গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের উদ্যোগে ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ মঙ্গলবার, সকাল ১০:৩০ মিনিটে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে “ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, নৈরাজ্যকর অবস্থা নিরসনে কঠোর ভাবে আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ, দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করার দাবিতে সমাবেশ” অনুষ্ঠিত হয়।
গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সামছুল আলমের সভাপতিত্ব এতে বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম-এল) এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড হারুন চৌধুরী, সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসডিপি)’র আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি)’র মহাসচিব হারুন আল রশীদ খাঁন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক খান মোঃ নুরে আলম, যুগ্ম আহবায়ক নাজমা বেগম, বিপ্লবী ছাত্রমঞ্চের আহবায়ক আনন্দ আহমেদ ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি)’র ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মনির মিয়া প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, এতো রক্ত, এতো মৃত্যু, আহতদের আর্তনাদ, সন্তানহারা বাবা-মা, ভাই হারা বোন, বোন হারা ভাইয়ের কান্নার পর ৫ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে স্বৈরতন্ত্রের পতনের পর দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে এমন একজনের জন্য। যিনি সর্বজন গ্রহনযোগ্য হয়ে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে একটি অবাধ সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। জনগণ মুক্ত পরিবেশে অবাধে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, নির্বাচিত সরকার সুশাসন নাগরিক ও মানব অধিকার নিশ্চিত, দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।
নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিলে জনআকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়। ড. ইউনুসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ কাজ শুরু করলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সকল অংশীজন সর্বাত্বক সমর্থন ও সব ধরনের সহযোগিতা করে। প্রথমে ছয়টি ও পরে আরো চারটি সংস্কার কমিশন গঠন করলে রাজনৈতিক দল এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, সমর্থন করে। কমিশন গুলোকে একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও সংস্কার কমিশনের কাজের দৃশ্যমান কোন কিছুর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
পতিত স্বৈরাচার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্য, দেশের পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা মোকাবিলায় দেশের সকল নাগরিকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বিশ্বকে অবাক করে দেয়। অতঃপর সময়ের সাথে সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত কতিপয় উপদেষ্টার কথা ও কাজ গণ-অভ্যুত্থানের জন আকাঙ্ক্ষার বিপরীত চিত্র প্রকাশ পায়। জাতীয় ঐক্য বিনাশী নানা ষড়যন্ত্র পরিলক্ষিত হয়। পাহাড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে যৌথ বাহিনীর অভিযান হত্যা, সংক্ষুব্ধ আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ভুঁইফোড় সংগঠন লেলিয়ে দেওয়া, বকেয়া বেতন ভাতার দাবীতে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বলপ্রয়োগে দমন, গুলি করে হত্যা। একদিকে নতুন কর্মসংস্থান নাই বিভিন্ন শিল্পকারখানা বন্ধের কারণে বেকারত্বের পাশাপাশি অপরাধ বেড়ে গেছে। বাজার সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ। সময়ের সাথে সাথে পুলিশের আচরণ বিগত স্বৈরশাসকের লেঠেল বাহিনীর মতো হয়ে উঠছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততা পতিত স্বৈরাচার কে মাথাচাড়া দিয়ে উঠার সুযোগ করে দিচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিন যতই যাচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপদেষ্টার কথায় সমতা ও নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এমতাবস্থায় সংস্কারের নামে আর কালক্ষেপণ না করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করনীয় দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা।