রংপুর বিভাগে প্রাথমিক স্তরে ৯২ দশমিক ৮৭ ভাগ বই বিতরণ

রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: বছরের প্রথম দিনে দেশের অন্যান্য জেলার ন্যাঢয় বই উৎসবে মেতেছিল রংপুর বিভাগ। নতুন বইয়ের গন্ধে আনন্দে উচ্ছ্বসিত ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে জানুয়ারি মাস শেষ হলেও এখনো চাহিদা অনুযায়ী রংপুর বিভাগে প্রাথমিক স্তরের সব বই পাওয়া যায়নি। বই সংকটের কারণে বিভাগের আট জেলার মধ্যে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় বই বিতরণের শতভাগ লক্ষ্য এখনও পূরণ হয়নি। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগীয় উপ পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানা যায়, বিভাগের আট জেলার মধ্যে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলায় শতভাগ বই বিতরণ করা হয়েছে। বাকি পাঁচ জেলায় ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগ বই দেওয়া হয়েছে। শতভাগ লক্ষ্য পূরণে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার রামনগর এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, অনেকের ছেলেমেয়ে এখনো বইয়ের পুরো সেট হাতে পায়নি। এ কারণে শিক্ষকগণ শ্রেণিকক্ষে যা পড়াচ্ছে তা বাসায় পড়তে পারছেন না। এ সমস্যা শুধু রামনগরের শিক্ষার্থীদেরই নয়, জেলার বিভিন্ন উপজেলাতেও শতভাগ বই বিতরণ না হওয়ায় পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখনো সব বই পায়নি। এতে করে চরাঞ্চল বেষ্টিত এ উপজেলার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ সচেতন অভিভাবকদের। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের হাতে শতভাগ বই তুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। একই উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর উদনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবলু মিয়া বলেন, শিক্ষা অফিসে বইয়ের চাহিদার কথা জানিয়েছি। এখনো পর্যাপ্ত সব বই পায়নি। ফলে নতুন বই সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। সব বই না পাওয়ায় কিছু কিছু ছেলেমেয়ে ঠিকমতো ক্লাস করছে না। গাইবান্ধার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ বলেন, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব বই ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের মাত্র দু’টি করে বই দেওয়া সম্ভব হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, বই পেতে কিছুটা বিলম্ব হলেও দ্রুত সবার হাতে সব বই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। কেউ কেউ সব বই হাতে না পেলেও বিশেষ ব্যবস্থায় পড়াশোনা অব্যাহত রয়েছে। কাউকে কোন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। গত ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চাহিদার ৮০ ভাগ বই গাইবান্ধায় এসেছে। ইতোমধ্যে এসব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০ ভাগ বই এলেই সবার হাতে দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। বিভাগীয় উপ পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রাথমিকের মোট পাঠ্যবইয়ের চাহিদার সংখ্যা ১ কোটি ২৭ লক্ষ ৪৪ হাজার ৫০৬, অর্থাৎ ২৯ লক্ষ ৪৩ হাজার ৮৬২ সেট বই। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রংপুরে শতভাগ, ঠাকুরগাঁওয়ে ৯০ ভাগ, পঞ্চগড়ে শতভাগ, দিনাজপুরে ৯৫ ভাগ, নীলফামারীতে ৯১ ভাগ, লালমনিরহাটে শতভাগ, কুড়িগ্রামে ৮৭ ভাগ এবং গাইবান্ধায় ৮০ ভাগ বই বিতরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগীয় উপ পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রাক-প্রাথমিক হতে প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স¤পূর্ণ বিনা মূল্যে সরকারের উপহারের বই শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের শুরুতেই তুলে দিয়েছি। ইতোমধ্যে বিভাগের তিনটি জেলায় শতভাগ বই বিতরণ স¤পূর্ণ হয়েছে। বাকি জেলাগুলোতেও দ্রুত শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে। এখন পর্যন্ত পুরো বিভাগে ৯২ দশমিক ৮৭ ভাগ বই বিতরণ করা হয়েছে।

Exit mobile version