প্রতারনা করে সদস্য সচিবের পদ বাগিয়েছেন মুকুল *বরিশালের বিএনপি নেতাদের অভিযোগ

মনির হোসেন,বরিশাল ব্যুরো ॥ প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে মিথ্যে তথ্য দিয়ে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের পদ বাগিয়ে নেওয়া মিজানুর রহমান খান মুকুলকে প্রত্যাখান করেছেন বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা।
প্রতারনার মাধ্যমে মিথ্যে তথ্য দিয়ে সদস্য সচিবের পদ বাগিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইসচেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদের কাছে মুকুল খানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির প্রথম সাড়ির নেতৃবৃন্দরা এ অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, পদ বাগিয়ে নিতে মিজানুর রহমান খান মুকুল নিজেকে ৯০’র এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যর গৌরনদী উপজেলা আহবায়ক এবং ১৯৮৮ সালে সরকারী গৌরনদী কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ভিপি বলে নিজেকে দাবি করেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যে ঘটনা।
বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসের প্রথমদিকে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কমিটিতে আগ্রহী আহবায়ক ও সদস্যসচিব পদে কাঙ্খিত পদের কথা উল্লেখসহ অতীত রাজনৈতিক পদপদবী উল্লেখ করে তথ্য চান দলের হাইকমান্ড। পরবর্তীতে সদস্য সচিব পদ পেতে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন মোঃ আফজাল হোসেন, রফিকুল ইসলাম কাজল ও মিজানুর রহমান খান মুকুল।
সূত্রমতে, মিজানুর রহমান খান মুকুল নিজেকে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা, ছাত্রদল থেকে নির্বাচিত ভিপি এবং এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যর গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলা আহবায়ক দাবী করে তথ্য দিয়েছেন। যার একটি তথ্যও সঠিক নয়।
সরকারী গৌরনদী কলেজের ১৯৮৭-১৯৮৮ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ছাত্র সমাজের প্যানেল থেকে নির্বাচিত জিএস ও তৎকালীন গৌরনদী উপজেলা ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ১৯৮৮ সালে সরকারী গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মুকুল-আলাউদ্দিন-হান্নান পরিষদটি ছিল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের প্যানেল। আমি তৎকালীন সময়ে গৌরনদী উপজেলা ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওই প্যানেলে জিএস পদে ও গৌরনদী উপজেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি মিজানুর রহমান মুকুল ভিপি পদে এবং হান্নান শরীফ এজিএস পদে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অভিষেক অনুষ্ঠানে এরশাদ সরকারের বস্ত্র মন্ত্রী সুনীল গুপ্ত ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রুহুল আমিন হাওলাদার অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এরশাদ সরকার ক্ষমতায় থাকার শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আমি, ভিপি মুকুল ও এজিএস হান্নান শরীফ জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতা গ্রহনের পর মুকুল ও হান্নান শরীফ বিএনপিতে এবং আমি আওয়ামী লীগে যোগদান করি।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতা ও গৌরনদী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জামাল হাওলাদার বলেন, মিজানুর রহমান খান মুকুল ছাত্রদল থেকে ভিপি নির্বাচিত হওয়ার ভুয়া গল্প বানিয়ে উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন কিন্তু তিনি ছাত্রদল থেকে নির্বাচিত ভিপি নন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন গৌরনদী উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহবায়ক জহুরুল ইসলাম জহির এবং সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যর যুগ্ম আহবায়ক উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এসএম মনির-উজ-জাামান মনির।
৮০ দশকের কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা মনির-উজ-জামান মনির বলেন, মিজানুর রহমান খান মুকুল শুধু মিথ্যাচারই করেননি; তিনি ইতিহাস বিকৃতসহ দলের হাইকমান্ডের সাথে প্রতারনা করে পদ বাগিয়ে নেওয়ার ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছেন। এ অপরাধের জন্য তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থ্া নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক মাঠে প্রভাব বিস্তারসহ নানা কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকলেও মুকুল খান ও তার কতিপয় সহযোগিদের বিগত ওয়ান ইলেভেন থেকে শুরু করে দলের ক্রান্তি লগ্নে আর মাঠে দেখা যায়নি। ওয়ান ইলেভেনের সময় যারা বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে নিজেদের রক্ষা করেছেন, সেই সুবিধাভোগীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মুকুল খান মিথ্যে তথ্য দিয়ে দলের পদ বাগিয়ে নেয়ায় ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতারা আজ অবমূল্যায়িত হয়ে দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যর আহবায়ক, তৎকালীন সরকারী গৌরনদী কলেজ ও উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি জহুরুল ইসলাম জহির বলেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে যাদের হাতে নির্যাতিত হয়েছি, যারা জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা ছাত্রদল থেকে ভিপি নির্বাচিত হওয়া এবং সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যর আহবায়ক দাবি করা রাজনৈতিক মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়। তিনি আরও বলেন, মিজানুর রহমান খান মুকুলসহ অন্যান্যরা ভোট ডাকাতি করে ছাত্র সমাজের প্যানেল থেকে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেন, উল্লেখিত অভিযোগের সত্যতা পেলে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Exit mobile version