মিরসরাইয়ে ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খন্দকার, উদ্ধার করলো সেনাবাহিনী

মিরসরাই প্রতিনিধি
মিরসরাইয়ে দলের ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের হাতে ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সংসদ সদস্য এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও ডিজিটাল ব্যাংকিং নগদ এর নির্বাহী পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের বাবা কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনিরুল ইসলাম ইউসুফের উপজেলার ১২ নং খৈইয়াছড়া ইউনিয়নের নয়দুয়ার গ্রামের বাড়ি গিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়েন চট্টগ্রাম বিএনপির এ শীর্ষ নেতা। এসময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করলে নয়দুয়ার এলাকায় ঢাকামুখী অংশে গাড়ি চলাচল সাময়িক সময় বন্ধ ছিল।
জানা গেছে, দলের দুঃসময়ে আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী ত্যাগী মরহুম নেতাদের কবর জেয়ারত করতে শনিবার মিরসরাইয়ে আসেন গোলাম আকবর খোন্দকার। বেলা ১২ টার দিকে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনিরুল ইসলাম ইউসুফের বাড়িতে যান তিনি। তার সাথে ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন, সাবেক আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতাকর্মী। ওই বাড়ীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনিরুল ইসলাম ইউসুফের ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিট প্রায়ই দলীয় সভা সমাবেশ করতেন। তাই ওই বাড়ীতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার যাওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা দলে দলে জড়ো হয়ে বাড়িটি ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং বাড়ির পাশ^বর্তী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে কেন্দ্রীয় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমের নির্দেশে ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চেয়ারম্যান। এসময় নেতাকর্মীদের শান্ত করে প্রায় ৪ ঘন্টা পর সেনাবাাহিনীর সহযোগিতায় অবরুদ্ধ বিএনপি নেতা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারকে ঘটনাস্থল থেকে বিকেল ৪ টার দিকে বের করে ফিরে যেতে সাহায্য করেন। এসময় নেতাকর্মীরা মনিরুল ইসলাম ইউসুফ ও নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের নাম ধরে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। বিএনপি নেতাদের বহনকারী গাড়ির সামনে ও পেছনে নিরাপত্তা দিতে দেখা যায় সেনাবাহিনীর দুইটি গাড়িকে। তাদের বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে উত্তেজিত নেতাকর্মীরা ভুয়া ভুয়া শ্লোগান দিতে থাকেন।

এদিকে এ ঘটনায় পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন মিরসরাই উপজেলা বিএনপি ও অবরুদ্ধ বিএনপি নেতা গোলাম আকবর খন্দকার।
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও নগদ এর নির্বাহী পরিচালক, শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী নিয়াজ মোর্শেদ এলিট নিজের গ্রামের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন এমন খবর ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে। শনিবার বেলা ১২ টার দিকে তাকে উদ্ধার করতে ওই বাড়িতে যান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার। এ খবর শুনে দীর্ঘ ১৫ বছর শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনের শিকার বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। পরে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারকে উদ্ধার করতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চেয়ারম্যানকে ফোন দিলে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন একং তাঁকে ফিরে যেতে সাহায্য করেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনিরুল ইসলাম ইউসুফের বাড়ীতে তারই ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও নিয়াজ মোর্শেদ এলিট প্রায়ই দলীয় সভা সমাবেশ করতেন। ওই বাড়ীতে গোলাম আকবর খন্দকার যাওয়ায় নেতাকর্মীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। এসময় বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা নানা শ্লোগান ও মিছিল দিতে থাকেন।’
গোলাম আকবর খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মনিরুল ইসলাম ইউসুফ কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য। শনিবার তিনি আমাকে চায়ের দাওয়াত দিলে আমি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ইউসুফ সাহেবের বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে দলের কিছু নেতাকর্মীর মুখে শুনি ইউসুফ সাহেবের ছেলে নিয়াজ মোর্শেদ এলিট যুবলীগ নেতা। এসব অভিযোগ কেউতো আমাকে আগে দেয় নাই। স্থানীয় নেতাদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে একটি অংশ জড়ো হয়েছে। এটি কোনও বিক্ষোভ নয়।’
উল্লেখ্য, মিরসরাই উপজেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে দুইটি আলাদা গ্রুপ রয়েছে। একটির নেতৃত্বে আছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন। অপরটির নেতৃত্বে আছেন আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান। যিনি সর্বশেষ ২০১৮ সালে মিরসরাই আসন থেকে বিএনপির হয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি ২০১৪ সালে দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

Exit mobile version