নীরবতার শক্তিশালী প্রতিঘাত

 

জীবনের অধিকাংশ চ্যালেঞ্জ অনায়াসে মোকাবেলা করতে পারবেন যদি চুপ থাকতে পারেন। কেউ অবহেলা করেছে, ঠকিয়েছে কিংবা নিন্দা করেছে আরও- চুপ থাকুন, অপলক দেখুন। দেখবেন আপনার পক্ষের হয়ে কেউ না কেউ প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে। কেউ আপনার হয়ে সঠিক জবাব দিয়ে দিয়েছে। চুপ থেকে কেবল মোক্ষম সময়ের অপেক্ষা করুন। তীর্যক কথা কানে এলেও চুপ করে থাকুন। যতটা পারেন এড়িয়ে যান। আপনাকে নিয়ে যত কথা আড়ালে হয় তা শুনেও প্রতিক্রিয়া না দেখালে ভালো থাকবেন। কত-শত বাজে কথা শুনতে হবে, অপবাদ মানতে হবে। সব কথার যদি প্রতিউত্তরে কথাই বলে যান তবে একজীবন তো কেবল কথা বলেই কাটাতে হবে। অথচ করার মত আপনার অনেক কাজ বাকি।

 

কিছু কথার উত্তর কাজের মাধ্যমে দিন। তবে সবচেয়ে ভালো জবাব দিতে পারেন চুপ থেকে। যারা আপনাকে নিয়ে সমালোচনা করে, নিন্দার আসরে বসে তাদের আলাপ শুনে হাবভাব পরিবর্তন না করলে তারা ক্লান্ত হয়ে ফিরে যাবে। পরাজয়ের গ্লানিতে সম্পূর্ণরূপেআত্মসমর্পণ করবে। যখন নিন্দুকের কথা নিয়ে মাতামাতি না করবেন তখন তারা হতাশ হয়ে হারিয়ে যাবে। একটি কথার উত্তর দিলে আরও পাঁচ কথা নিয়ে হাজির হবে। বাজে কথায় নিজেকে যত না জড়ানো যায় ততই মঙ্গল। মন্দ কথার সঙ্গ দিতে গেলে আপনার বুকের বন্ধ দরজা খুলে খারাপ কিছু বের হয়ে আসবে। আপনি যেন কখনোই তাদের মত না হন- যাদের লোকে ভালো মানুষ হিসেবে জানে না। চেনে না কল্যাণকর হিসেবে।

 

আপনি জানেনও না কিংবা আপনি ভাবেনও না- এমন অনেকে আপনাকে নিয়ে অনেক কিছু রটায়। যাতে সত্য সামান্য অথচ মিথ্যা সম্যক। তাদের সেসব কথা কানে এলে যদি জবাব দিতে চান বা যান তবে সময় অপচয় করবেন। আপনার নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, সেখানে পৌঁছানোর তাড়া আছে। যদি থেকে থাকে তবে চুপ হয়ে যান। নিরালায় কাজ করে যান। যারা কথায় কথায় হৃদয়ে তীর মারে, খোঁচা মেরে আরাম করে, তাদের সাথে তর্কে জড়ালে আপনিও মূর্খ হবেন। আপনার মাথার ওপরে অবস্থান করে যারা যারা কথা দিয়ে চেপে ধরবে, আপনাকে গন্তব্য হারা করতে সব আয়োজন সারবে, তাদের নিন্দা শুনে থেমে যাবেন না। ধমক খেয়ে পথ পাল্টাবেন না। ভয় পেয়ে চিৎকার করবেন না। কিছু কথা গায়ে মেখে নিন। মাখতে শিখুন। উত্তর প্রদানের বদলে হাসিমুখ বাড়িয়ে দিয়ে এড়িয়ে যান। সময় একদিন আপনার হয়ে বদলা নেবে।

 

যারা চুপ থাকে তারা হারে না কিংবা হারায় না। যারা অধিক বলে তারা অধিকাংশ সময় ভুল বলে। যারা খোঁটা দেয় তাদের আচরণের পাল্টাপাল্টিতে আপনি কথা দিয়ে খোঁচা দিয়েন না। কখনো কখনো চুপ থেকেও আপনি অবলীলায় তর্কে জিতে যাবেন। যারা বেশি বলে তারা সব সঠিক বলে- এমন ধারণা ঠিক না। বরং বেশি বলার কারণে অধিকাংশ সময় বিপত্তি বাঁধে। বলার চেয়ে শোনার মাঝে কৃতিত্ব বেশি। যারা শোনে তারা বেশি জানে। বলার মত দুটো কথাই অনেককিছু। যারা অন্যকে কথায় কথায় দমাতে চায়, তারাই একসময় পুরোদস্তুর দমে যায়। মানাতে এসে অনেকেই মানতে বাধ্য হয়।

 

কুতর্কে যারা অংশগ্রহণ করে না তারা ব্যক্তিত্ব নিয়ে বাঁচে। মূর্খের সাথে তর্ক-বিতর্কেও অংশগ্রহণ করা ঠিক নয়। বলতে ইচ্ছা করছে তবুও অনেক শব্দ গিলে নিন। বলার চেয়ে না বলাও কখনো কখনো ঢের বেশি শক্তিমান। যারা বেশিবেশি শোনে এবং খুব কম বলে সমাজ তাদের বোধবুদ্ধিযুক্ত মানুষ হিসেবে মানে। সব কথা নিজের দিকে টেনে নিয়ে আড়ি বাঁধালে দুনিয়ায় বন্ধু বলে আর কেউ থাকবে না। অথচ বিশ্বাস করা যায়, আস্থা রাখা যায়- তার প্রতি যিনি কেবল না শুনিয়ে বরং অধিক শোনে। একটু ধৈর্য ধারণ করি- আমার কথা অন্য কেউ বলুক। চুপ থাকাও যে ভাষার চেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র- অবমাননাকারী এবং অপমানকারী সেটা শক্তভাবেই দেখুক। কেউ যাতে কথার স্রোতে ব্যথা না পায়- অন্তত সে খেয়াল থাকুক।

 

রাজুআহমেদ,  প্রাবন্ধিক।

raju69alive@gmail.com

Exit mobile version