বাংলাদেশ আর ভারতের ডাক্তারদের মধ্যে আসলে তফাতটা কী?

বাংলাদেশ থেকে এত লোক চিকিৎসার জন্য কেন ভারতে যায়?

নিজের একটা গল্প শোনাই।

আমার যখন জন্ম হয়, তখন সাথে একটা অসুখ নিয়ে জন্মাই‌। নিবেদিতা হাসপাতালে স্বনামধন্য চিকিৎসক অধ্যাপক এম.আর. খান নিউমোনিয়ার চিকিৎসা চালালেন। এক জুনিয়র এমবিবিএস ডাক্তার বললেন অসুখটা আসলে ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট (ভিএসডি)। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হলে হয়তো বিষয়টা আঁচ করতে পেরেছেন।

নাহলেও সমস্যা নেই। হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রক্ত আর কার্বন ডাইঅক্সাইড-সমৃদ্ধ রক্তকে আলাদা করার একটা বিভাজক আছে। সেটা ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম। আমার ‘হৃদয়ের’ এখানে ছিদ্র ছিল। তাতে বিশুদ্ধ আর দূষিত রক্ত মিশ খেয়ে যেত। কোনোভাবে রক্তপাত আমার নিষেধ ছিল। রক্তক্ষরণ হলে সেটা জমাট বাঁধানো নাকি কঠিন হয়ে পড়ত!

যাই হোক, এম.আর. খান ঐ জুনিয়রকে ধমক দিলেন। এদিকে আমার অবস্থারও উন্নতি না হওয়ায় বাবা-মা এদেশের চিকিৎসায় ভরসা রাখতে পারল না। ভারতে নিয়ে গেল। এরই মাঝে ড. দেবী শেঠী বাংলাদেশে একবার আসেন। তখন বলেন এটা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

ঠিক কিছুটা হয়েছিলই। ওপেন হার্ট সার্জারির মতো একটা কষ্টের হাত থেকে বেঁচে যাই। বেঙ্গালুরুর নারায়ণা হৃদয়ালয়ায় (ড. শেঠী প্রতিষ্ঠিত) আমার ভিএসডি ডিভাইস ক্লোজার করেন ড. পি.ভি‌.‌ সুরেশ—হালকা-পাতলা গড়নের একজন চমৎকার মানুষ। ক্লোজার বিষয়টা হলো ক্যাথেটারের মাধ্যমে সেই ছিদ্র পর্যন্ত একটা ছোট ডিভাইস ঢুকিয়ে দেয়া, যেটা ছিদ্রটা ঢাকতে সাহায্য করবে। দক্ষিণ ভারতের এই হাসপাতালকে হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য নয়া দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলোর চেয়েও ভালো মনে করা হয়।

ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতাল

বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন উন্নত হচ্ছে। তবে উন্নত চিকিৎসা ব্যয় আকাশচুম্বী। সে অর্থ ব্যয় করে ভারতে যাওয়া-আসা-চিকিৎসা-ঘোরা সব হয়ে যাবে। ‘উন্নত’ বললাম কারণ উভয় দেশে দরিদ্রদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থার করুণ অবস্থা প্রায়ই শোনা যায়। ভারতে যে সমস্ত বাংলাদেশি যায়, তাদের অধিকাংশই অবস্থাপন্ন।

আরেকটা কথা বলা যায়, ভারতীয় চিকিৎসকেরা অধিকতর আন্তরিক এবং অহেতুক ওষুধের পরামর্শ দিতে অনাগ্রহী। রোগীদের পেছনে যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন।

এসব কারণে দেখা যায়, বাংলাদেশ বাদে অন্যান্য দেশ থেকেও প্রচুর রোগী ভারতে যায়। নয়া দিল্লির অ্যাপোলোতে গেলে কত রঙের কত ভাষার মানুষ পাওয়া যায়, তার ইয়ত্তা নেই

Exit mobile version