রংপুর অঞ্চলে ৮৩ হাজার ১৬১ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ

রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে রংপুর অঞ্চলের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় চলতি মৌসুমে সরিষার চাষ হয়েছে বেশি। প্রকৃতির সবুজ ফ্রেমে হলুদে ভরে উঠেছে। ভালো মূল্যে আশায় সরিষা ক্ষেত পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী রংপুর অঞ্চলের গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও লালমনিহাট জেলায় চলতি মৌসুমে ৮৩ হাজার ১৬১ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। গত বছর রংপুর অঞ্চলে ৫২ হাজার ৫৫২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছিল। সেই হিসাবে এ বছর সরিষার চাষ বেড়েছে ৩০ হাজার ৬০৯ হেক্টর জমিতে। জানা যায়, এ বছর রবি মৌসুমে কুড়িগ্রাম জেলায় ২৬ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে, যা রংপুর অঞ্চলের সর্বোচ্চ। এ ছাড়া রংপুরে ২৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১৭ হাজার ৫৭৪ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৪ হাজার ৮৮০ হেক্টর ও নীলফামারী জেলায় ৮ হাজার ৬৭২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। নদীর বুকে জেগে ওঠা বালুচরের কোলঘেঁষা মেঠোপথ আর চরাঞ্চলের কৃষিতে দোল খাচ্ছে সরিষা। হলুদ ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠ। সবুজের আগায় ভরা সরিষা ফুলে ঘুরপাক খাচ্ছে মৌমাছি। দেখে মনে হয় মাঘের হিম শীতল বাতাস আর সূর্যের লুকোচুরিতে হাসছে কৃষকের স্বপ্ন। তিস্তা-ঘাঘট নদী বেষ্টিত রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কিসামত হাবু গ্রামের আব্দুল মতিন বলেন, এ বছর ৬৬ শতক জমিতে সরিষার চাষ করেছি। সারিষার গাছও ভালো হয়েছে। গত বছর ২২ শতক জমিতে সরিষা চাষ করে যা লাভ হয়েছিল, এবার ফলন ভালো হওয়ায় তার কয়েকগুণ হতে পারে। মাঘের শীতের ওপর ফসলের ফলন কিছুটা নির্ভর করছে এমন শস্কার জানিয়ে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের চর গাবুড়া গ্রামের কৃষক জাবেদ আলী বলেন, বেশি শীত এবং তাপমাত্রা কমলে সরিষার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক মাস পর সরিষা ঘরে তোলার সময় ন্যায্যমূল্য দাম পেলে আগামীতে সরিষার চাষ আরও বাড়বে বলে মনে করছে কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হয়। ন্যায্যমূল্য পেলে আমাদের কৃষকের আগ্রহ বাড়ে। দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ লক্ষ টন। এর মধ্যে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী হতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় মাত্র ৩ লক্ষ টন, যা চাহিদার শতকরা ১২ ভাগ। বাকি ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করার কারণে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, এ বছর সরিষা চাষে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার কারণে চাষ কিছুটা বেড়েছে। অন্য ফসলের চেয়ে সরিষা উৎপাদনে খরচ অনেক কম। লাভ বেশি হওয়ায় সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এ কারণে দিন দিন সরিষা চাষে ঝুঁকছে কৃষকগণ। এ বছর সরিষার ফলনও হয়েছে বা¤পার। সরিষা বাংলাদেশের প্রধান ভোজ্য তেল ফসল। সরিষার বীজে প্রায় ৪০-৪৪ শতাংশ তেল থাকে। সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। সরিষার খৈলেও প্রায় ৪০ শতাংশ আমিষ থাকে। সরিষার খৈল গরু ও মহিষের পুষ্টিকর খাবার। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এসব কারণে সরিষার চাষের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, রবিশস্য হিসেবে সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে সরিষা বীজ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চাষকৃত সরিষার বেশির ভাগেই দানা ও ফুল এসেছে। শুধু রংপুর নয়, পুরো অঞ্চলের পাঁচ জেলায় সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তবে শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা বেশি দিন স্থায়ী হলে সরিষার ফলনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

Exit mobile version