পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার। শীতের তীব্রতা হ্রাস পেয়েছে। বেড়েছে পর্যটক। তবে হোটেলে রুম না পেয়ে ফিরে গেছে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার পর্যটক। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও ১৮ ফেব্রুয়ারি শিবরাত্রীব্রত, ১৯ ফেব্রুয়ারি শবে ই মেরাজ। এর মাত্র একদিন পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সব মিলিয়ে অঘোষিতভাবে পাঁচ দিনের ছুটিতে পর্যটকে ভরপুর কক্সবাজার। বর্তমানে কক্সবাজারে আড়াই লাখ পর্যটক অবস্থান করছে কক্সবাজারে। কোনো কোনো হোটেলে ৮-১০ জন করে উঠেছে প্রতিটি কক্ষে।
সাতটি জাহাজে করে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করছেন দৈনিক পাঁচ থেকে ছয় হাজার পর্যটক। কোথায়ও কোনো নিরাপত্তার ঘাটতি নেই। বসন্তের রুদ্র উজ্জ্বল দিন, সকাল-সন্ধ্যা ও রাতের মৃদুশৈত্য প্রবাহের এই সময় কে মিস করতে চায়? তাই তো এতো পর্যটকের আনাগোনা। পর্যটন মৌসুমের শেষ কয়েকদিনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় করছেন পর্যটকরা। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ভিড় জমিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুরা। সব মিলিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে পর্যটকের তিলধারণের জায়গা নেই। লাখ পর্যটকের ভিড়ে এখন জমজমাট কক্সবাজার।
গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটিকে ঘিরে কক্সবাজার সৈকতে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। শুক্রবার-শনিবার তো আছেই। ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজারে কোনো হোটেল-মোটেল খালি নেই। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এই পাঁচ দিন গড়ে দুই লাখ পর্যটক থাকবে কক্সবাজারে। ফলে এ পাঁচ দিনে পর্যটন খাতে কম করে হলে ও এক হাজার ১০ কোটি টাকার ও বেশী ব্যবসা হতে পারে। দশ লাখ পর্যটক প্রতিজন মাত্র ১০ হাজার টাকা ব্যয় করলেও দিন শেষে পাঁচ দিনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১০ কোটি টাকা। কোনো কোনো পর্যটক দৈনিক ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করে থাকেন।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ছাড়া ও ইনানী, হিমছড়ি, পাটোয়ারটেক, সেন্টমার্টিন, রামু বৌদ্ধমন্দির,মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কসহ পার্শ্ববর্তী পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে আসতে মাথা পিছু ৮-১০ হাজার টাকার কম খরচ হবে না।
অর্থনীতিবিদ প্রফেসার সুকুমার দত্তের দেওয়া তথ্যানুযায়ী পর্যটকেরা এখানে আসেন দু’হাতখুলে খরচ করে দেখতে চায় নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আর চায় নিরাপদ পরিবেশ।
গতকাল বিকেলে কক্সবাজার শহরের ডলফিন মোড়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা শত শত পর্যটক। সকাল থেকে হোটেল-মোটেলে চেষ্টা করেও তারা রুম পাননি।
পর্যটক সোবহান, নোমান, সাহেলী, রুমা ও আনোয়ারা বলেন, আমরা রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে কক্সবাজার এসেছি। আসার সময়ও রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়েছি। আবার এখানে এসে দেখছি কোনো হোটেলে রুম নেই।’
ঢাকা নবাবপুর থেকে আসা রাফেয়া ও তার স্বামী নওশেদ বলেন, সকালে বাস থেকে কক্সবাজার কলাতলী ডলফিন মোড়ে নেমেছি। এরপর শালিক নামক একটি রেস্তোরাঁয় সকালের নাশতা করেছি। এরপর রুম খুঁজতে গিয়ে দেখি কোথায়ও রুম খালি নেই। অনেক খোঁজাখুজির পর কলাতলীতেই একটি অভিজাত হোটেলে রুম পেয়ে যাই, আমরা ছিলাম ২৫ জন কিন্তু রুম পাওয়া গেল মাত্র ৫ টা।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল অফিসার্স ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, সব হোটেলে রুম ৮৫-৯০ বুকিং আছে। আপদকালীন ১০ শতাংশ রুম খালি আছে। এক সপ্তাহ আগেই সব রুম বুকিং হয়ে গেছে।
সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটকদের দায়িত্বে নিয়োজিত সেফগার্ড কর্মী রবিউল আলম বলেন, গতকাল থেকে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের চাপ বেশি, যা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এত মানুষ সমুদ্রসৈকতে নেমে যায় আমাদের পক্ষে দায়িত্ব পালন কষ্ট হয়ে পড়ে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজারের সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বর্তমানে দুই লাখের বেশি পর্যটক রয়েছে। কমপক্ষে চার হাজার পর্যটক গতকাল সেন্ট মার্টিন গেছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলোয় তাদের সদস্যরা তৎপর রয়েছে।
কলাতলী হোটেল মোটেল জোনের সভাপতি, মুখিম খাঁন বলেন,আমরা মৌসুমের শেষপ্রান্তে চলে এসেছি, এ সময় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকলে সাপ্তাহিক , ঐচ্ছিক ও সরকারী ছুটি না থাকলে ও মোটামুটি পর্যটক থাকে আশানুরূপ। তবে এ বছর এ সময়ে অন্যান্য যে কোন বছরের তুলনায় পর্যটক বেশী।এতে আমরা সন্তোষ্ট। একদিকে সেবা দিতে পারছি অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা ২৪ ঘণ্টা মাঠে আছি। যেখানে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেখানে অভিযান চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা প্রস্তুত কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মুহম্মদ শাহিন ইমরান বলেন, শীত শেষ হয়ে আসায় মৌসুমে অন্তিম সময় কক্সবাজারে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও হয়রানি রোধে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে মাঠে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।