পৃথিবীর মানুষ হামাক নিয়্যা, হামার ভাষা নিয়্যা গর্ব করে,মজিবর রহমান

রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: মাও যে ভাষাত কতা কয়, সেই ভাষায় হামার নেজের ভাষা। মায়ের ভাষা মানে মাতৃভাষা। ১৯৫২ সালোত বাংলা ভাষাত কতা কওয়ার জনতে আন্দোলন সংগ্রামোত নেজের জেবোন দেচে রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, বরকত। গোটা দুনিয়াত ভাষার জনতে জেবোন দানের এমোন নজির নাই। সেই ভাষা আন্দোলনোত অমপুর থাকি যামরা লড়ছে, তামারে একজন মজিবর রহমান মাস্টার। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে এসব কথা কয়. একুশে পদক প্রাপ্ত ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান মাস্টার। তিনি আরও কয়, হামরা বাংলার মানুষ, বাংলাত কতা কই। ক্যান হামরা ভিনদেশি ভাষাত কতা কমো। হামরা বাংলাক ভালোবাসি, বাংলা হামার মাতৃভাষা। জন্ম থাকি বাংলাত কতা কওছি। মাওয়োক মাও কই, বাবাক বাবা কই। বাংলাতে হামরা মনের ভাব প্রকাশ করি। বাংলায় হামাক ভালো নাগে। ৮৬ বছর বয়সী মজিবর রহমান গর্ব করে কয়, পৃথিবীর কোনোটে নিজের ভাষাত কতা কবার অধিকার ফিরি পাবার জনতে মাইনসে জীবন দেয় নাই। কিন্তু হামরা বাঙালিরা ভাষার জনতে যুদ্ধ করছি। আইজ সারা দুনিয়ার মানুষ একুশে ফেব্রুয়ারিত হামার সংগ্রামের কতা কয়, বাংলার মাইনসের কতা হয়। হামার ভাষার জনতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে। পৃথিবীর মানুষ হামাক নিয়্যা, হামার ভাষা নিয়্যা গর্ব করে। ভাষা আন্দোলনোত যাবার অপরাধে মজিবর রহমানের নামে ওয়ারেন্ট হয়। সেই ওয়ারেন্ট মাতাত নিয়্যা নেকাপড়ার পাশাপাশি লড়াই করি যায় এ ভাষাসংগ্রামী। সেই স্মৃতি তুলি ধরি মজিবর রহমান কয়, ১৯৪৮ সাল থাকি মুই কিন্তুক বাংলা ভাষার জনতে আন্দোলন করচু। তকন মুই বদরগঞ্জ হাই স্কুলোত ক্লাস এইটোত পড়োং। সেই সময় পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল আছিলো কায়দে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ওই মানুষট্যা উর্দুতে কতা কচলো। তায় ব্যারিস্টার মানুষ আছিলো। মোর চাচা, মামা, ভাই, দাদাসহ গ্রামের মেল্লা মানুষ ন্যাশনাল গার্ড হয়্যা মোহাম্মদ আলী জিন্নাক দেকার জনতে ঢাকাত গেচলো। মুই ওমারগুল্যার সাথে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানোত গেচনু। অটেকোনা ন্যাশনাল গার্ডের সভাত জিন্নাহ সাইব ইংলিশ ভাষাত কচলো উর্দু নাকি পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হইবে। হামরা তার ওই কতা মানি নেই নাই। তিনি আরও কয়, যকন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়োত উর্দুক ফির রাষ্ট্রভাষা করার কতা কয় জিন্নাহ সাইব, তকন ছাত্ররা কাও মানি নেয় নাই। সাথে সাথে প্রতিবাদ করি ওঠে। মানি না, মানি না করি চিল্লাচিলি শুরু হয়। তকন থাকি ভাষা আন্দোলন জোরালো হইতে থাকে। ঢাকাত তকন মুই মোর এক স্যারের কাছে যাং। তায় ডাক্তারি পড়ছিল, ছাত্রলীগের সাতেও ছিল। ঢাকার ইন্দ্রিরা রোডের থাকে। মুই ওই স্যারের কাছে গেইলে তায় মোক থাকার জাগা দেয়। পরে তার সাথে মুই আইতোত দেড় দুইশো পোস্টার নেকনু। একেকটা পোস্টারোত একেক রকম শ্লোগান আছিল। রাষ্ট্রাভাষা বাংলা চাই, বাংলা হামার মায়ের ভাষা। উর্দু ভাষা চাই না এমন মেলা শ্লোগান নেকা হয়। তিনি আরও কয়, ম্যাট্টিক পাস করার পর মুই কারমাইকেল কলেজোত আইএ ক্লাসোত ভর্তি হচি। তকন থাকি আরও বেশি করি আন্দোলন করা শুরু করনু। বদরগঞ্জোত তকনকার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা জীতেন দত্ত, ইদ্রিস লোহানী ও ইউসুফ লোহানীর সাথে মোর খুব ভালো স¤পর্ক ছিলো। ওমারগুল্যার সাথে ১৯৫২ সালোত সরাসরি ভাষা আন্দোলনোত সামনের সারিত আচনু। আন্দোলন করার কারণে মোর নামে ওয়ারেন্ট হচলো। মুই কোনো সময় টাউনোত, ফির কোনো সময় গ্রামোত থাকচু। ওই সময় স্কুল-কলেজ ঘুরি ঘুরি ভাষা আন্দোলনের পক্ষে ক্যা¤েপইন করচু। যাতে করি ছাত্ররা আন্দোলনমুখী হয়্যা ওঠে। ক্যা¤েপইন করার জনতে বুড়িপুকুর, লালদিঘিরহাট, সয়ার খোড়াগাছ, শ্যামপুরসহ মেলা জাগাত গেচনু। গ্রামের সহজ সরল মানুষও হামার আন্দোলনোর সাথে আছিল। সবাই মাতৃভাষা বাংলা চাইছে। এ ভাষাসৈনিক নিজের গ্রামের ভাষা, মায়ের ভাষা, অঞ্চলের ভাষা তথা আঞ্চলিক ভাষাক ভালোবাসার জনতে নতুন প্রজন্মের প্রতি অনুরোধ করে। সারা দুনিয়া জুড়ি একুশে ফেব্রুয়ারি পালন হওয়াতে খুশি এ ভাষাসৈনিক। সগায় সবার ভাষাক ভালোবাসুক। ভালো থাকুক বাঁচি থাকুক নেজের ভাষা, এটাই চাওয়া মজিবর রহমানের। এ্যলাকার যুগের ছাওয়াপোয়ার কাছে এ ভাষাযোদ্ধা চাওয়া সগায় নেজের ভাষাত কতা কোউক। আধুনিকতার কাছে যেন হারে না যায় নেজের মাতৃভাষা, আঞ্চলিক ভাষা। আঞ্চলিক ভাষাক ভালোবাসা নাগবে। এ্যলাকার ছাওয়ারা স্মার্ট ভাষাত কতা কইলে সমস্যা নাই। আধুনিক হোউক কিন্তুক নেজের মায়ের ভাষা ভুলি গেইলে হবার নায়। আঞ্চলিক ভাষা মানে মাতৃভাষা, নেজের মায়ের ভাষা। নেজের ভাষাত কতা কবার জন্যে হামরা আন্দোলন সংগ্রাম করছি। জন্ম নিয়্যা মায়ের কোল থাকি হামরা মাতৃভাষা শিখি। এ ভাষাক ঘিন্ন্যা করা যাবার নায়। নিজে থাকি কতা কওয়া শেখা নাগবে, সাতে সাতে ছাওয়াপোয়াকো আঞ্চলিক ভাষাত কতা কওয়ার জনতে সাহস দেওয়া নাগবে। নেজের ভাষাত কতা কইতে কিসের লজ্জা শরম? মায়ের ভাষাত কতা কইতে মনোত শান্তি বেশি। ভাষা আন্দোলনোত অবদানের জনতে এবার মজিবর রহমান মাস্টারোক একুশে পদক দিয়্যা সম্মানিত করচে সরকার। ওই তকনে সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ এ ভাষাযোদ্ধা। প্রধানমন্ত্রীক ধন্যবাদ জানেয়া মজিবর রহমান কয়, মুই একুশে পদক পাচু। খুব খুশি নাগোচে। আল্লাহর কাছে দোয়া করোং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন দীর্ঘজীবী হয়। তায় যেন আজীবন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকে। আল্লাহ যেন তাক দ্যাশের উন্নয়নের জনতে ভালো থোয়, মেলাদিন বাঁচি থোয়। ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান মাস্টার অমপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কুতবপুর ইউনিয়নের খিয়ারপাড়া গ্রামোত থাকে। ১৯৩৭ সালে ওই গ্রামোত তার জন্ম হয়। তার বাপের নাম সেরাজ উদ্দিন। মজিবর রহমান মাস্টার ১৯৭১ সালোত মুক্তিযুদ্দোত অংশ নেয়। তায় ৬ নম্বর সেক্টর থাকি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্দ করে। দ্যাশ স্বাধীনের পর মজিবর রহমান কয়েক বছর বিসিআইসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে। তায় স্কাউটস আন্দোলনোত যুক্ত থাকি রাষ্ট্রপতি পদকও পায়। দীর্ঘদিন ধরি মাস্টারি করায় তাক গ্রামের সবায় মজিবর মাস্টার নামেই বেশি চেনে। হুমকি ধামকির ভয় না করি স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও যুদ্দপরাধী এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয় মজিবর মাস্টার। ওই তকনে তার ওপর হামলা করে জামায়াত শিবির। মজিবর রহমান ১৯৬৯ সাল থাকি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বদরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদকের দায়িত্ব পালন করে। বাকশাল গঠনের পর তায় মেলাদিন রংপুর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ স¤পাদকও ছিলো। এছাড়া মজিবর রহমান বদরগঞ্জ শাখা টিসিসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। তায় কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের একবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওলো।

Exit mobile version