মানতে ও মানাতে গোটা জীবনটা ফুরিয়ে যায়!

 

আমাদের জীবনের সাথে এমন কিছু মানুষ জুড়ে যায় যারা নিজেরা যা পছন্দ করে না,
তা অন্য কেউ পছন্দ করুক সেটা মানতে পারে না! এরা অন্যের জীবনের দুঃখ
বাড়ায়! সাথীর সুখ ও শখ হত্যা করে। বুঝতেও চায় না, প্রত্যেকের আলাদা
আলাদা রুচি ও পছন্দ-অপছন্দ আছে। এরা নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা অন্যের ওপর
চাপিয় দিয়ে তৃপ্তি অনুভব করে। কেউ সে সিদ্ধান্ত মানতে না চাইলে বিপত্তি
বাঁধায়! হাউকাউ করে! অথচ তাদের ইচ্ছাপূরণে অন্য কেউ বাঁধ সাধলে খণ্ডপ্রলয়
ঘটায়! এই যে বিপরীতধর্মী চরিত্র এদের সাথেও হাসতে হয়, বসে কথা বলতে হয়
এবং সহমত হতে হয়! একবালিশে মাথা রেখেও ভিন্ন ভিন্ন ভাবনায় হারাতে হয়!
একফালি চাঁদ তখন ভভিন্ন ভিন্ন অর্থ নিয়ে হাজির হয়! এমনই বৈচিত্র্যময়
দ্বন্দ্ব পাড়ি দিতে দিতে একটা গোটা জীবন ফুরিয়ে যায়!

বন্ধু কিংবা সঙ্গী পছন্দ-অপছন্দকে সম্মান করেও একসাথে সুখে-শান্তিতে
কাটানো যায়! তবে সমস্যা হচ্ছে, অন্যের চাওয়া-পাওয়াকে সম্মান জানানোর জন্য
যে সহিষ্ণুতা ও সহনশীলতার মানসিকতা আমাদের মাঝে থাকা দরকার তা
প্রবলভাবে অনুপস্থিত। কর্তৃত্বপরায়ণ প্রবণতা ও চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতা
আমাদেরকে পরিচালনা করছে! কেবল নিজের শখ-আহ্লাদ পূরণ হলে, ইচ্ছা-
অনিচ্ছা প্রাধান্য পেলেই ভাবি জিতে গেছি! অন্য কে, কী পেল? কে মন খারাপ
করলো? কে অশ্রুবিন্দুর বিসর্জনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো কিংবা কার ইচ্ছার মৃত্যু
ঘটলো সেই হিসেবে খতিয়ান আমাদের কাছে থাকে না!

আমরা ইচ্ছা করেই সে হিসাব রাখি না! স্বার্থপরতা এবং আত্মভোগের রোগ
আমাদেরকে গ্রাস করেছে! কে পেলো আর কে হারালো-সেদিকে আমাদের নজর
নাই, আমি কতোখানি পেলাম, আরও কী কী পেতে পারি-সেটার ধ্যানেই আছি।
জ্ঞান টাকার নিচে, সম্মান ভয়ের অধীনে আর মানবিকতা স্বার্থবাদের রোলারের

তলে রোজ রোজ পিষ্ট হয়ে। সততা, সাধুতা এবং শুদ্ধাচার কাগজ-কলম আর
বক্তৃতার বিষয়, নারী-পুরুষের সমতা সভা-সেমিনারেই আটকে রয় এবং আজকের
জনমত ক্ষমতার বাহুবলে আটকে যায়!

যে মানুষের ভালো থাকা, ভালো রাখা অন্যকারো সাথে জুড়ে যায় আর সেখানে
অবহেলা, অপমান বেড়ে যায় তবে স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে। সাধের শ্রাদ্ধ ছাড়াই দাফন
হয়! জীবনসঙ্গী হয়ে, বিশ্বাস-ভরসার আশ্রয়স্থল হয়েও যদি কেউ মান-
অভিমানের খোঁজ না রেখে এড়িয়ে চলে তবে মন থেকে আরেকটি মন হারিয়ে গেছে-
সে খবর কি ঠিক ঠিকানায় পোঁছে? দীর্ঘজীবনের পরতে পরতে মানিয়ে নেওয়ার
পাঠ থাকে, থিতু হওয়ার আদেশ থাকে কিন্তু সে-সব যখন সাধ্যসীমা অতিক্রম
করে তখন দুঃখের সাথে দেখা হয়! আমরা জয় করার চেয়ে কেড়ে নেওয়াকে সহজ
ভাবি! সম্পদের ক্ষেত্রে এ রীতি বাহবা পেতে পারে কিন্তু প্রশ্নটি যখন মন
সংশ্লিষ্ট, সুখ-দুঃখ যখন সুযোগের অনুঘটক তখন তা জয় করাই শ্রেয়!

সঙ্গীর কোন অভ্যাস, কোন ইচ্ছা, কোন শখ হত্যা করার আগে ভাবতে পারেন,
নিজের অনুরূপ কোন ইচ্ছা, অভ্যাস-শখ যদি কেউ কেড়ে নিতো তবে মনের মধ্যে
কেমন অনুভূত হতো? ভালো থাকা ও রাখার প্রশ্নে অপরের থেকে কিছু কেড়ে
নেওয়ার আগে কিংবা কাউকে কোনকিছু থেকে বঞ্চিত করার পূর্বে নিজের দিকে
তাকাতে হয়! আমি কতটুকু ছাড় দিয়েছি, আমি কতটা মানিয়ে নিয়েছি-সেই বিষয়টিও
বিবেচ্য হলে সুখে ব্যঞ্জনা আরও অধিক গতি পাবে! কিছু কিছু শখ-ইচ্ছা থাকে
যা ব্যাহত হলেই মন খারাপ ঘটে। হয়তো পরিস্থিতি ও অবস্থান বিবেচনায়
প্রকাশের সুযোগ ও ইচ্ছার প্রতিকূলতা থাকে! তবে সঙ্গের মানুষটির সেটা বুঝতে
হয়। মনের খোঁজ রাখতে হয়। বিরুদ্ধমত ও আলাদা আলাদা পছন্দ-অপছন্দ নিয়েও
একসাথে বাঁচা যায়। সেজন্য পারস্পরিক সম্মানবোধ এবং সহিষ্ণুতার শিক্ষা
থাকতে হয়! অথচ আমরা সহিংসতার আক্রোশ নিয়ে সামনে দেখি! অন্যকে ঠকিয়ে
খুব হাসি! নিজেকেই কেবল ভালোবাসি!

Exit mobile version