দ্বীপকে বাদ দিয়ে হাতিয়া হয়ে চালানো হবে। সন্দ্বীপের জন্য আলাদা
জাহাজের ব্যবস্থা রয়েছে।বিআইডাব্লিউটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন করে জাহাজ পরিচালনায়
আমরা নোয়াখালীতে নতুন একটি রুটের সম্ভাব্যতা যাচাই করছি, যা আগে কখনো ছিল না। এটা
হচ্ছে নোয়াখালীর বয়ারচর চেয়ারম্যান ঘাট।’চট্টগ্রাম-ভোলা-বরিশাল জাহাজ সার্ভিস চালুর
উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় সমিতি চট্টগ্রামের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন
ও মহাসচিব আফজাল হোসেন। বরিশাল বিভাগীয় ছাত্র সমিতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি
অমিত মাহামুদ রকি এই সিদ্ধান্তকে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেছেন।বরিশাল
বিভাগীয় চট্টগ্রাম সমিতির মহাসচিব আফজাল হোসেন বলেন, কর্ম উদ্দেশ্যে বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের
প্রায় সাত থেকে আট লাখ লোক চট্টগ্রামে অবস্থান করেন। তাঁদের বিভিন্ন সময় ভোলা-বরিশাল অঞ্চলে
যাতায়াত করতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কারণ তাঁদের হয় চাঁদপুর না হয় লক্ষ্মীপুর জেলার
মজুচৌধুরীর ঘাট হয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে ভেঙে ভেঙে যাওয়ার কারণে আর্থিক,
শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক ধকল সইতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি জাহাজ পরিচালনা করা হলে
দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হবে।বিসিটি ডেস্কঃ নদীর নাব্যতা সংকট, ডুবোচরের কারণে চট্টগ্রাম-
বরিশাল রুটে জাহাজ পরিচালনার উদ্যোগে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই রুটে জাহাজ চালাতে হলে
কমপক্ষে দুটি পয়েন্টে ড্রেজিং করা জরুরি। তা না হলে জাহাজ চালানো ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক হবে।
জাহাজের ধীরগতির কারণে রুটটি লাভজনক হবে না।দীর্ঘ আট বছর বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রাম-বরিশাল
রুটে আবারও জাহাজ পরিচালনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন
(বিআইডাব্লিউটিসি)। গত নভেম্বর থেকে জাহাজ পরিচালনার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। নৌপথ
ড্রেজিংয়ের পর চলতি মাসে জাহাজ চালানো শুরুর চিন্তা কর্তৃপক্ষের মাথায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) ও
বিআইডাব্লিউটিসির আট কর্মকর্তা একটি জাহাজে গত ২ ডিসেম্বর পুরো ওই পথ পাড়ি দিয়ে
নৌ রুটের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় ভোলার সেলিম বাজার টেক হুজুরের চর এলাকায় ডুবোচর ও
ভাটির কারণে জাহাজটি প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে ছিল। জোয়ার আসার পর জাহাজ চালু করা সম্ভব হয়।
এ ছাড়া বরিশালের কাছাকাছি চরমোনাই এলাকায়ও নদীর পানির গভীরতা কম ছিল। বিশেষ করে ভাটির সময়
এই পয়েন্ট দিয়ে জাহাজ চালানো সম্ভব হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরানৌ রুট পর্যবেক্ষণ
টিমের সদস্য, বিআইডাব্লিউটিএর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, উচ্চ গতিতে
জাহাজ চালানো সম্ভব না হলে চট্টগ্রাম-বরিশাল রুটে জাহাজ পরিচালনা লাভজনক হবে না। বর্তমানে
জোয়ার ও ভাটির বিপরীতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতি তোলা সম্ভব মাত্র সাড়ে চার থেকে পাঁচ নটিক্যাল
মাইল। জাহাজের গতি ভাটি ও জোয়ারের বিপরীতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল থাকা উচিততবে
বিআইডাব্লিউটিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের পরীক্ষামূলক যাত্রায় জাহাজের গড় গতি ৭.২
নটিক্যাল মাইল রেকর্ড করা হয়েছে। এসব কারণে চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল পৌঁছাতে সময় লেগেছে
প্রায় ১৬ ঘণ্টা।বিআইডাব্লিউটিএর কর্মকর্তা জানান, সেলিম বাজার টেক হুজুরের চর এলাকায় মাত্র
দুই কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করা হলে জাহাজ চালানো সম্ভব। এ ব্যাপারে বিআইডাব্লিউটিএ
কাজ করছে। একইভাবে চরমোনাই এলাকায়ও কাজ করা হবেড্রেজিংয়ের অবস্থা জানার জন্য
বিআইডাব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমানের সঙ্গে
যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি জেনে জানাবেন বলেন। পরে তিনি আর টেলিফোন রিসিভ করেননি।
এরপর গত শনিবার ওই বিভাগের একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে
চাইলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সেলিম বাজার টেক হুজুরের চরে ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে
তিন দিন ধরে। তবে জোয়ার ও ভাটায় অতিরিক্ত স্রোতের কারণে দুই থেকে তিন ঘণ্টার বেশি কাজ করা
সম্ভব হয় না। যেভাবে কাজ চলছে তাতে ৮-১০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। যে জায়গায় ড্রেজিং
করা হচ্ছে তা মাত্র দুই কিলোমিটার এলাকা।নৌ রুটটিতে চলাচলকারী আগের জাহাজগুলো জরাজীর্ণ ও
ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০১২ সালে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। নতুন করে আবারও নৌ রুটটি চালু হলে
চট্টগ্রামে বসবাস করা ভোলা ও বরিশাল অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সমাপ্তি ঘটবে বলে আশা করা
হচ্ছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত রুটে জাহাজ পরিচালনার জন্য আগের জাহাজ এমভি
বারআউলিয়াকে মুন্সীগঞ্জের থ্রি অ্যাঙ্গেল ডকইয়ার্ড মেরামত ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ইঞ্জিন
সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া একই ডকইয়ার্ডে নির্মিত নতুন জাহাজ এমভি তাজউদ্দিন আহমদ
সংস্থার কাছে রয়েছে। তাজউদ্দিন আহমদ বর্তমানে চট্টগ্রাম-হাতিয়া রুটে সপ্তাহে দুই দিন চলাচল
করছে।দুটি জাহাজের প্রতিটির প্রায় ২০০ টন পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি প্রায় ৮০০ যাত্রী বহন করার
ক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে তাজউদ্দিন আহমদে যাত্রীর আসন সাড়ে ৭০০ আর বারআউলিয়ায় ৮০০ আসন রয়েছে।
তাজউদ্দিন আহমদ জাহাজ নিয়েই গত ২ ডিসেম্বর কর্মকর্তারা রুটটি পর্যবেক্ষণ
করেন।বিআইডাব্লিউটিসি চট্টগ্রাম অফিসের ডিজিএম (কমার্শিয়াল) গোপাল চন্দ্র মজুমদার
জানিয়েছেন, আগে চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ-হাতিয়া হয়ে বরিশাল জাহাজ পরিচালনা করা হতো।
বর্তমানে সন্দ্বীপের পূর্বাংশে চর জেগে ওঠায় এখান দিয়ে জাহাজ চালানো কঠিন। তাই নতুন করে
জাহাজ পরিচালনা করা হলে সন্দ্বীপকে বাদ দিয়ে হাতিয়া হয়ে চালানো হবে। সন্দ্বীপের জন্য আলাদা
জাহাজের ব্যবস্থা রয়েছে।বিআইডাব্লিউটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন করে জাহাজ পরিচালনায়
আমরা নোয়াখালীতে নতুন একটি রুটের সম্ভাব্যতা যাচাই করছি, যা আগে কখনো ছিল না। এটা
হচ্ছে নোয়াখালীর বয়ারচর চেয়ারম্যান ঘাট।’চট্টগ্রাম-ভোলা-বরিশাল জাহাজ সার্ভিস চালুর
উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় সমিতি চট্টগ্রামের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন
ও মহাসচিব আফজাল হোসেন। বরিশাল বিভাগীয় ছাত্র সমিতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি
অমিত মাহামুদ রকি এই সিদ্ধান্তকে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেছেন।বরিশাল
বিভাগীয় চট্টগ্রাম সমিতির মহাসচিব আফজাল হোসেন বলেন, কর্ম উদ্দেশ্যে বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের
প্রায় সাত থেকে আট লাখ লোক চট্টগ্রামে অবস্থান করেন। তাঁদের বিভিন্ন সময় ভোলা-বরিশাল অঞ্চলে
যাতায়াত করতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কারণ তাঁদের হয় চাঁদপুর না হয় লক্ষ্মীপুর জেলার
মজুচৌধুরীর ঘাট হয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে ভেঙে ভেঙে যাওয়ার কারণে আর্থিক,
শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক ধকল সইতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি জাহাজ পরিচালনা করা হলে
দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হবে।