মিরসরাই প্রতিনিধি
মিরসরাইয়ে আওয়ামী ও যুবলীগের সংঘর্ষ, গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। শনিবার (১৭ জুন) বিকাল ৪ টার দিকে উপজেলার ১১ নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামে মঘাদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিট গ্রুপের সাথে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত হয় মঘাদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষে ছাত্রলীগ কর্মী সাকিব, নিশান, রবিন এবং নিয়াজ মোর্শেদ এলিট গ্রুপের যুবলীগ নেতা আসিফ রহমান শাহীন, মোহাম্মদ আলী, রমজান আলী বাবলু, শওকত আজিম রিংকু, সাহাব উদ্দিন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় যুবলীগ নেতা নিয়াজ মোর্শেদ এলিটকে দায়ী করে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তবে এলিটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তার ওপর হামলার ঘটনায় আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মঘাদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফায়েল উল্ল্যাহ চৌধুরী নাজমুল অভিযোগ করেন, চট্টগ্রামে ছাত্রদলের তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুরের প্রতিবাদে মঘাদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ সমাবেশ করে। ওই সমাবেশে কোন কারণ ছাড়া এলিটের বহর থেকে সমাবেশে গুলি ছোঁড়া হয়। এরপর উভয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। পরে এলিটের গাড়ি বহর থেকে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গুলি করে আহত করা হয়। ছাত্রলীগ কর্মী সাকিব, নিশান ও রবিন আহত হয়। তাদের মধ্যে সাকিব এবং নিশান মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
অবশ্য এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিট দাবী করেন, শনিবার উপজেলার ১১ নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়ার কবর জিয়ারত শেষে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচারণার সময় মিরসরাই ইকোনমিক জোনের সড়কে বালুর ট্রাক দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মঘাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে তৌহিদ আনোয়ার বাপ্পি, আবদুল্লাহ আল নাঈম রবিন, ফিরোজ খান, আবু নছর রিপন, মোমিনুল ইসলামসহ প্রায় অর্ধশত অস্ত্রধারী এই হামলা চালায়। এসময় ৪ টি গাড়িতে ভাংচুর চালায় এবং হামলায় আহত হয় যুবলীগ নেতা আসিফ রহমান শাহীন, মোহাম্মদ আলী, রমজান আলী বাবলু, শওকত আজিম রিংকু ও সাহাব উদ্দিন।
এ বিষয়ে মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মাষ্টার বলেন, চট্টগ্রামে ছাত্রদলের তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুরের প্রতিবাদে মঘাদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ ছিল। সমাবেশ শেষে যে যার মত বাড়িতে চলে গেছেন। বিকালে উপজেলার মিয়াপাড়া এলাকায় মঘাদিয়া নুরুল আবছার চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুর্ধ্ব-১৭ ফুটবল টুর্নামেন্টের অনুশীলন চলছিল। এসময় তাদের কোচ ছাত্রলীগ কর্মী রবিনকে ডেকে নিয়ে আমার লোক বলে মারধর করে। খবর পেয়ে আমি দ্রুত গিয়ে মিয়াপাড়া এলাকায় গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে এলিটের পিএস আসিফ রহমান শাহীন আমার উপর চড়াও হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা একত্রিত হলে এলিটের গ্যানম্যান এলোপাতাড়ি গুলি করে। এতে মঘাদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আনোয়ার বাপ্পির মোটরসাইকেলসহ একাধিক গাড়ি ভাংচুর করে এবং ছাত্রলীগের ৫ কর্মী আহত হয়।
মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামে ছাত্রদলের তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুরের প্রতিবাদে শনিবার মঘাদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এসময় নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের গাড়ি বহর থেকে সমাবেশে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে গুলি ছোঁড়ে এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হয়।’
তিনি আরো দাবী করেন, ‘মিরসরাই আওয়ামী লীগে কখনো বিভক্তি ছিল না। ইদানিং বিএনপি পরিবারের সদস্য এলিট এখানকার আওয়ামী মূলধারার শক্তি খর্ব করে বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ঝামেলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। শনিবার এলিটের বহর থেকে এক ব্যক্তি আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ে।’
জানতে চাইলে মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন বলেন, ‘মঘাদিয়া ইউনিয়নের মিয়াপাড়া এলাকায় এলিট তার বহর নিয়ে মানুষজনের সাথে কথা বলছিলেন। এসময় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের সাথে তাদের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে উভয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।’
গ্যানম্যানের গুলি ছোঁড়ার বিষয়ে ওসি বলেন, ‘যদি এটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত অস্ত্র এবং গ্যানম্যান হন তাহলে নিরাপত্তার কারণে করতে পারেন। তবে এটি বৈধ অস্ত্র বা গ্যানম্যান কিনা আমরা অবশ্যই খতিয়ে দেখবো।
তবে অস্ত্র ও গ্যানম্যান সম্পর্কে যুবলীগ নেতা নিয়াজ মোর্শেদ এলিট দাবী করেন, এটি তার বৈধ অস্ত্র ও গ্যানম্যান। সরকার তার নিরাপত্তার কারণে বৈধ অস্ত্র ও গ্যানম্যান দিয়েছে। গ্যানম্যানের কারণেই তিনি শনিবারের ঘটনায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। তিনি আরো বলেন, তার এবং তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি আইনী পদক্ষেপ নিবেন।
এদিকে শনিবার বিকাল সাড়ে ৫ টার নাগাদ আওয়ামী লীগের সমাবেশে এলিটের বহর থেকে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ। সমাবেশ থেকে থেকে এলিটকে বিএনপি জামায়াতের এজান্ডা বাস্তবায়নকারী দাবি করে রবিবার পুণরায় আরো একটি প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়।