প্রেস বিজ্ঞপ্তি
রাজধানী পল্লবী থানার পুলিশ কর্তৃক সংগঠিত হত্যাকান্ডে বিচার চাওয়ায়
নিরপরাধ কলেজ পড়ুয়া দীপা আক্তার ও ৬ মাসের শিশুর মা নিপা আক্তারের নামে
দেওয়া মিথ্যা মাদক মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে সংবাদ সন্মেলন করেছে
নির্যাতিত পরিবার।
দীপা ও নিপার বোন পৃথিবী সংবাদ সন্মেলনে বলেন, আজ আমরা সব হারিয়ে আপনাদের
কাছে এসেছি পল্লবীর নরপশু খ্যাত ওসি পারভেজ ইসলাম ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে
বিচার নিয়ে। আপনাদের কাছে আমাদের দাবী, এই নরপশুদের কিছু না হলেও, জাতীর
কাছে অন্তত তুলে ধরুন আমাদের উপর হওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের গল্প।
আমরা অবাঙ্গালী বিহারী জাতিগোষ্টির মানুষ। জন্ম আমাদের এই দেশে হলেও, এই
বিহারী হওয়াটাই আমাদের জন্য পাপ হয়েছে। মান সন্মান, সম্পদ ও জীবন রক্ষা
করতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।
আপনারা জানেন, পল্লবী থানায় সোর্স কতটা ভয়াবহ। পল্লবী থানার সোর্স তারেক
পুলিশের হয়ে চাঁদা দাবী করে। কিন্তু, আমরা হত দরিদ্র। কি করে তাকে চাদা
দিব? চাদা দিতে না পারায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারী তারিখ রাত ১০টায় আমাদের বাসায়
আসে। আমার মা হার্টে রোগী ছিল। কোন কারণ ছাড়া সোর্স তারেক আমার ভাই
ডলারকে এএসআই হরিদান, এএসআই হুমায়ন কবির হাওলাদারসহ কয়েকজন পুলিশ নিয়ে
আক্রমণ করে।এএসআই হরিদাস এসআই তাপসের টিমের সদস্য। তারা বাসা থেকে আমার
ভাইকে বিনা কারণে নিয়ে যেতে চায়। আমার হার্টের রোগী মা তাতে বাধা দিলে
তাকেও ধাক্কা দেয়। এতে তিনি জ্ঞান হারালে, আমার ভাইকে রেখে ভয়ে পালিয়ে
যায়। সারা রাতে আমার মায়ের আর জ্ঞান ফিরেনি। রাত ৩টার দিকে আমার মায়ের
মৃত্যু হয়। পুলিশ পোষ্ট মোর্টেম ছাড়াই আমার মাকে দ্রুত কবর দেওয়ার জন্য
চাপ দেয়। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে দ্রুত আমার মায়ের কবর দেই।
পরবর্তীতে থানায় কোন বিচার না পেয়ে আমরা যখন আদালতে হত্যা মামলা করার
প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখনই কোন সূত্রে পুলিশ খবর পেয়ে যায়। গত ২ মার্চ
বিকেলে আবার আমাদের বাসায় হামলা চালায়। আমার কলেজ পড়ুয়া বোন দীপা আক্তার
(ফেইসবুক আইডি Anahita Khanom) ফেইসবুক থেকে লাইভে যায়। তখন এসআই আনোয়ার,
এএসআই হুমায়ন কবির হাওলাদার, এএসআই হরিদান, আমার বোনদের বুকে হাত দেয়। যা
অনাহিতা খানম আইডিতে লাইভে ছিল। কিন্তু, পরবর্তীতে পুলিশ মোবাইলটি কেড়ে
নিয়ে ভিডিওটি ডিলিট করে দেয়। আমরা দাবী জানাচ্ছি, ভিডিওটি ফেইসবুক থেকে
উদ্ধার করা হোক। তাহলেই প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে।
আমার বোন দীপা আক্তার গরীব ঘরের মেধাবী ছাত্রী। গত ৫ মার্চ থেকে আইডিয়াল
কলেজে তার ক্লাস শুরু হয়েছে। কলেজ জীবনের রঙ্গিন স্বপ্ন যখন আমার বোন
দেখছে, তখনই তাকে গ্রেফতার করা হলো সম্পূর্ণ বিনা কারণে। সেই সাথে করা
হয়েছে তার শ্লিতাহানী। প্রকাশ্যেই পুলিশ যেখানে এমন কাজ করেছে, থানায়
নিয়ে নির্যাতন করার সময় আরো কত কিছু করেছে। তাই বলছে এলাকার লোকজন। এই
বোনের বিয়ে আমরা দিব কি করে?
ঐদিন আমার বোনের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলায় উল্লেখ করেছে মহিলা পুলিশও
উপস্থিত ছিল। আপনারা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করুন, কোন মহিলা পুলিশ ছিল কিনা।
কোন নারী পুলিশ ছাড়াই রিপা আক্তার ও দীপা আক্তার নামে আমার দুই বোন ও এক
ভাই ডলারকে নিয়ে যায়। নেওয়ার সময় থেকেই পুলিশ আমার ভাই-বোনদের অমানুষিক
নির্যাতন করতে থাকে। নির্যাতনের ফলে আমার ভাই গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে যায়
বলে আমরা শুনেছি। তাকে হসপিটালেও নেওয়া হয়েছিল বলে শুনেছি। আর আমার বোন
রিপা আক্তার ৬ মাসের বুকের দুধ খাওয়া শিশু সন্তানের মা। আমার বোনকে পুলিশ
গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই আমার বোনের সন্তান অসুস্থ্য হয়ে গেছে।
২ মার্চ রাতে আমাদের সোর্সের মাধ্যমে খবর দেয়, পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা
মামলা না করার শর্তে ও ৫ লাখ টাকা দিলে সবাইকে ছেড়ে দিবে। কিন্তু, আমরা
এতো টাকা কোথায় পাব?
টাকা না দিতে পারায় এবং আমরা যাতে মামলা করতে না পারি তাই, আমার কলেজ
পড়ুয়া নিরীহ বোন দীপা, অবুঝ দুধের বাচ্চার মা রিপা ও আমার ভাই ডলারকে
ইয়াবা ও হিরোইন দিয়ে মামলা দেয়।
শুধু তাই নয়, আমিসহ আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের নামেও মিথ্যা মামলা দেয়
এবং আমাদের পালাতক আসামী দেখানো হয়। যাতে আমরা আমার মায়ের হত্যাকান্ডের
বিচার চেয়ে মামলা না করতে পারি। যদি আমরা সত্যি মাদক ব্যবসায় জড়িত
থাকতাম, পল্লবী থানায় অতীতে তো অসংখ্য পুলিশের ওসি এসেছে। যাদের বিরুদ্ধে
মাদকের অভিযোগ ছিল, সবাইকে মামলা দিয়েছে। কিন্তু, অতীতে কখনও আমাদের
বোনদের নামে বা আমার ভাই ডলারের নামে কোন মামলা নেই। এটিই আমাদের জীবনে
প্রথম মামলা। এতেই বুঝা যায়, প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে এই
মামলা প্রদান। আমাদের অপরাধ এইটুকুই, আমরা গরীব খেটে খাওয়া মানুষ। পল্লবী
থানার পুলিশের চাঁদা তুলার দায়িত্বে থাকা সোর্সদের টাকা দিতে অস্বীকৃতি
জানিয়েছি। এটাই আমাদেও অপরাধ। আপনারা নিজেরা সাংবাদিক পরিচয় না দিয়ে
একদিন পল্লবী থানার ৪ তালায় যাবেন। দেখবেন, কত সোর্স উপস্থিত রয়েছে।
সেখানে টেবিল টেবিল করে দেওয়া আছে। অসংখ্য মানুষ ধরে এনেছে। এনে মারধর
করে টাকার জন্য সোর্সদের দিয়ে কল দেওয়াচ্ছে।
পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম আসার পর থেকে পল্লবীর আইনশৃঙ্খলা
পরিস্থিতির চরম অবণতি হয়েছে। সকল অপরাধী পুলিশের বন্ধু। ওসি বাড্ডা থেকে
বাংলা মদ আনিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ওসি আগে বাড্ডা থানায় ছিল। সেই
সূত্র ধরে, পল্লবীকেও বাড্ডার মতো মাদক জোনে রূপ দিচ্ছে। এছাড়াও পরপর ২
দিনে দুই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
পৃথিবী আরো উল্লেখ করেন, আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা কারচুপির কাজ করে
কষ্টে সৃষ্টে জীবন যাপন করি এবং একই সাথে অন্য গরীব লোকদের মতো কিছু টাকা
সঞ্চয় করার চেষ্টা করি। আমাদের সঞ্চিত অর্থের দিকেই লোলুপ দৃষ্টি যায়
পুলিশের সোর্সদের। তারা নিয়োমিত আমাদের কাছে টাকা দাবী করে। কিন্তু, আমরা
যেহেতু কোন অপরাধে যুক্ত না, আমরা তাদের টাকা দিতে বরাবরই অস্বীকৃতি
জানিয়ে আসছি। ওরা বলে, ওসি ওদের টার্গেট দিয়েছে। মিল্লাত ক্যাম্প থেকে
প্রতিমাসে নির্দিষ্ট অংকের টাকা চাদা দিতে হবে। নয়তো মাদক মামলায় আটক
করবে। কিন্তু, আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোতে, আমাদের বাসায় থাকতে
দিবেনা বলে হুমকী দেয়। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের বাসায় বাসায় আক্রমণ ও আমার
মায়ের মৃত্যু। আমার মা মারা যাওয়াতে, আমরা ক্রুদ্ধ হয়ে মামলা করতে যাওয়াই
আমাদের সবচেয়ে বড় অপরাধ হয়েছে। যার ফলে আজকের এই করুণ পরিণতি ভোগ করছি।
সংবাদ সন্মেলনে পৃথিবী তাদের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন
এবং দাবী জানান, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তার মায়ের হত্যাকান্ডে জড়িত
পুলিশ সদস্যদের বিচারের। একই সাথে তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হওয়া
মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান।