মিরসরাইয়ে বিএনপি-যুবদল অনুসারীদের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা নিহত, মামলা দায়ের; গ্রেফতার ৪

ছবি সংযুক্ত

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা স্টেডিয়ামে চলছে মাসব্যাপী বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটির ব্যানারে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। গত ২০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই মেলা এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। অবশেষে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মেলা এলাকায় মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইন ও মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহবায়ক কামরুল হাসানের অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ জন আহত ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহত হয়েছে। তার নাম জাহেদ হোসেন মুন্না (২২)। সে মিরসরাই পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দলের ৬ নং ওয়ার্ডের আহবায়ক। সোমবার রাত সাড়ে ১০ টার সময় সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় রাতেই মামলা দায়ের (নং-৮) করেন জাহেদ হোসেন মুন্নার ভগ্নিপতি আরাফাত হোসেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহবায়ক কামরুল হাসান (৩৭), নাজমুস সাকিব মারুফ (২২), শাহ আলম (৪৭), আরমান (২৬) কে গ্রেফতার করছে। সংঘর্ষের পর থেকে বাণিজ্য মেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যার পর মিরসরাই স্টেডিয়ামে চলা মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলায় মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইনের অনুসারীদের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহবায়ক কামরুল হাসানের অনুসারীদের কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে মেলা প্রাঙ্গন থেকে বের হয়ে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে কামরুলের অনুসারীরা জাহিদ হুসাইনের অনুসারীদের উপর হামলা চালায়। হামলায় মিরসরাই পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দলের ৬ নং ওয়ার্ডের আহবায়ক জাহেদ হোসেন মুন্না (২২) নিহত হয় এবং ৮ জন আহত হয়। আহতরা হলেন সজিব (২৩), আরাফাত (২৩), আসিফ (২০), রাহাত (২০), হাসান (২৮), রাশেদ (১৯), হৃদয় (২৭), শাকিল (২০)। আহতরা মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মিরসরাই সেবা আধুনিক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। রাতেই গুরুতর আহত শাকিলকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। নিহত জাহেদ হোসেন মুন্না মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইনের অনুসারী। মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইন ও মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহবায়ক কামরুল হাসান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক ও মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের অনুসারী।
সংঘর্ষে আহত সজিব বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মিরসরাই স্টেডিয়ামে চলা বাণিজ্য মেলায় পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইন ভাইয়ের আমরা কিছু অনুসারী মেলা গেইটে সিএনজিচালিত অটোরিক্সার টোল আদায়সহ শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করছিলাম। এরিমধ্যে অতর্কিতে পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক কামরুল হাসানের ২০-২৫ জন অনুসারী ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে।
এই বিষয়ে মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইন বলেন, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। এই ঘটনায় বিএনপির কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমি আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। নিহতের পরিবারের পাশে থাকবো।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তন্ময় জামশেদ আলম বলেন, মুন্না নামের একজনকে নিহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এছাড়া আহত রাহাত, হৃদয় ও শাকিলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তম্মধ্যে শাকিলের অবস্থা আংশকাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান জানান, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহতের ঘটনায় ১১ জনের নাম উল্লেখপূর্বক এবং অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত জাহেদ হোসেন মুন্নার ভগ্নিপতি আরাফাত হোসেন। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহবায়ক কামরুল হাসানসহ ৪ জন গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Exit mobile version