শিক্ষক কর্মচারিদের ফান্ডে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের টাকা

শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ১০০ টাকা আদায় হচ্ছে শিক্ষক কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ফান্ডের জন্য। চলতি বছর থেকেই ভর্তি ফির সাথে আদায় করা হবে এই টাকা। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে সার্কুলারও জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ অনেকটা বাধ্য করেই শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের নিকট থেকে আদায় করা হচ্ছে এই অর্থ। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র জানায়, অবসরপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলের জন্য বেসরকারি স্কুলে ভর্তির সময় প্রতিজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০ টাকা করে আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ টাকা আদায় করে তা প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমা রাখতে বলা হয়েছে বেসরকারি স্কুলগুলোর প্রধানদের। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের কল্যাণ ও অবসর সুবিধার টাকা জোগানের ভার শিক্ষার্থীদের কাঁধে দেয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে।

সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সব প্রতিষ্ঠান প্রধানকে এ নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে।মাউশির মাধ্যমিক শাখার সহকারী পরিচালক দূর্গা রানী সিকদার স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে,  বেসরকারি স্কুল, স্কুল এন্ড কলেজে (মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তর) শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালায় অবসরপ্র্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলের জন্য ভর্তির সময়ে শিক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট হিসাব খাতে জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলের জন্য ভর্তির সময়ে শিক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা গ্রহণ করে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের তহবিলে বা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখবেন।

এদিকে বেসরকারি স্কুলে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি ফি নিয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে মফস্বল এলাকায় পাঁচশ টাকা, উপজেলা এলাকায় এক হাজার টাকা, জেলা সদর এলাকায় দুই হাজার এবং ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি হবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত স্কুল শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং ননএমপিও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা এবং ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা নিতে পারবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। একই প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক ক্লাস থেকে পরবর্তী ক্লাসে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতি বছর সেশন চার্জ নেয়া যাবে। তবে পুনঃভর্তির ফি নেয়া যাবে না। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলের জন্য ভর্তির সময়ে শিক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা নিয়ে সংশ্লিষ্ট হিসাব খাতে জমা দিতে হবে।

অভিভাবকদের অভিযোগ গত দুই বছরে করোনার কষাঘাতে অনেক পরিবারই এখন অর্থাভাবে সন্তানদের লেখাপড়া করাতে হিমসিম খাচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন করে প্রতি শিক্ষার্থীর নিকট থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ১০০ টাকা আদায় করা হলে এটা অনেক পরিবারের জন্যই অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ণ ফি ছাড়া আরো কয়েকটি খাতে যে হারে টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এটাও অনেক শিক্ষার্থী বা তাদের পরিবারের জন্য যোগান দেয়া কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই এই অতিরক্তি অর্থ আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোক চাপ প্রয়োগ না করে বরং তা প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

অন্যদিকে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভর্তির ফি বাবদ সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা যাবে না, করলে সরকার এমপিও বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর ৫৪০টি সরকারি স্কুলে ভর্তির লটারির ফল প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৯৯ হাজার ২৯০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর গত ১৩ ডিসেম্বর বেসরকারি ২ হাজার ৮৫২টি স্কুলে ভর্তির লটারির ফল প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১ লাখ ৯১ হাজার ৪৯৭ জন ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ডিজিটাল লটারিতে অংশ নিয়ে সরকারি স্কুলে ভর্তির অপেক্ষমান তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন আরও প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী। আর বেসরকারি স্কুলগুলোতে আবেদন থাকা সাপেক্ষে ভর্তিচ্ছুরা অপেক্ষমান তালিকায় স্থান পেয়েছেন।

Exit mobile version