লন্ডনের পর এবার নিউ ইয়র্কে হামলার শিকার বিএনপি নেতা জুম খোকন


ইমা এলিস নিউ ইয়র্ক:
মাত্রাতিরিক্ত কমিটি বাণিজ্যের ফলে লন্ডনের পর এবার নিউ ইয়র্কে গণ ধোলাইয়ের শিকার হলেন বিএনপির কেন্দ্রিয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ওরফে জুম খোকন। সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর (নিউ ইয়র্ক সময়) রাত সাড়ে ৮/৯টার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিউ ইয়র্কে জেএফকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে যায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতকর্মীরা। আগের দিন রোববার সন্ধ্যায় তিনি লন্ডন থেকে ছুটে আসেন নিউ ইয়র্কে। এসেই তিনি তার পছন্দের লোকজনকে লেলিয়ে দিয়ে বিএনপির একটি প্রস্ততি সভায় হামলার চেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুতি সভা ভুন্ডুল করেন।
নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় রোববার সন্ধায় জ্যাকসন হাইটসের কাবাব কিং রেস্তোরাঁয় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির আহবানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিউ ইয়র্কে আগমনে একটি স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুতি সভা চলছিল। সভার শেষ পর্যায়ে বিএনপির কেন্দ্রিয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ওরফে জুম খোকনের নির্দেশনা পেয়ে অতিপয় বিএনপি নেতাকর্মী অতর্কিতভাবে সভাস্থলে ঢুকে পরে বাক বিতন্ডা শুরু করেন। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। উক্ত প্রস্তুতি সভার সমন্বয়ক ছিলেন যথাক্রমে-শরাফত হোসেন বাবু, জাকির এইচ চৌধুরী, জসিম ভুইয়া, মোতাহার হোসেন, আব্দুস সবুর, খলকু রহমান, মিজান (যুবদল), আলহাজ শহিদুল ইসলাম শিকদার, সৈয়দ গওসু্‌ল, মোশারফ হোসেন সবুজ, নাসিম আহমেদ, সাইফুল খান হারুন ও পারভেজ সাজ্জাদ।
সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর (নিউ ইয়র্ক সময়) রাত সাড়ে ৮/৯টার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিউ ইয়র্কে জেএফকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে যায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতকর্মীরা। বিএনপির কেন্দ্রিয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ওরফে জুম খোকন তার পছন্দের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনিও
নিউ ইয়র্কে জেএফকে বিমানবন্দরে পৌঁছান। দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভুত ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তার অপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে জেএফকে বিমানবন্দরের পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করেন। তার ওপর হামলার কারণ হিসেবে অব্যাহত কমিটি বাণিজ্যের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন বিএনপির জেষ্ঠ্য নেতারা।
গত রোববার সন্ধ্যায় তিনি লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে পৌঁছালে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছ থেকে চেয়ে চেয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন। এ সময়ও তিনি অনেক নেতাকর্মীর অপর ক্ষুব্ধ হয়ে অকথ্য ভাষা প্রয়োগ করেছেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২৬ জুলাই লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে নিজের দল বিএনপির নেতাকর্মীদের হাতে তিনি হামালার শিকার হন। ঐদিন আলতাব আলী পার্কে কোটাবিরোধী আন্দোলনে নিহত ছাত্রজনতার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠানে গিয়ে জুম খোকন ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণে ব্যস্ত হয়ে উঠেন। তিনি ক্যামেরার সামনে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় অব্যাহত পোজ ও ফটো সেশন নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এর বিএনপির নেতাকর্মীসহ উপস্থিত প্রবাসীরা হতবাক হয়ে যান। কেউই এ ব্যাপারটিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না। এ সময় যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রভাবশালী নেতা শরফরাজ শরফু প্রতিবাদ জানান। তিনি জুম খোকনকে তার ফটো সেশন বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু জুম খোকন ফটো সেশনে অনড় থাকলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। শরফু তখন তার দিকে তেড়ে যান।
জানাজায় উপস্থিত লোকজন দুপক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করলে জুম খোকন শরফরাজ শরফুকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এসময় উত্তেজিত ছাত্রজনতা জুম খোকনকে মারধর করে তার পরনের টাই খুলে ফেলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে যুক্তরাজ্য যুবদলের সভাপতি রহিম উদ্দিনের সহযোগিতায় ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান জুম খোকন ও তার সঙ্গী।
উল্লেখ্য, বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন ওরফে জুম খোকনের অনৈতিক কর্মকান্ডে ধ্বংসের পথে বহির্বিশ্ব বিএনপির রাজনীতি। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের আরপিও আইন অমান্য করে বিভিন্ন দেশে দলীয় গঠনতন্ত্র বহির্ভুত অবৈধভাবে বিএনপির কমিটি গঠন এবং কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ‘টেবিলের নিচে’ কমিটি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই জুম খোকন। একই সঙ্গে ফুলে উঠছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রবাসে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের বিএনপি নেতাকর্মীরাও। কোভিড-১৯ এর সময়কালে যে জুম মিটিং চালু করা হয়েছিল তিনি এখনও তা অব্যাহত রেখেছেন বলে বহির্বিশ্বের বিএনপির নেতাকর্মীরা তার নাম দিয়েছেন জুম খোকন।
দেশে এবং বিদেশে বিএনপির কর্মপন্থা সক্রিয় করার লক্ষ্যে লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছোটখাটো সকল কমিটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বিভিন্ন সময়ে কয়েকজন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি কমিটি গঠনের জন্য। তাঁরা সশরীরে চেষ্টা করে অল্পতেই হার মেনে যান অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের কমিটিগুলো ঢেলে সাজাতে ব্যর্থ হন। এদের মধ্যে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. এহসানুল হক মিলন, মাহিদুর রহমান, ব্যারিস্টার আবু সায়েম উল্লেখযোগ্য। এভাবে কমিটি বিহীন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সময় কেটেছে অনেকগুলি বছর।
রাজনৈতিক কাজ করতে হলে সুশৃঙ্খল কমিটির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন যে কোন ভাবে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি দেয়া হলে সবাই তা মেনে নেবেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন অখ্যাত এক বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন ওরফে জুম খোকন। তিনি তখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বুঝিয়ে নানা কৌশলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি কমিটি গঠনের দায়িত্বভার বাগিয়ে নেন।
Exit mobile version