তারুণ্য ও যৌবনের অক্লান্ত পরিশ্রমে অর্জিত সব রোজকার সঞ্চয় হচ্ছে বার্ধক্যে শখ পূরণ হবে বলে? তবেই হয়েছে। ওষুধপত্র খাওয়ার শখ ভালোভাবেই পূরণ হবে। বয়স পঞ্চাশ পেরুতেই ঠিক ভাতের মতোই নিয়ম করে বড়ি খেতে হবে। শরীর চলবে না। উচ্চরক্তচাপ, বহুমূত্র, হার্টে কিংবা কিডনিতে সমস্যা, হাঁটু ও কোমড়ে ব্যথা- এসবের একটাও শরীরকে ছাড়বে না। শরীরে ব্যাধি মনকে বিষিয়ে রাখবে। কাজেই যৌবনে অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো বার্ধক্যে পূরণ করবেন বলে বকেয়া রেখে দিলে, বার্ধক্য সে ইচ্ছাগুলোকে সাথে নিয়ে কবরের দিকে হাঁটা দেবে। তখন একবারও অতীতের প্রতিশ্রুতি মনে রাখবে না।
যা আয় করেন তার একভাগ দিয়ে কষ্টেসৃষ্টে জীবন কাটিয়েভাবেন, অনেক জমলে তখন দেশ বিদেশে ঘুরবেন? তখন মন ঘুরতে চাইলেও শরীর ঘুরতে দিবে না। যদি শরীরও রাজি হয় তবে প্রোথিত শেকড়বাকড় ছেড়ে কোথাও গিয়ে দু-দিন থাকতে পারবেন না। বয়স্ক মস্তিষ্কের হিসাবকিতাব কিন্তু ভিন্ন রকমের হয়! শখ বয়সের সাথে সম্পর্কিত। তরুণের শখ তরুণ বয়সেই পূরণ করতে হয়। যৌবনের শখ যদি সাথে করে বৃদ্ধ বয়সের দিকে নিয়ে যান তবে বৃদ্ধকালের ইচ্ছাগুলো অপূর্ণই থাকবে। একটা ভালো পোশাক, নতুন জায়গা দেখা- ব্যস্ততা এড়িয়ে, সামর্থ্য বাড়িয়ে এখনই কিনে নিন/দেখে নিন।
এখন কষ্ট করে সব সঞ্চয় করে যাচ্ছেন মানেই ইচ্ছাগুলোর বিরুদ্ধে জুলুম করছে। ভালো কিছু খেতে ইচ্ছা করছে অথচ খাচ্ছেন না। ভাবছেন যখন কাড়িকাড়ি টাকা হবে, সম্পদের পাহাড় জমবে তখন সবকিছু খেতে পারবেন? ভুল ভাবছেন। বয়সের চল্লিশের পরেই শরীর সবকিছুমেপে নেয়। তখন আপনার সাধ্যের সম্পূর্ণতা থাকলেও স্বাদ সীমিত হবে। বাড়াবাড়ি করে শরীরে কিছু প্রবেশ করাতে গেলে হাসপাতালে, ডাক্তারের হুজরায় কিংবা ফার্মেসিতেসিরিয়াল দিতে হবে। যখন তোমার জোছনা দেখার বয়স তখন অফিসে ওভার টাইম করো না। শেষ জীবনে আফসোস হবে। অবশ্য মানসিক অসুস্থতা যাদেরকে গিলে খায় তারা সম্পদ দেখিয়ে সুখ মাপে!
জীবনে পয়সা হবে। কিন্তু যে সময় কেটে যায় সেটা আর ফিরে আসবে না। মন চাইছে? একটু ঘেরো। আয়োজন করে উৎসবউদ্যাপন করো। ভবিষ্যৎ ভেবে ভেবে বর্তমানকে কোরবানি করো না। শুধু মনে রেখো, যার না থাকে বর্তমান তার ভবিষ্যতও থাকে না। সম্পদের স্তূপ ফেলে রেখে গেলে অথচ নিজের স্বপ্নগুলো অধরাই থেকে গেলো- কী লাভ? অভাবের মধ্যেও নিজের শখ-আহ্লাদ বলতে একটা-কিছু আছে সেটা ভুলে যেও না। সম্পদের লোভ মোহ, অতিরিক্ত সঞ্চয়ের ইচ্ছা হচ্ছে সামাজিক ব্যাধি। এতে যারে একবার পেয়ে বসে সে জীবনের সৌন্দর্য হারায়। শোভা বঞ্চিত হয়। অনেককিছুই করতে হবে- এই তামাশায় যাদের জীবন আটকে যায় তাদের অবসর বলে কিছুই থাকে না। তারা চাঁদের সৌন্দর্য বোঝে না। সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দের মানে জানে না।
পাহাড় দেখুন, সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে দেখুন পৃথিবী। ঝর্ণার কাছে গান না শুনলে এখনো অনেক জীবনের অনেক কিছুই পাওয়া বাকি। যে পারফিউমটার স্নিগ্ধ সুবাস শরীরের নিতে ইচ্ছা করছে সেটা মেখে নিন। যে সিনেমা দেখতে ইচ্ছা করছে সেটা দেখে নিন। যে বইটা পড়তে ইচ্ছা করছে সেটা কিনে পড়ে নিন। জীবনে দুই পয়সা কম রোজকার হোক, সঞ্চয়ের অঙ্কে শূন্য একটা কম থাকুক তবুও ইচ্ছাপূরণের তালিকা লম্বা হোক। মানুষ বহুদিনবাঁচে না। বার্ধক্যে মানুষের নিয়ন্ত্রণ মনের কাছে থাকে না। তখন ওষুধ-প্রেসক্রিপশনই ভরসা। কাজেই সুস্থতা ও সবলতার সময়ে জীবনের রঙ মেখে নিন। এই একটা জীবন দ্বিতীয়বার আসবে না। অথচ কামাইয়ের সুযোগ অসংখ্যবার আসে। জীবনে আপনিই হেসে নিন। জীবন আপনাকে নিয়ে যাতে না হাসে!
রাজুআহমেদ, প্রাবন্ধিক।
Raju69alive@gmail.com