প্রমিত ভাষার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ফোকলোরিষ্টদের এই ভাষণটি লক্ষ করলে দেখা যাবে প্রতিবাদ ও বিদ্বেষের ভাষার মধ্যে তফাৎটা কোথায় ?

আমাদের আপত্তি নেই যদি খুলনা বিভাগটি পশ্চিম বাংলার সঙ্গে যুক্ত করে চতুর্থ স্বাধীনতা ঘোষিত হয় কারণ সমগ্র খুলনা রাঢ়ি বা প্রমিতাঞ্চল :

”ফোকলোর এক্সপেডিশন বাংলাদেশ টিম সবসময় চেষ্টা করেছে “ডায়ালেক্ট” বা “আঞ্চলিক ভাষা” ইত্যাদি টার্ম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে। আমরা বিশ্বাস করি, এই অঞ্চলে বহুকাল ধরে প্রমিত(?) বাংলা কেন্দ্রিক একটি সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব বিরাজ করছে, যা কিনা অন্য সকল ভাষার অস্তিত্বকে সংকটে ফেলছে, অস্বীকার করছে। পক্ষান্তরে আমরা রংপুরী, সিলটি, চাটগাঁইয়া, নোয়াখাইল্লা, বরিশাইল্লা, মমিসিঙ্গা সহ এই অঞ্চলের অসংখ্য ভাষাকে “ভাষা” হিসেবেই বিবেচনা করতে চাই।লোকসংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন কাজের সুবাদে আমাদের বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তেমনই একটি কাজ ছিল ছড়া নিয়ে। ঘুঘু সই ও অন্যান্য প্রশ্নোত্তরমূলক ছড়ার ভিন্ন ভিন্ন ভাষার সংস্করণ আমরা সংগ্রহ করেছিলাম বাংলাদেশের ৪৫টি জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের ২টি জেলা থেকে। আর সেই সংগ্রহেরই কিছু অংশ থাকছে আমাদের ম্যাগাজিন তালপত্রের প্রথম সংখ্যা “ঘুঘু সই”-এ।মজার বিষয় হলো, এই কাজটি করতে গিয়ে আমরা একটি ভাষার সাথে পরিচিত হয়েছি। এই ভাষাটির নাম “ঢেঁকি ভাষা”। আমাদের উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় এই ভাষাটি প্রচলিত। রাজবংশী, সাঁওতালি, কুরুখ, পলিয়া সহ বিভিন্ন ভাষার সাথে এই ঢেঁকি ভাষার সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। আধিপত্যবাদী সাংস্কৃতিক শক্তির কারণে এমন অসংখ্য ভাষাই হয়তো রয়ে গিয়েছে আড়ালে আবডালে। নিজের মাতৃভাষার মহিমাকে অতিরঞ্জিত করে অপরের মাতৃভাষাকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করার মনোভাব নিপাত যাক, এই আকাঙ্ক্ষা ধরেই সবাইকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি! ”

Exit mobile version