মহেশখালীর ধর্ষিতা-নির্যাতিতা রোজির ‘বিচারের বাণী যেন সরবে প্রকাশ্যে কাঁদে’!
বেলাল আজাদ, কক্সবাজার:
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রশ্ন’ কবিতার বহুল প্রচলিত ‘বিচারের বাণী নীরবে,নিভৃতে কাঁদে’ চরণটি মহেশখালীর ধর্ষিতা-নির্যাতিতা রোজির বেলায় নিরবে বা নিভৃতে নয় বরং ‘বিচারের বাণী যেন সরবে প্রকাশ্যে কাঁদে’!
ভুক্তভোগী ভিকটিম রোজি (ছদ্মনাম) কক্সবাজার জেলার মহেশখালী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডস্থ পুটিবিলার (আমির চাঁন্দ পাড়া) মৃত মোঃ আজমের কন্যা এবং অভিযুক্ত নির্যাতনকারী ও ধর্ষক মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডস্থ জাগিরপাড়া গ্রামের মৃত মীর কাশের পুত্র মোঃ ফারুক (৩৭)।
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বজায় রাখতে বারবার নির্যাতন ও ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষণ করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে, ধর্ষণের উপযুক্ত আলামত ও ডাক্তারী প্রতিবেদন সহ আদালতে মামলা করেও অভিযুক্ত ধর্ষক ফারুক প্রভাব ও অর্থশালী এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামীর দ্বারা অন্যায় ভাবে প্রভাবিত হওয়ায় কোন প্রতিকার কিংবা ন্যায় বিচারের আশ্বাস না পেয়ে যেন ডুকরে, বিলাপ করে কাঁদছে। ভুক্তভোগী ভিকটিম রোজির অভিযোগ, তার দায়েরকৃত মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কক্সবাজার কার্যালয়ের পুলিশ পরিদর্শক মোঃ এনামুল হক চৌধুরী মামলার তদন্তে অভিযোগের যথাযথ সত্যতা পাওয়া সত্বেও আসামী পক্ষের দ্বারা অন্যায় ভাবে প্রভাবিত হয়ে অভিযুক্তকে বাঁচাতে মামলায় আনীত অভিযোগ মিথ্যে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক মোঃ এনামুল হক চৌধুরী তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী বাদী রোজির করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে যা পেয়েছি, তাই মাননীয় আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছি।’
জানা যায়, অভিযুক্ত প্রভাব ও অর্থশালী ফারুক’র স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও ভিকটিম রোজি কে স্বামী-সন্তান থাকাবস্থায় জোর-জবরদস্তি করে বিবাহ বহির্ভূত দৈনিক সম্পর্ক গড়ে তুলে, নানা অকৌশলে ও হত্যার হুমকি দিয়ে কয়েক বছর পূর্বে ভিকটিম রোজির স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি করে, ইচ্ছের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন জোর করে ধর্ষণ করতে থাকে। এ বিষয়ে বহুবার স্থানীয় ভাবে গণ্যমান্য লোকজন, জনপ্রতিনিধি ও থানা-পুলিশে সালিশ-বিচার এমনকি মামলা-মোকদ্দমাও দায়ের হলেও অভিযুক্ত ফারুকের প্রভাব ও অর্থের জোরের কাছে ভুক্তভোগী ভিকটিম রোজি বারবার হেরে যায়, ন্যায় বিচার ও অভিযুক্তের অত্যাচার-ধর্ষণ কার্য থেকে রেহাই পেতে ব্যর্থ হন।
সর্বশেষ গত ২৯ নভেম্বর ২০২১ ইং রাত প্রায় ১০ ঘটিকায় অভিযুক্ত ধর্ষক ফারুক ভুক্তভোগী ভিকটিম রোজির ঘরে ঢুকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে এবং ঘটনার বিষয়ে কোথাও অভিযোগ বা কোন মামলা করলে প্রাণে হত্যার হুমকি দেয়। ধর্ষিতা রোজি পরদিন প্রথমে মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রয়োজনীয় ডাক্তারী পরীক্ষা-নীরিক্ষা সহ দু’দিন চিকিৎসা শেষে হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে প্রথমে মহেশখালী থানায় এজাহার দায়ের করেন এবং থানা-পুলিশের মামলা রুজুতে অনীহা সহ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিলে গত ৭ ডিসেম্বর ২০২১ ইং কক্সবাজারের মাননীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নং-২ এ মামলা {সি.পি.নং-৩০৫/২০২১, ধারা: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১)} দায়ের করেন। বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) মহোদয় মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কক্সবাজার-কে তদন্তভার দেন। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক মোঃ এনামুল হক চৌধুরী ঘটনার বিষয়ে দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঘটনা মিথ্যা মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল দিলে, মামলায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, ধর্ষণের আলামত ও ডাক্তারী রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও ন্যায় বিচার পাওয়ার অনিশ্চয়তায় ভুক্তভোগী ধর্ষিতা ও নির্যাতিতা ভিকটিম রোজি হতাশ হয়ে পড়েন। ভুক্তভোগী ভিকটিম রোজি অনেকটা কাঁন্না জড়িত আবেগে জানান, আমাকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিষয়টি মামলায় যেমন সুস্পষ্ট, এলাকার লোকজন, জনপ্রতিনিধি ও থানা-প্রশাসনের প্রত্যেকেই অবগত। কিন্তু আসামী ফারুক প্রভাব ও অর্থ শালী হওয়ায় এবং তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা পেয়েও সত্য কে মিথ্যা মর্মে প্রতিবেদন দেওয়ার ফলে আমি ন্যায় বিচার পেতে ব্যর্থ, দীর্ঘ বিলম্বিত ও হতাশ হয়ে পড়ছি। ভুক্তভোগী ধর্ষিতা রোজির (বাদীপক্ষের) বিজ্ঞ আইনজীবী এড. সিরাজুল ইসলাম জানান, বাদীর অভিযোগের যথাযথ সত্যতা থাকা সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তা অন্যায় ভাবে অভিযোগ মিথ্যে মর্মে প্রতিবেদন দেওয়ায় আমরা সংক্ষুব্ধ ও ন্যায় বিচার বঞ্চিত হওয়ার আশংকায় মাননীয় আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা কতৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজীর আবেদন করব। আশা করি, বিজ্ঞ আদালতের সময় বিবেচনায় বাদী রোজি ন্যায় বিচার পাবেন। বাদীর দায়েরকৃত মামলাটি চলমান থাকা বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি এড. সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম বলেন, বাদীর আর্জি পর্যালোচনায় ঘটনাটি মিথ্যা সাব্যস্তের কোন অবকাশ নাই, তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনা মিথ্যা মর্মে রিপোর্ট দিলেও অভিযুক্ত ধর্ষক রেহাই পাওয়ার আশংকা নাই। এদিকে অভিযুক্ত ফারুক’র বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার সাথে সরাসরি ও ফোনালাপে যোগাযোগ করতে না পারায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নাই।