Site icon দৈনিক দেশের সংবাদ deshersangbad.com

যত্নে রাখুন, যত্নে বাঁচুন!

 

প্রেম-মোহ কিংবা নশ্বর দেহ কতদিন আরেকটা মানুষ ধরে রাখতে পারে? কাগজ-
কলমের সম্পর্ক দু'টি নাম পাশাপাশি লিপিবদ্ধ করতে পারে বটে কিন্তু মন
দু'টোকে মিলমিশিয়ে একত্র করে রাখা সহজ কাজ নয়! বিশ্বাস বাঁচিয়ে রাখার
জন্য আরও বাড়তি কিছু চাই! যা দেহাতিরিক্ত মনের অস্তিত্ব স্বীকার করে।
সেটা কী? কেয়ারিং তথা অপরের জন্য যত্নবান হওয়া। লক্ষ্য করলে দেখবেন, যে
নিয়মিত খোঁজখবর রাখে, মন খারাপের সময় সান্ত্বনা দেয়, বিপদের সময় পাশে
দাঁড়ায় কিংবা ভরসার হাত রাতে পিঠে- সে দূরের মানুষ হলেও আপন হয়ে ওঠে!
মনের অনেকখানি জিতে নেয়! অমিলের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে মনের কাছাকাছি
পৌঁছায়। হয়তো মনে মনে লেনদেনও করে! ঋণী করে আরেকটা মানুষকে! কাউকে
যত্ন করলে এই ফল-ফসলটুকু মেলে!

শারীরিক উত্তেজনা সাময়িকের! মোহ এক সময় ফুরিয়ে যায়! প্রেম একসময় নিভে
আসে যদি এসবে যত্ন না থাকে। তখনই একজন মানুষ আরেকজন মানুষের কাছে
দেবতা হয়ে ওঠে কিংবা বিরহে ব্যাকুল সুর তোলে যখন সে সম্পর্কে পারস্পরিক
কেয়ারিং মনোভাব থাকলে। শ্রদ্ধা-সম্মান-বিশ্বাস না থাকলে কিছুই অবশিষ্ট
থাকে না; তিক্ততা ব্যতিরেকে! মান-অভিমানের ভাষা বোঝা, সুখ-দুঃখ তলিয়ে
দেখা- এই দরদটুকুন না থাকলে দু'জন মানুষ দু'জনার হয়ে বাঁচতে পারে না। কত
শত্রু আপন হয়ে যায়, কত দুর্জণ সুজনে ছড়ায়-সেসব এইতো এই যত্নে! মানুষকে
যত্ন-আত্তি করে যত সহজে হৃদয় জয় করা যায়- অন্য কোনভাবেই সেটা সম্ভব
নয়! অথচ মানুষ জোর করে জবরদখল করতে যায়! মন তো চর কিংবা ভূমি নয়! সে
কোমল বিছানা! যা প্রেম চায়, দরদ চায়!

বিপুল সম্পদ নিয়ে কিংবা অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে কাউকে আপন করা যায় না বরং
কেবল কৃপণতার দোষ ঘুচানো যায়! ফলাফল ফুরিয়ে গেলে কিংবা সম্পর্কে শৃঙ্খলা

এলে প্রিয়জন প্রয়োজনীয় ব্যানার তোলে এবং বাস্তবতা জানান দেয়! তখন বোল
বদলে যায়! রস দিনে দিনে কষে পরিণত হয়! ভাষার প্রেমটুকুন টুপ করে ঘৃণায়
বদলে যায়! সোনা-বাবু কদাকার হয়ে ওঠে! অথচ সম্পর্কে যত্ন নিলে সেখানে
রত্ন বেরুবেই! কেউ কারো কেয়ার করেছে অথচ সে পিঠ দেখিয়েছে এমন দৃষ্টান্ত
ইতিহাসে বিরল! মানুষ তো পরের কথা, কুকুর-বিড়ালেও যত্ন পেলে সে পোষ মানে!
আপনা-আপনি প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়! মানুষ একটুখানি যত্ন পেলে মুহুর্তেই
শূণ্যপুরে হৃদয় লিখতে দিতে পারে! ভর দুপুরে সূর্য মাথায় নিয়ে করতে পারে অসীম
ক্ষণের অপেক্ষা!

কাউকে ধমকিয়ে, নিয়মের শৃঙ্খলায় জড়িয়ে কিংবা পাহারা দিয়ে বিশ্বস্ত রাখা যায়
না। বিস্তর ভোগের সামগ্রী দিয়ে মনের ঘরে আবাস হয় না! মনের চাওয়া-পাওয়া,
ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য দিয়ে তবেই মন জয় করতে হয়! যে মাথায় হাত রাখে, যে
ভালোবেসে আগলে রাখবে কিংবা যে বিপদের সময় পরামর্শ দিয়ে পথ দেখাবে-
মনের অজান্তেও তাকে মনে পড়ে! ভুলেও ভুলে যাওয়া যায় না! বুকের অনেকখানি
ঘিরে সেই সুজন প্রিয়জন হয়ে থাকে! যে স্রোত জোয়ারে ঠেলে আসে এবং ভাটিতে
নেমে যায়, যে পথ স্বার্থে খোলে আবার মুহূর্তে আটকে যায়-সেখানে না থাকে
প্রেম আর না থাকে মায়া। প্রিয়জনের শীতল ছায়া ছাড়া জীবন প্রাণ পায় না!

সম্পর্কে বিশ্বাস খুব জরুরি। বিত্ত-বৈভব কতখানি আছে আর কী নাই সেটা তখন-
ই বিবেচ্য হয় যখন সে সম্পর্কে যত্ন-সম্মান থাকে। কেউ কাউকে তাচ্ছিল্য
করবে আর সে সব দায়-দেনা মিটিয়ে দেবে- এমনটা ভাবাও পাপ! অত্যন্ত
পরিতাপের হলেও সত্য, ভালো কাজের কাজির সংখ্যা শেষ বিকেলের শিশিরের মত
নাই বললেই চলে! সম্পর্ক যদি গোয়েন্দাগিরির হয় কিংবা আশরাফ-আতরাফের
তুলনায় বেলা বয়ে যায় তবে সে দিন মিছে! মনের যত্ন না নিয়ে কেউ কারো মনে
স্থান পেয়েছে কিংবা যত্ন খেয়েছে-এমন আশা এই সেদিনও অকল্পনীয় ছিল!
আজকাল একসাথে থাকার অভিনয় হয়, সব মেনে যাওয়ার ন্যাকামি হয়- তবে

ক'জনে পারে আর ক'জনে মন থেকে বিশ্বাস কর- সেটা অমীমাংসিত জীবনীকাব্য!
ছলনা একসময় ছলছলিয়ে সামনে আসে!

তবে সান্ত্বনায় সাবধান এবং যত্ন-আত্তি গ্রহনে সচেতন থাকতে হবে! কোনটা
ফাঁদ, কোনটা ক্ষোভের লোভ এবং কোনটা আসল মানুষের ছায়া সে হিসাব বেহিসাব
থেকে গেলে চোখের পানি ফুরাবে না বটে! মেঘে ঢাকা চাঁদেরও একফোঁটা বেদনা
লুকানোর থাকে! কে, কোন স্বার্থে যত্নবান হচ্ছে, কী নিতে চাইছে আর কী দিতে
যাচ্ছে সেখানে সজাগ দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি! অনেক মানুষের মধ্যে একজন খাঁটি
মানুষ বাছাই করতে পারলে এই জীবনে দুঃখের টিকিটির ছায়াও আর থাকবে না!
মানুষকে মনের মধ্যে রাখতে যেভাবে যত্নের দরকার, ভুল মানুষে যত্ন নিলে জীবন
অপার দুঃখের সাগর হয়ে উঠতে পারে! সে আসুক বসন্তে-যে যত্ন পাবে! যদি
এরপরেও আপন হতে না পারে সে দুর্ভাগ্য তাদের সামনে-পেছনে বেদনার তীর হয়ে
চলে! জীবন পুষ্প-পল্লবে রঙিন হয়ো উঠুক! মানুষেরা যত্নে বাঁচুক, যত্নে রাখুক।

Exit mobile version