মালয়েশিয়া শ্রমবাজার ‘আমরা গরিব মানুষ, ঋণ করে টাকা দিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতেছি’

বগুড়ার শাজাহানপুর থানার ইয়াসিন আলী দীর্ঘ ৭ মাস যাবৎ দালালের পিছনে টাকার জন্য ছুটছেন। ঋণ করে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য নিজ গ্রামের এক দালালকে ৬ লাখ টাকা দেন। সেই দালাল টাকা নিলেও মালয়েশিয়া যাওয়ার সব ব্যবস্থা করতে পারেননি। গত বছরের ৩১মে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসেও খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হয় ইয়াসিনকে। তারপর থেকে নিজের টাকা ফেরত পেতে দালালের পিছনে পিছনে ঘুরেছেন।

দালাল নানা আশ্বাস ও হুমকি দিয়ে ইয়াসিনকে এতদিন ঘুরিয়েছেন। তাই নিজের টাকা ফেরত নয়তো মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য গতকাল বগুড়া থেকে ঢাকায় এসেছেন।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করার সময় ইয়াসিনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

 

তাদের আজকের আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ৫ লাখ টাকা ঋণ করে আমি দালালকে দেই। সেই দালাল আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এখন বাসায় থাকতে পারি না। সব সময় ঋণের টাকার জন্য বাড়িতে মানুষ আসে। তাই আমার টাকা ফেরত পেতে নয়তো আমি যেন মালয়েশিয়া যেতে পারি সেজন্য আন্দোলনে এসেছি। ঋণ করে টাকা দিয়ে এখন দালালের দ্বারে দ্বারে ঘুরতেছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ড. ইউনূস স্যারের কাছে অনুরোধ আমাদের এই সমস্যাটি তিনি সমাধান করবেন।

এই ইয়াসিন আলীর মতো প্রায় কয়েকশত মালয়েশিয়াগামী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে এসেছেন। যারা প্রত্যেকেই টাকা দিয়েছেন কিন্তু মালয়েশিয়া যেতে পারেননি।

জানা গেছে, মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীরা বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় কারওয়ান বাজার মোড়ের সার্ক ফোয়ারা চত্বরের সামনে জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এর ফলে কারওয়ান বাজার থেকে পান্থপথ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে দেড় ঘন্টারও বেশি সময় ধরে তারা বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সড়ক অবরোধে অংশগ্রহণকারীদের সরিয়ে দেয়। তারপর যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়। এরপর দুপুর ১২টার দিকে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।

 

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও প্রায় ১৮ হাজার কর্মী ফ্লাইট সংকটের কারণে গত বছরের ৩১শে মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ায় এখন তাদের কাজে যোগদানের নিশ্চয়তা মেলেনি।

আন্দোলনে বিক্ষোভকারীরা পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে।

সেগুলো হলো- যেসব কর্মী নির্ধারিত সময়ে যেতে পারেননি, তাদের দ্রুত মালয়েশিয়ায় পাঠানোর দিন-তারিখ নির্ধারণ করতে হবে; যাদের ই-ভিসা হয়েছে কিন্তু ম্যানপাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি, এবং যাদের সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে, তাদের সবাইকে মালয়েশিয়া পাঠাতে হবে; ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে আটকে থাকা সকল কর্মীকে পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে একটি রেমিট্যান্স ফাউন্ডেশন গঠন করার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

এছাড়া, সরকার কর্তৃক আটকে থাকা কর্মীদের পাঠানোর সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, গত বছরের ৩১ মে ভিসা ও কাজের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও প্রায় ১৮ হাজার মালয়েশিয়াগামী কর্মী টিকিট জটিলতায় যেতে পারেননি। আর সিন্ডিকেট ও নানা অনিয়মের কারণে গত বছরের ১ জুন বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়া শ্রমবাজার। এখন পর্যন্ত শ্রমবাজারটি বন্ধ রয়েছে। তবে অন্তর্বর্ন্তীকালীন সরকার শ্রমবাজারটি চালু করার জন্য কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের বিষয়েও কিছুদিন আগে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

গত ১৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার মোহদ শুহাদা ওসমান। এসময়  প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেতে না পারা ১৮ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সুযোগ করে দিতে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারের প্রতি আহ্বান জানান।

সে সময় মালয়েশিয়া হাইকমিশনার মোহদ শুহাদা ওসমান জানান, এ বিষয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি যৌথ কারিগরি কমিটি গত ৩১ ডিসেম্বর কুয়ালালামপুরে একটি সভা করেছে এবং এসংক্রান্ত আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

এদিকে ভিসা থাকার পরও মালয়েশিয়া যেতে না পারা ১৮ হাজার কর্মীকে আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে পাঠানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিন। তিনি বলেন, এখন সব কিছু নির্ভর করছে মালয়েশিয়ার ওপর। তারা যদি বলে ১৫ দিনের মধ্যে লোক নেবে তাহলে আমরাও ১৫ দিনের মধ্যে পাঠাবো।

Exit mobile version