বাংলাদেশের বর্তমান যেই অবস্থা, বাংলাদেশ কি আসলেই দেউলিয়ার পথে?

একটা দেশ তখনই দেউলিয়া হয় যখন সে দেশের ঋণের পরিমাণ মোট জিডিপির ৪০ শতাংশের বেশি হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কায দেউলিয়া হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে শ্রীলংকার যে মেগা প্রকল্প গুলো বাস্তবায়নের জন্য ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে সে মেগা প্রকল্পগুলো থেকে সে ধরনের কোনো প্রফিট তারা পায়নি। এর কারণ হলো মেগা প্রকল্প গুলো কোন ধরনের পরিকল্পনা বা যাচাই বাছাই না করে বাস্তবায়নের জন্য ঋণ নেওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ হাম্বানটোটা বন্দর যখন তৈরি করার প্রকল্প নেয়া হয় তখন আগে থেকেই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন এই মেগা প্রকল্প কখনোই লাভের মুখ দেখবে না।

কিন্তু তা সত্ত্বেও শ্রীলংকা চীনের কাছ থেকে মোটা সুদে ঋণ নিয়ে বন্দর তৈরি করল। আর এভাবেই একের পর এক মেগা প্রকল্পের ভুল পরিকল্পনার কারণে শ্রীলংকা ঋণে জর্জরিত হতে থাকে। তারপরও শ্রীলংকার ঋণ নেওয়া বন্ধ থাকে নি। বরং একের পর এক প্রকল্পের জন্য তারা বৈদেশিক সংস্থাগুলো থেকে এবং বিভিন্ন দাতা দেশ গুলো থেকে যেমন চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেছে। একসময় এই ঋণের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে সেটা তাদের মোট জিডিপির ১০৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে!!!

ঋণের পরিমাণ এতটাই বেশি হয়ে গেছে যে ঋণ মেটানো তো দূরের কথা ঋণের সুদ মেটাতে শ্রীলঙ্কাকে তাদের রিজার্ভ এর নব্বই শতাংশের বেশি অর্থ খরচ করতে হয়েছে। এ কারণে রিজার্ভ যখন কমে গিয়েছে তখন দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন পেট্রোল ঔষধ সামগ্রী আমদানিতে টান পড়েছে।

বিগত কয়েকদিন ধরে বিশেষত রমজানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি অস্বাভাবিক আকারে বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কয়েক মাস আগেও যেখানে এক ডলারের বিপরীতে ৮৬ টাকা ছিল এখন ১ ডলার এর পরিবর্তে ৯৫ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। সরকার নিজেও স্বীকার করেছে যে অতিরিক্ত মূল্য মুদ্রাস্ফীতির কারণে রিজার্ভ থেকে আমদানির ব্যয়ভার মেটাতে হচ্ছে। সোজা ভাষায় বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। এর মানে কি বাংলাদেশে এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে?? তাহলে জেনে রাখুন বাংলাদেশের মোট ঋণের পরিমাণ বাংলাদেশের মোট জিডিপি ১৪ শতাংশ। যেখানে ৪০ শতাংশ হলে একটা দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথে থাকে সেখানে বাংলাদেশের মোট ঋণের পরিমাণ ১৪ শতাংশ। এ নিয়ে আমরা কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারি। সুতরাং এতটুকু বলতে পারি যে আমরা এখনো দেউলিয়া হওয়ার পথে নেই। তার মানে এই নয় যে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে দেউলিয়া হবে না। বর্তমানে বাংলাদেশের দেউলিয়া না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে রিজার্ভ এর একটা বড় অংশ আসে বহির্বিশ্বের ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীদের মাধ্যমে। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে বিশ্বের উত্তপ্ত রাজনীতির কারণে বিশ্ব বাজার অস্থির এবং করোনার কারণে বহির্বিশ্ব থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম পৌছেছে। আর এ কারণে সেটা সরাসরি আমাদের অর্থনীতির উপর আঘাত হানছে। যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম হঠাৎ করে অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে।

এবার আসি আগত দিনে বাংলাদেশ দেউলিয়া হবে কিনা সেটার প্রসঙ্গে। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ যেনো দেউলিয়া না হয় এর জন্য প্রয়োজনে হলো বাংলাদেশ যে সকল মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে সে সমস্ত প্রকল্পগুলোকে যাচাই-বাছাই ও পর্যবেক্ষণ করে দেখা। এইসব মেগা প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে কত দ্রুত আয় করবে এবং কী পরিমান আয় করবে সেটা বের করতে হবে। যদি সেটা দেশের অর্থনীতির জন্য লাভবান হয় তবে ঋণ নিয়ে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত।

যেমন পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে চীনের কাছ থেকে যে ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে আমার বিশ্বাস যদি ঠিকমত টোল আদায় করা হয় তবে বাংলাদেশ এ ঋণ শোধ করতে পারবে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। আর যদি সেটা না হয় বরং শ্রীলঙ্কার মতো একের পর এক মেগা প্রকল্পের জন্য ঋণ নিতে থাকে তখন সেগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কাটা হয়ে দাঁড়াবে। তখন বাংলাদেশকে আর দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে কেউ আটকাতে পারবেনা।

Exit mobile version