মাসুদুর রহমান :
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বিশ্বজিৎ সরকার (৩৫) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক। অনেকেই ফেসবুকে দীর্ঘ সময় কাটান। ফেসবুককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক প্রতারক চক্র। নানা কৌশলে ফেসবুক ব্যবহারকারীকে বোকা বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এসব সাইবার দুর্বৃত্তরা।তবে সম্প্রতি টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক নারী। বিশ্বজিত নেত্রকোনা সদর উপজেলার গ্রীণ রোড, সাতপাই(নদীরপাড়) এলাকার রাখেশ সরকারের ছেলে । “বিশু বাস স্ট্যান্ড” নামে এলাকায় এবং অনলাইনে চিহ্নিত প্রতারক হিসেবে পরিচিত বিশ্বজিৎ সরকার।
জানা যায়, বিশ্বজুড়ে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জয়জয়কার। অনেকেই এই সামাজিক মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছেন জীবনসঙ্গী, কেউবা হয়েছেন প্রতারণার শিকার। আবার বিভিন্ন অপরাধেরও অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে এটি। এসব অপরাধে যুক্ত হইয়েছে বিভিন্ন দেশের অনেক চক্র। সাইবার দুর্বৃত্তদের বড় একটি প্রতারণার ফাঁদ ফেসবুকে। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে ঘনিষ্ঠ ও পরিচিতজনের ছদ্মবেশে ফেসবুক মেসেঞ্জারে টাকা চাওয়ার হার বেড়ে গেছে অকল্পনীয় ভাবে। তবে সচেতন মহুল বলছে, সাইবার দুর্বৃত্তদের বড় একটি প্রতারণার ফাঁদ ফেসবুক। এই বিষয়ে সর্তক না হলেই পড়তে পারেন নানা প্রতারণায়। ফেসবুকের এই স্ক্যাম, ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। অনেকেই পড়ছেন নানান জটিলতা ও প্রতারণার ফাঁদে। এদিকে বর্তমান ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্ল্যাকমেইলিং, চাঁদাবাজি, অর্থ আত্মসাৎ, প্রশ্নফাঁস থেকে শুরু করে যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। এসব বিষয়ে সবাইকে সর্তক থাকতে হবে অন্যথায় যে কোনো ঝামেলায় পড়তে হতে পারে ।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বজিৎ প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহিলাদের টার্গেট করে। তিনি এডিট করা ছবি দিয়ে ভুক্তভোগীদের ভয় দেখিয়ে হুমকি দেন যে, এই ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর তিনি দেখা করার ফাঁদ পেতে আরও কিছু আপত্তিকর ছবি তোলেন এবং কথোপকথন রেকর্ড করেন। এরপর তিনি এসব ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তাদের অশ্লীল ছবি এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। বিশ্বজিতের এই প্রতারণার জালে অনেক মহিলার সংসার ভেঙ্গেছে। এর মধ্যে অনেকেই ভয়ে অভিযোগ পর্যন্ত করতে পারেননি। তার এই কর্মকাণ্ডের ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এক নারীর লিখিত অভিযোগে জানা যায়, তিনি প্রায় ১৩-১৪ লক্ষ টাকা হারিয়েছেন । যদিও অনেকে বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে সাহস পাননি। তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন এবং তার স্বামীর সহযোগিতায় এই ফাঁদ থেকে মুক্তি পেয়েছেন । ঘাটাইল থানা এলাকার এক নারী জানান, তিনি প্রায় ১০ লক্ষ টাকা প্রতারণার স্বীকার হয়েছে। তার নামে ভুয়া ফেসবুক একাউন্ট করে বিভিন্ন উল্টাপাল্টা পোস্ট করে। এর ভয়ে এবং সম্মানে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে। তিনি এমন ব্যক্তিদের বিচারের দাবী জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান,স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এমন অপরাধীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন । পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং এমন কোনো পরিস্থিতিতে পড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিতে হবে ।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিশ্বজিতের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে নাম্বারটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অনেকেই বলেন, ফেসবুক স্ক্যাম বা প্রতারণা বেড়ে গেছে। ফেসবুক প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি মেসেঞ্জার ব্যবহার করেও প্রতারণা করে দুর্বৃত্তরা। অনেক ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ফেসবুক ব্যবহারকারী বন্ধুর ছদ্মবেশে অর্থ ও চাওয়া হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ফেসবুক থেকে ছবি ও তথ্য নিয়ে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুর সঙ্গে প্রতারণা করছে। অনেক সময় বিশ্বস্ত বন্ধুর ছদ্মবেশে আসায় এ ধরনের প্রতারণা সহজে ধরা যায় না।
এদিকে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই আসছে সংবাদমাধ্যমে। এভাবে ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে নারী।
নারীর প্রতি নির্যাতন, সহিংসতা ও ধর্ষণ ঠেকাতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন করেছে সরকার। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সভা-সিম্পোজিয়ামসহ নানাবিধ আয়োজন, কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তবুও থামছে না নারীর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতা। অপরাধীর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করলে এসব অপরাধ কমবে বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মীরা।