বাণিজ্য মেলার শেষ দিনে উপচে পড়া ভিড়

এক মাস ধরে চলা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার শেষ দিনে পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই দশা।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) পড়ায় সকাল থেকেই মেলায় ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়। দুপুরের পর মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের তীব্র ভিড় দেখা যায়।

বিশেষ করে গৃহস্থালির নানা পণ্য, খাবার, ইলেকট্রনিকস, ক্রোকারিজসহ সব পণ্যে নানা অফার থাকায় সবাই কিছু না কিছু কিনে বাড়ি ফিরছেন। ‘বাই ওয়ান গেট ওয়ান’ অফারে ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা গেল বেশি।

মেলার শেষ দিনে বিভিন্ন পণ্যে ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে কোনো কোনো স্টল। সেসব পণ্যও বিক্রি হচ্ছে দেদার।

সকাল থেকেই রাজধানী ও আশেপাশের এলাকা থেকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ক্রেতা- দর্শনার্থীরা মেলায় আসতে শুরু করেন। বিভিন্ন স্টলের মূল্য ছাড়ের সুযোগ নিচ্ছেন তারা।

 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবারের মেলার যৌথ আয়োজক। এবারের মেলার বর্ষপণ্য ফার্নিচার।

দেশে পণ্য প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় এ মেলায় এবার ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫১টিই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের স্টল-প্যাভিলিয়ন। আর বাকি ১১টি স্টল সাতটি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের।

মেলায় অংশ নেওয়া সাতটি দেশ হল- ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়া।

মেলায় দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটি এইড, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্সস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ সামগ্রী, চামড়া ও আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল, টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে।

বিক্রেতারা বলছেন, মেলার শেষের দিকে বেচাকেনা বাড়লেও, খুব একটা লাভের মুখ তারা দেখছেন না। তারা মেলার সময় বাড়ানোর দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ তাতে সায় দেয়নি।

 

মেলার মূল ভবনে ভিশন প্যাভিলিয়নের হেড রাসেল মাহমুদ বলেন, আজ শেষ দিন হওয়ায় আমরা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমাদের সব পণ্যে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট চলছে। বেচা-কেনা ভালো, তবে আরও ভালো হতে পারত।

মেলায় টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি ও থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে একটি স্টলে। সেলসম্যান আক্তার হোসেন বললেন, আজকে শেষ দিনে বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। সুলভ মূল্যেই শাড়ি, থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে।

এই দোকানে আসা একজন ক্রেতা বললেন, আগারগাঁওয়ে যখন মেলা হত তখন ব্যাপারটাই অন্যরকম ছিল। এখানেও খারাপ না। তবে বিদেশি স্টলের সংখ্যা বাড়ানো গেলে আরো বেশি মানুষ আসবে বলে আমি মনে করি।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করবেন। তবে শেষ দিন মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।

গত ১ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন।

দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করছে বাংলাদেশ। এরপর ২০২২ সালে মেলার ভেন্যু রাজধানীর আগারগাঁও থেকে নিয়ে যাওয়া হয় পূর্বাচলে। এ বছর শেষ হচ্ছে মেলার ২৯তম আসর।

 

মেলার প্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশ টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা, এবং ১২ বছরের নিচের শিশুদের জন্য ২৫ টাকা।

দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড, ফার্মগেইট (খেজুর বাগান/খামার বাড়ি), নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বাণিজ্য মেলার উদ্দেশ্যে বিআরটিসির ২০০টির বেশি ডেডিকেটেড শাটল বাস চলেছে। মেলা প্রাঙ্গণ থেকে শেষ বাসটি ছাড়বে রাত ১১টায়।

ফার্মগেইট (খেজুর বাগান/খামার বাড়ি) থেকে মেলা প্রাঙ্গণের ভাড়া ৭০ টাকা; কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণের ভাড়া ৩৫ টাকা; নারায়ণগঞ্জ-মেলা প্রাঙ্গণ ভাড়া ১২০ টাকা; নরসিংদী-মেলা প্রাঙ্গণ ভাড়া ৯০ টাকা; মেলা প্রাঙ্গণ থেকে গুলিস্তান ভাড়া ৮০ টাকা এবং গুলিস্থান থেকে নারায়ণগঞ্জ ভাড়া ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গেলবারের ধারাবাহিকতায় মেলায় আসা-যাওয়ার জন্য বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি বিশেষ ছাড়ে উবার সার্ভিসও চালু রয়েছে। মেলায় করা হয়েছে উবারের পিক আপ জোন।

এছাড়া প্রথমবারের মত মেলায় অনলাইন টিকেটিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ফোনেই স্ক্যান করে টিকেট কেটে প্রবেশ করা যাচ্ছে। কাউন্টারে লাইনে দাঁড়ানোর লাগছে না।

 

Exit mobile version